আগামী বছরে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়তে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। সংস্থাটির নভেম্বরের তেলের বাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী বছর প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেলেরও বেশি তেলের উদ্বৃত্ত উত্তোলন থাকতে পারে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে আইইএ এ সুখবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আইইএ বলেছে, আগামী কয়েক বছর ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে উত্তোলন বাড়বে। ফলে আগামী বছর চাহিদার তুলনায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ বেশি হতে পারে।
আইইএর ভাষ্যমতে, চীনের নিম্নমুখী চাহিদার কারণে আগামী বছর চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ১০ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তেলের দাম আরও কমবে।
একই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান। ব্যাংকটি বলেছে, আগামী বছরে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসতে পারে।
বিশ্ব বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনে থাকে চীন। কিন্তু চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কমছে। এ ছাড়া সে দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ছে। কমছে জ্বালানি তেলের চাহিদা।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ মিলে গঠিত ওপেক প্লাস জানিয়েছে, তারা গত দুই বছর ধরে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই ধারা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চায়। বাজার–বিশ্লেষকেরা জানান, আগামী বছর অতিরিক্ত সরবরাহের সম্ভাবনা ওপেক প্লাসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গায়ানা, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর নেতৃত্বে ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোতে তেলের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইইএ এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ওপেকভুক্ত নয়, এমন দেশগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন ১৫ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পথে রয়েছে। এটি সংস্থার বিশ্বব্যাপী তেল ব্যবহার বৃদ্ধির পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি।
সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদক গোষ্ঠী ওপেক প্লাস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরবরাহের ওপর চাপ কমানোর জন্য তাদের ২২ লাখ ব্যারেল দৈনিক উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা আগামী জানুয়ারি মাস থেকে উৎপাদন কোটা বাড়ানোর কাজ শুরু করতে পারে।
আইইএ আরও জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ওপেক প্লাস উৎপাদন হ্রাস অব্যাহত রাখলেও, আগামী বছর বৈশ্বিক সরবরাহ চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি উদ্বৃত্ত থাকবে। তবে কোভিড মহামারি, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার কারণে বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, একটি শিথিল সরবরাহ পরিস্থিতি, সেই বাজারে প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ