চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) কর্তৃক উপজেলা পর্যায়ে পিজি নন পিজি ফার্মারদের (PG Non-PG Farmer) প্রশিক্ষণ যেনতেন ভাবে সমাপ্ত করে বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় অর্ধেক টাকা পকেটস্থ করেছে বল অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা নীলিমা আক্তার হ্যাপির বিরুদ্ধে।
দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা কৃষিবিদ নীলিমা আক্তার হ্যাপি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পর (এলডিডিপি)এই প্রশিক্ষন গত ১২ ফেব্রুয়ারী সমাপ্ত করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক দামুড়হুদা উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার পিজি ও নন পিজি ফার্মারদের (PG Non-PG Farmer) মধ্যে নির্বাচিত ৪০০ জনকে ১০ ভাগে বিভক্ত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় অবস্থিত উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ৩য় তলায় এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
৪০ জনের এই গ্রুপ সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সাথে পরামর্শ করে করার কথা থাকলেও চেয়ারম্যানদের সাথে কোন পরামর্শ না করে নিজেদের ইচ্ছা মত ভূয়া নাম ঠিকানার ৪০ মহিলা ও পুরুষদের নিয়ে গ্রুপ গঠন করেছে।
সরেজমিনে গত ৭ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২ টায় প্রশিক্ষণস্থল উপজেলার দর্শনায় অবস্থিত উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ৩য় তলায় গিয়ে দেখা যায়, ৩৭ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ (নারীদের বহন করা অটোরিক্সার চালক) প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রশিক্ষনার্থীরা কোন ইউনিয়নের জিজ্ঞাসা করলে জানানো হয় নাটুদহ ইউনিয়নের। দুপুর সাড়ে ১২ টার সময় প্রশিক্ষনার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা সকালে নাস্তা পেয়েছে কি না। উত্তরে সকলে জনায় তারা কোন নাস্তা পায়নি। এমনকি ওই সময় পর্যন্ত এসব প্রশিক্ষনার্থীদেরকে দেওয়া হয়নি কোন সরঞ্জাম। কথাবার্তার এক ফাঁকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা
কৃষিবিদ নীলিমা আক্তার হ্যাপি তার অফিস সহায়কদেরকে বলেন এখনই সবাইকে প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি দিয়ে দাও। তখন দ্রুত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার সরঞ্জামাদি প্রশিক্ষনার্থীদেরকে দেওয়া হয়। আর নাস্তা ও খাবার দেওয়া হয় ১দিনে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার।
দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, এই প্রশিক্ষণের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমার কাছথেকে নামের কোন তালিকাও নেওয়া হয়নি।
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া প্রশিক্ষনার্থীদের প্রত্যককে ২দিনের জন্য বরাদ্দ ছিল, যাতায়াত বাবদ ১ হাজার টাকা, সকালে নাস্তা, দুপুরের খাওয়া, বিকেলের নাস্তা বাবদ ১ হাজার টাকা ও প্রশিক্ষন সরঞ্জাম ৭’শ টাকা, প্রশিক্ষকদের ২ হাজার টাকা ও সহায়কদেরকে ১ হাজার টাকা। সর্বমোট ২০ দিনে উল্লেখিত এসব খাতে বরাদ্দকৃত ১৩ লাখ টাকা ব্যায় করতে হবে।
কিন্তু দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা কৃষিবিদ নীলিমা আক্তার হ্যাপি তা না করিয়ে যেনতেন ভাবে অধিকাংশ গ্রুপকে ২ দিনের স্থলে নাম মাত্র ১ দিন ৩ ঘন্টা (সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত) করে প্রশিক্ষণ করিয়ে ২ দিনের উপস্থিতি শীটে স্বাক্ষর নেন। প্রশিক্ষন সরঞ্জামাদি দেওয়া হয়নি একাধিক গ্রুপকে।
ফলে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রকৃত উদ্দেশ্য একদিকে যেমন সফল হয়নি, অন্যদিকে বরাকৃত টাকা হয়েছে পকেটস্থ। এভাবেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পর (এলডিডিপি) এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা গত ১২ ফেব্রুয়ারী সমাপ্ত করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ নীলিমা আক্তার হ্যাপি।
এছাড়া তিনি প্রতিদিন অফিসে আসেন বেলা ১১/১২ টায়। অফিসের মোবাইল ভেটেনারি ক্লিনিক গাড়িটি তিনি খামারীদের কাছে ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার ও বাড়ি যাওয়া আসা কাজে ব্যবহার করেন। এখানে সব অনিয়মই যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে।
দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা কৃষিবিদ নীলিমা আক্তার হ্যাপি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়ম মেনে আমি খুব ভাল প্রশিক্ষণ করিয়েছি। তার পরও জানিনা কেন কি কারণে কে বা কারা সংবাদিকদের মিথ্যে তথ্য দিয়ে আমাকে বিব্রত করছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ মোঃ মশিউর রহমান জানান, উপজেলা পর্যায়ে পিজি নন পিজি ফার্মারদের(PG Non-PG Farmer) প্রশিক্ষণের বরাদ্দ সরাসরি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে। সে কারণে এই প্রশিক্ষণ বা কর্মশালার বিষয়ে আমি খোজ খবর রাখি না। তবে কোন অভিযোগ উঠলে তা কঠোর ভাবে তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে দূর্ণিতীর প্রমান পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানাগেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রাণিস¤পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ভবন-২, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকা গত ১৪/১২/২০২৩ ইং তারিখে ৩৩.০১.০০০০.৮২৮.২৫.১০২.২৩.৪৫৩৮ নং স্মারক পত্রে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ৪০০ জন পিজি নন পিজি ফার্মারদের (PG Non-PG Farmer) প্রশিক্ষনের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।
ওই পত্রে জানানো হয়, প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) কর্তৃক উপজেলা পর্যায়ে ৪০০ জন (PG Non-PG Farmer) দের ১০ টি ব্যাচের মাধ্যমে ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন (Business Plan Preparation) বিষয়ক দুইদিনের (০২) প্রশিক্ষনের ব্যয় নির্বাহের জন্য এলডিডিপি প্রকল্প অফিস হতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরিচালিত হিসাব বরাবরে বাজেট বরাদ্দ পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যার্থে প্রেরণ করা হয়। বাজেট প্রাপ্তির পর আবশ্যিক ভাবে Training Calender Upload করতে হবে।
সে মোতাবেক, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ উপজেলার পিজি গ্রুপের জন্য প্রেরিত বরাদ্দের ব্যয় এতদপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত খাতওয়ারি বাজেট বিবরণী ও ব্যয় নির্বাহের গাইডলাইন অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বরাদ্দকৃত অর্থ পিপিআর ২০০৮ ও আর্থিক বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যয় পূবর্ক ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪খ্রি. এর মধ্যে এলডিডিপি কার্যালয়ে SOE প্রেরণের নিমিত্ত এতদপত্রের সঙ্গে নির্ধারিত ছক প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, উপরোল্লিখিত অর্থ ব্যয় পূর্বক নথিভুক্ত করতে হবে, যা পরবর্তীতে FAPAD নিরীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় অডিট পরিচালিত হবে।