জাপান থেকে আমদানির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাড় না হওয়ায় অবশেষে নিলামে উঠেছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৪৭টি গাড়ি। রিকন্ডিশন (ব্যবহৃত) নামিদামি গাড়িগুলো বিক্রি করছে মোংলা কাস্টম হাউস।
আগামী ৫ জুন এই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ২৩, ২৪ ও ২৫ মে নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য দরপত্র (শিডিউল) বিক্রি করা হয়। আগামী ৩১ মে ঢাকা দক্ষিণ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, খুলনা এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও মোংলা কাস্টম হাউসে রক্ষিত দরপত্র বাক্সে ১০ শতাংশ জামানতসহ দরপত্র জমা দিতে হবে নিলামে
অংশগ্রহণকারীদের। প্রতি মাসে এই নিলাম প্রক্রিয়ার নিয়ম থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে এবার চার মাস পর নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় মোংলা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। এবারও গাড়ির নিলামে অনলাইন থেকে বিড করা যাবে।
মোংলা কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা ছবি রানী দত্ত জানান, ৩০ মে পর্যন্ত মোংলা বন্দরে গিয়ে নিলামে তোলা গাড়ি দেখার সুযোগ আছে। গাড়িগুলোর মধ্যে আছে– নিশান, পাজেরো, এক্সিও হাইব্রিড, পিয়ার্স হাইব্রিড, টয়োটা ভিজ, প্রোবক্স, অ্যাকুয়া হাইব্রিড, টয়োটা হাইব্রিড, করোলা ফিল্টার, হাইয়েস, মাইক্রো, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৪৭টি গাড়ি। এর মধ্যে ১৯৯৩, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ২০০৬, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৩, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১ ও ২০২২ মডেলের গাড়ি আছে। ৩১ মে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিলামের প্রস্তাবিত মূল্য নেওয়া হবে।
মোংলা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, গত চার মাস মোংলা বন্দরে গাড়ির নিলাম বন্ধ ছিল। গত বছরের নভেম্বরে নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। সর্বশেষ কাস্টমসের নিয়োগকৃত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ‘আল আমিন ট্রেডার্স’। এর পর নিলামকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজতে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়।
তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কম মূল্য কমিশন দাখিল করে। এর পর আবার ২৮ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান কমিশন দাখিল করে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ‘কে এম করপোরেশন’ কোম্পানি নিয়োগ পায়। তারাই আগামী ৫ জুন মোংলা বন্দরে ১৪৭টি গাড়ি নিলামের আয়োজন করেছে।
এদিকে এই নিলাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি হাবিবুল্লা ডন বলেন, ‘একদিকে বৈশ্বিক মন্দা চলছে, সরকারি সংস্থা ও ব্যাংকগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও এখন গাড়ি কিনছে না। এর মধ্যে আমাদের আরেকটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে কাস্টমস নিলাম প্রক্রিয়া। আমরা এই সময়ে গাড়ি নিলামে না তুলতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করেছি।’
এ বিষয়ে মোংলা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, মোংলা কাস্টমসের মোট রাজস্ব আয়ের ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা গাড়ির শুল্ক থেকে। দীর্ঘদিন আমদানি করা গাড়ি বন্দরে পড়ে থাকলে অন্যান্য পণ্য রাখায় সমস্যা তৈরি হয়। তাই গাড়িগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে।
এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মো. কুদরত আলী বলেন, জাপান থেকে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয় ২০০৯ সালের ৩ জুন। প্রথম চালানে এ বন্দর দিয়ে ২৫৫টি রিকন্ডিশন (ব্যবহৃত) গাড়ি আমদানি করে হকস্-বে অটোমোবাইল কোম্পানি। এ পর্যন্ত মোংলা বন্দর দিয়ে ২২ হাজার ৪৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। যা মোট আমদানি গাড়ির ৬০ শতাংশ।