চুয়াডাঙ্গা ০৮:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আরও কাছাকাছি বাংলাদেশ-পাকিস্তান : নিরাপত্তা উদ্বেগে ভারত

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার প্রক্রিয়া সম্প্রতি আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ। মূলত পাকিস্তানি নাগরিক বা পাকিস্তানি বংশদ্ভূত যেকোনও দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে ঢাকা।

 

এতে এখন থেকে সহজেই বাংলাদেশি ভিসা পাবেন পাকিস্তানিরা। ঢাকার নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির এই পদক্ষেপে আরও কাছাকাছি এসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। আর এতে করে নিরাপত্তা উদ্বেগে পড়েছে ভারত।

 

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমেই আরও দৃঢ় হতে যাওয়া সম্পর্ক এবং উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান নৈকট্যের মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসার জন্য আবেদন করার আগে নিরাপত্তা ছাড়পত্র পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে নিয়েছে। ২০১৯ সালে এই ছাড়পত্র নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি চালু করা হয়েছিল।

 

এনডিটিভি বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এই সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগ (এসএসডি) এই শর্ত তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার একদিন আগে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা নীতিতে এই পরিবর্তন আসে।

 

বিশেষ করে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকার করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পর এই পদক্ষেপ বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এনডিটিভির দাবি, খালেদা জিয়ার দল ঐতিহাসিকভাবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের বিপরীতে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছে, আর হানার দল বছরের পর বছর ধরে নিজেদের ভারতপন্থি অবস্থান ধরে রেখেছে। পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশের নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও (ভারতে) অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

 

বাংলাদেশের রাজনীতির বিশেষজ্ঞ এবং অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মোবাশ্বর হাসান দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন, “এটি পরিবর্তন নয় বরং বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যমূলক আচরণের ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা অবিরামভাবে বলছেন, তারা ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চান যদিও ভারত এর প্রতিদান দিচ্ছে না। তারা শুধু হাসিনাকে আশ্রয় দেয়নি, (ভারতীয়) রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের বিষয়ে ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জ্বালাময়ী মন্তব্য দিচ্ছেন।”

 

তিনি আরও বলেন, “মনে হচ্ছে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসন ইঙ্গিত দিচ্ছে— তারা ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে আর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি দেখবে না। এটাও বুঝতে হবে যে— ভারতের প্রতিবেশী (প্রথম) নীতিও লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।” এনডিটিভির দাবি, পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স তুলে দেওয়া ভারতের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ এই অঞ্চলে চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করতে পারে এমন উদ্বেগও বাড়ছে।

 

সুত্র লিংক

Powered by WooCommerce

আরও কাছাকাছি বাংলাদেশ-পাকিস্তান : নিরাপত্তা উদ্বেগে ভারত

আপডেটঃ ০৪:০৫:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার প্রক্রিয়া সম্প্রতি আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ। মূলত পাকিস্তানি নাগরিক বা পাকিস্তানি বংশদ্ভূত যেকোনও দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে ঢাকা।

 

এতে এখন থেকে সহজেই বাংলাদেশি ভিসা পাবেন পাকিস্তানিরা। ঢাকার নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির এই পদক্ষেপে আরও কাছাকাছি এসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। আর এতে করে নিরাপত্তা উদ্বেগে পড়েছে ভারত।

 

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমেই আরও দৃঢ় হতে যাওয়া সম্পর্ক এবং উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান নৈকট্যের মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসার জন্য আবেদন করার আগে নিরাপত্তা ছাড়পত্র পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে নিয়েছে। ২০১৯ সালে এই ছাড়পত্র নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি চালু করা হয়েছিল।

 

এনডিটিভি বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এই সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগ (এসএসডি) এই শর্ত তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার একদিন আগে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা নীতিতে এই পরিবর্তন আসে।

 

বিশেষ করে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকার করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পর এই পদক্ষেপ বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এনডিটিভির দাবি, খালেদা জিয়ার দল ঐতিহাসিকভাবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের বিপরীতে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছে, আর হানার দল বছরের পর বছর ধরে নিজেদের ভারতপন্থি অবস্থান ধরে রেখেছে। পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশের নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও (ভারতে) অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

 

বাংলাদেশের রাজনীতির বিশেষজ্ঞ এবং অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মোবাশ্বর হাসান দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন, “এটি পরিবর্তন নয় বরং বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যমূলক আচরণের ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা অবিরামভাবে বলছেন, তারা ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চান যদিও ভারত এর প্রতিদান দিচ্ছে না। তারা শুধু হাসিনাকে আশ্রয় দেয়নি, (ভারতীয়) রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের বিষয়ে ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জ্বালাময়ী মন্তব্য দিচ্ছেন।”

 

তিনি আরও বলেন, “মনে হচ্ছে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসন ইঙ্গিত দিচ্ছে— তারা ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে আর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি দেখবে না। এটাও বুঝতে হবে যে— ভারতের প্রতিবেশী (প্রথম) নীতিও লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।” এনডিটিভির দাবি, পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স তুলে দেওয়া ভারতের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ এই অঞ্চলে চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করতে পারে এমন উদ্বেগও বাড়ছে।

 

সুত্র লিংক