দেশের আর্থিক খাতের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দিয়েছে। কমিটি বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনে দুর্নীতি, লুণ্ঠন এবং ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল রোববার তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিটি। এরপর প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন, ‘আমাদের গরিব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এ লুটপাট চালিয়েছে।’
লুটপাটের বিষয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাও এ লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল।’
ড. ইউনূস এ যুগান্তকারী কাজের জন্য শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি, তা এ রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে।’
পাচারের টাকা ফেরাতে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে ১০ ডিসেম্বর থেকে এফবিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার বৈঠক করবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম।
পাচার করা টাকা ফেরত আনা সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘টাকা যেভাবে হোক ফেরত আনার চেষ্টা করব। সেই অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে অনেকগুলো কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাদের সঙ্গে অনেক ধরনের বৈঠক হচ্ছে, কথা হবে। আমাদের পুরো ফোকাস থাকবে টাকাটা কীভাবে ফেরত আনা যায়।’ তবে টাকা তো চুরি করে নিয়ে গেছে, সেটা আগে সন্ধান করতে হবে বলেও জানান শফিকুল আলম।
প্রতিবেদন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের উন্নয়নের গল্পের ময়নাতদন্ত বলে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘ময়নাতদন্তে ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে লুটপাট চলেছে। লুটপাটতন্ত্র জারি হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের অনেকই এটার বৈধতা দিয়েছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে।’
লুটপাটকারী খুব বেশি নয় জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা, অলিগার্ক কিছু ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁদের যোগসাজশে এ টাকা পাচার করা হয়েছে, যার বৈধতা অনেক সাংবাদিক দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন শফিকুল আলম।