নতুন বোমারু বিমান নিয়ে চীনের বড় বাজি

Oct 12, 2025 - 22:00
নতুন বোমারু বিমান নিয়ে চীনের বড় বাজি

চীন এখন নতুন প্রজন্মের বোমারু বিমান নিয়ে বড় বাজি ধরেছে—যদি এসব প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে তা দেশটির সামরিক ও কৌশলগত অবস্থাকে ভালোই বদলে দিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিম-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব কমাতে সরাসরি চাপ সৃষ্টি করবে।

বর্তমান চীনা বোমারু বিমান বহর—বিশেষ করে রাশিয়ার পুরনো টু–১৬ অনুকরণে তৈরি এইচ–৬—দৈহিক ক্ষমতা ও স্টেলথ বৈশিষ্ট্যে যুগোপযোগী নয়; এটা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেও উপলব্ধি করেন। তাই চীন এক সঙ্গে দুই ধরনের নতুন বোমারু বিমানের উন্নয়ন শুরু করেছে: কৌশলগত ও দীর্ঘপাল্লার স্টেলথ বোমার এইচ–২০ এবং আঞ্চলিক/মধ্যপাল্লার স্টেলথ বোমার জেএইচ–এক্সএক্স।

এইচ–২০ সম্পর্কে সংগ্রহকৃত তথ্য সীমিত ও গোপনীয় হলেও স্যাটেলাইট ইমেজ ও বিশ্লেষকদের অনুমান থেকে ধারণা করা হচ্ছে এটি ফ্লাইং-উইং স্টেলথ ডিজাইনের বিমান—যা নর্থরপের বি–২ স্পিরিট বা ভবিষ্যতের বি–২১ রেইডারের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। প্রচলিত ধারনায় এইচ–২০’র সম্ভাব্য সর্বোচ্চ যুদ্ধপরিসর প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার; ফলে চীনের মুল ভূখণ্ড থেকে উড্ডয়ন করে গুয়াম, অষ্ট্রেলিয়া বা এমনকি হাওয়াই অঞ্চলে আঘাত হানার সক্ষমতা উদ্ভাসিত হবে—যদি তা বাস্তবে পৌঁছায়।

এছাড়া ধারণা করা হচ্ছে বিমানটি পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরণের অস্ত্র বহন করতে পারবে; অর্থাৎ এটিই হতে পারে চীনের প্রথম কৌশলগত বোমার, যা স্থল, সমুদ্র ও আকাশে পারমাণবিক প্রতিশোধ/মর্যাদা প্রদর্শনে ব্যবহৃত হবে।

অপরদিকে শেনইয়াং এয়ারক্রাফট করপোরেশন তত্ত্বাবধানে উন্নয়নাধীন জেএইচ–এক্সএক্সকে চীন মধ্যপাল্লার, দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল স্টেলথ বোমার হিসেবে দেখতে চায়। সম্ভাব্য পাল্লা হিসেবে এর অনুমান ২ হাজার থেকে ৩,৫০০ কিলোমিটার, আর বহনক্ষমতা ১০–২০ টন পর্যন্ত হতে পারে—প্যারামিটারভিত্তিকভাবে এটি এইচ–৬ ও এইচ–২০-এর মধ্যে একটি সেতুবন্ধনকারী প্ল্যাটফর্ম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জেএইচ–এক্সএক্স আঞ্চলিক হুমকি হিসেবে দ্রুত, নির্ভুল আঘাত ও নানামুখী প্রতিরোধ মিশনে কার্যকর হবে; বিশেষত ইন্দো–প্রশান্ত অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটি ও জাহাজকে ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জ দিতে সক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কর্তৃপক্ষগুলোর পরিকল্পনা সফল হলে চীনের অ্যান্টি-অ্যাক্সেস/এরিয়া-ডিনায়েল (A2/AD) ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে—মেরিন, বিমান ও স্থলভিত্তিক প্রতিরক্ষা উপাদান মিলিয়ে চীন দূরপ্রান্তীয় এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ও বাধা গড়তে সক্ষম হবে। এর ফলে সামরিক ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নৌ-উপস্থিতি ও প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র এসব প্রকল্পের দিকে গভীর নজর রাখছে। দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণ, বড় নৌবহর সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ—এসবের সঙ্গে মিলিয়ে উন্নত বোমারুবিমান বাহিনী হলে এশিয়ার কৌশলগত মানচিত্রে আমেরিকার প্রভাব সীমিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে বলে বিশ্বস্ত বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তবে প্রকৃতপক্ষে এইচ–২০ ও জেএইচ–এক্সএক্স–এর কার্যকর ক্ষমতা, প্রামাণিক অপারেশনাল ব্যাপ্তি ও টেকনিক্যাল বিশদ এখনো বহুাংশে অনুমানভিত্তিক। প্রকল্পগুলোর গোপনীয়তা, টেস্টিং ও ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ রয়েছে—বিশেষত স্টেলথ প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার প্রতিরোধ ও দীর্ঘদূরত্বের লজিস্টিক সাপোর্টের ক্ষেত্রে। চীন যদি স্যাটিসফ্যাক্টরি টেস্টিং, ভেরিফায়েবল অপারেশনাল ডেমো এবং ব্যাপক উৎপাদন নিশ্চিত করতে না পারে, তবুও বাস্তব সামরিক প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।

সংক্ষেপে—চীন নতুন বোমারু বিমানগুলোর ওপর বড় বাজি ধরেছে; সফল বাস্তবায়ন বিশ্বমানচিত্রে সামরিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যে চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম। তবে প্রকৃত সামরিক ও কৌশলগত প্রভাব মূল্যায়নে বাস্তব-জানচ, টেস্ট ও অপারেশনাল সক্ষমতার তথ্য অপরিহার্য—এগুলি এখনো আংশিকভাবে অনুমানভিত্তিক।

The post নতুন বোমারু বিমান নিয়ে চীনের বড় বাজি appeared first on Citizens Voice.