ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ বদির দোসর আওয়ামীলীগ নেতা কাউন্সিলর এনামুল হক গুপ্তচবৃত্তি করতে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি পদ বাগিয়ে নিলেন। বিগত সময়ে তার হাতে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মী নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন খুদ দলের দায়িত্বশীলরা। তিনি গত ১৬ বছর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার প্রমান মেলেছে। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দ্বায়ে দলটির জেলা ও পৌর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এনামুল হককে সাবেক বহিস্কৃত সিনিয়র সহ সভাপতির স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন টেকনাফ পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। টেকনাফ পৌরসভার দুই নাম্বার ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর হাফেজ এনামুল হক। তিনি সম্পর্কে বদির বেয়াই ও টেকনাফ স্থল বন্দরের বদির প্রধান ক্যাশিয়ার ওমর ফারুকের সহোদর।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ২০০৮ সালের আগে এনামুল হক টেকনাফ পৌর ওয়ার্ড যুবদলের কমিটিতে যুক্ত ছিলেন। ক্ষমতার পালাবদল হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর কৌশলে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করে। যদিও দলীয় নেতা কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে দলীয় কোন কমিটিতে স্থান করে নিতে পারেননি। দ্বিতীয় মেয়াদে আব্দুর রহমান বদি সাংসদ নির্বাচিত হলে বদির অনুসারী হিসেবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। সেই লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের প্রতিটি মিছিল, সভা সমাবেশে লোকজন নিয়ে শো ডাউন করতেন। এভাবে বদির নেক নজরে এসে বদির আশির্বাদে ২০২১ সালে ভোট ডাকাতি করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী শাহীন বদির পক্ষে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোধগার করে বিভিন্ন সভায় সমাবেশে ভোট প্রার্থনা করেন। এই সংক্রান্ত বেশ কিছু ভিডিও এবং স্থির চিত্র প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এমনকি দলীয় পরিচয়ে বদির সুপারিশে তিনি একটি অস্ত্রের অনুমোদনও হাতিয়েনেন।
জেলা বিএনপির একটি সূত্রের দাবী, ৫ জুলাই হাসিনা সরকারের পতনের পর এনামুলের বড় ভাই বদির ক্যাশিয়ার ওমর ফারুক বেশ কয়েকটি মামলার আসামী হয়েছেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এনামুলকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় করে ফারুক নিরাপদে থাকার জন্য মোটা অংকের মিশনে নেমেছেন। এতে ফারুক সফল হয়েছেন। টেকনাফ পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, ২০২৩ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অন্দোলনরত শ্রমিক দলের নেতা কর্মীদের উপর হামলা চালায় এনামুল হক। সর্বশেষ গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এই শ্রমিক দল নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফ উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের কয়েকজন নেতাদের দাবী, আগামী নির্বাচনে উখিয়া টেকনাফে শাহজাহান চৌধুরী সংসদ নির্বাচন করবেন। সাবেক সাংসদ বদি বিএনপির নির্বাচনী কৌশল জানতে গুপ্তচর হিসেবে কায়দা করে এনামুলকে পৌর বিএনপির সহ সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে দিয়েছেন। দিন শেষে শাহজাহান চৌধুরীই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে আশংকা করেন এসব নেতা-কর্মীরা। টেকনাফ পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বদির সাথে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেওয়ার কারনে পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুল ইসলামকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা বিএনপি। একই অভিযোগে অভিযুক্ত এনামুল কিভাবে একই পদে স্থলাভিষিক্ত হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এটিকে এনামুলের অর্থের কারনে ত্যাগীদের সাথে দ্বৈত নীতি বলেও মনে করেন দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী।
এনামুল হকের কাছে আওয়ামী রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, বাধ্য হয়ে তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে ছিলেন বদে দাবী করেন। তবে কি কারনে বাধ্য হয়েছিলেন তা পরিষ্কার করেননি। বিষয়টি কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি ‘বার্তা সংযোগ’কে বলেন, এনামুল দ্বীর্ঘ দিন ধরে দলের সাথে আছেন। অভিযোগ থাকতে পারে, এসব কোন ব্যাপার না। সে হয়তো লোকাল পলেটিক্সের গ্রুপিং এর শিকার। তবে তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগের প্রমান থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।