ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের দুর্ভোগ: ‘খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে গন্তব্যে যাব?’

Oct 12, 2025 - 21:00
ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের দুর্ভোগ: ‘খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে গন্তব্যে যাব?’

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহনশ্রমিক ও এনসিপি নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচির জেরে রবিবার সকাল থেকে ময়মনসিংহের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীরা।

রবিবার সকালে ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই থেকে ঢাকাগামী নির্মাণশ্রমিক রঞ্জু মিয়া মাসকান্দা বাস টার্মিনালে এসে দেখেন, কোনো বাসই ছেড়ে যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “যানবাহনের মালিক–শ্রমিকেরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুক, কিন্তু বাস বন্ধ করে যাত্রীদের কেন কষ্ট দিচ্ছে? এখন খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে ঢাকায় যাব?”

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এনসিপির জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানকে ইউনাইটেড পরিবহনের শ্রমিকের হাতে লাঞ্ছিত করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই অচলাবস্থা শুরু হয়। ঘটনার প্রতিবাদে এনসিপির নেতা–কর্মীরা মাসকান্দা টার্মিনালে অবস্থান নেন। পরদিন শনিবার শ্রমিকরাও পাল্টা বিক্ষোভে নামেন এবং দুপুর থেকে ময়মনসিংহের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।

শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেন উভয় পক্ষ। ইউনাইটেড পরিবহনের ১৬টি গাড়ি বন্ধ রাখার আশ্বাসে এনসিপি নেতা–কর্মীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউনাইটেডের ৭০টি ও শৌখিন এক্সপ্রেসের ১৫০টি বাস বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। ফলে রবিবার সকাল থেকে পুরো ময়মনসিংহে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

মাসকান্দা, দীঘারকান্দা বাইপাস ও পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা কেউ অটোরিকশা, কেউ পিকআপ ভ্যানে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবায়েত জাহান বলেন, “আজ থেকে ক্লাস শুরু। সকালে টার্মিনালে এসে দেখি কোনো বাসই চলছে না। তাই ফিরে যাচ্ছি।”

একইভাবে তারাকান্দা থেকে ছোট ভাইকে টঙ্গীর মাদ্রাসায় নিতে আসা জুনায়েদুল ইসলাম বলেন, “ভেঙে ভেঙে এসেছি, এখান থেকেও বাস যাচ্ছে না। খুব টেনশন লাগছে।”

এদিকে শ্রমিকরা ইউনাইটেড পরিবহনের কাউন্টারে ব্যানার টানিয়ে অনশন ধর্মঘটে বসেছেন। ব্যানারে লেখা—“পরিবহনশ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার দাবিতে অনশন ধর্মঘট। মিথ্যা অপবাদে শ্রমিকের পেটে লাথি মারা মানব না।”

এনসিপির জেলা সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, “আমরা শুধু ফ্যাসিস্ট শামীমের ১৬টি গাড়ি বন্ধের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু শ্রমিকরা কেন সব গাড়ি বন্ধ রেখেছেন, তা বোধগম্য নয়। মনে হচ্ছে এখানে একটি ষড়যন্ত্র চলছে।”

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বাস চলাচল বন্ধ রাখা মালিকদের সিদ্ধান্ত। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে।”

অন্যদিকে শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে “ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহীদ ও আহত সেল” এবং “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” সংবাদ সম্মেলনে আজ রাত ৮টার মধ্যে বাস চলাচল স্বাভাবিক করার সময়সীমা বেঁধে দেয়।
সেলের সমন্বয়কারী আল নূর মোহাম্মদ আয়াস লিখিত বক্তব্যে বলেন, “সিন্ডিকেটের কারণে বাস চলাচলে অনিয়ম ও দুর্ভোগ বেড়েছে। আজ রাতের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

এ সময় সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়— সিন্ডিকেট ভেঙে উন্নত পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক প্রভাবে গাড়ি বন্ধ না করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা, শ্রমিকদের চিকিৎসা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, সিন্ডিকেটে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা, সরকারি ছুটিতে অতিরিক্ত ভাড়া নিষিদ্ধ করা ও রাত ৮টার মধ্যে ঢাকাগামী বাস চালু করা।

জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ বলেন, “চলমান সংকট নিরসনে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি দ্রুত বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।”

 

বার্তাবাজার/এমএইচ