চুয়াডাঙ্গা ০৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় ফুলশয্যার রাতে নববধূ হলো বিধবা

মেহেদী মাখা হাত, লাল শাড়ি পরে স্বামীর লাশের খাটিয়া, বাকরুদ্ধ হয়ে চাপা কষ্টের ছাপ নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বসে আছেন স্বামী হারানো সদ্য বিধবা নববধু।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মৃত শুকুর আলীর ছেলে লিটন আলী নিজ বাড়িতে মাকে নিয়ে একাই বসবাস করতেন । পেশায়  ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ।

 

ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখ তার প্রথম স্ত্রী র মৃত্যু হয়। সাংসারিক জীবনে তার লামিয়া খাতুন নামের একটি ৯ বছর বয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে।

 

লিটন আলী মাস্টার গতপরশু শুক্রবার দিনগত রাতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ঝিনাইদহ জেলার গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি ঘোপপাড়া গ্রামের সোলায়মান হকের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের সাথে।

 

বাসর রাতেই প্রথম স্ত্রীর রেখে যাওয়া সোনার গয়না রুলি দ্বিতীয় স্ত্রীকে পরাতে গিয়ে হঠাৎ করেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। রুলি পরানো আর হলো না। হঠাৎ করে অসুস্থ হলে মাটিতে পড়ে তার দাঁত ভেঙে যায়। সাথে সাথে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। হাসপাতালে যাবার প্রস্তুতি নেয়ার সময় হাসপাতালেই লিটন আলী মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়েন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

 

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মাতম বইতে শুরু করে। হতভাগ্য নববধূর নতুন সংসার গড়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। গতাকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো নববধূর হাতে মেহেদীর রঙ লাল শাড়ী পরে অপলক দৃষ্টিতে বাকরুদ্ধ স্বামীর নিথর দেহাবশেষের দিকে তাকিয়ে আছে। অঝরো ঝরছে চোখের অশ্রু। হৃদয় বিদারক শেষবারের মত মৃতের মুখখানি একবার দেখতে আসা ও গ্রামের লোকজন ভীড় করে। চাপা কষ্ট আর অশ্রুসিক্ত নয়নে ফিরছেন সবাই। চারপাশে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

 

বাচ্চা আর নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সংসারের স্বপ্ন যেনো অপূর্ণ রয়ে গেলো। একের পর এক প্রকৃতির নিয়মের কাছে কতটা অসহায় পরিবারটি সেটা ভেবেই লোকজনের মধ্যে একটিই শব্দ উচ্চারণ হচ্ছে হায়! হায়! কি হয়ে গেলো। সকলের প্রিয় মিষ্টভাষী, সদালাপী মানুষটির এ প্রস্থান যেনো মনের মধ্যে দাগ কেটে গেলো। ফুলশয্যার রাতেই স্ত্রী বিধবা হলো।

 

বাসর রাতেই স্ত্রী বিধবা! খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফনকাজ করা হয়।

সুত্রঃ দৈনিক মাথাভাঙ্গা

 

জনপ্রিয় সংবাদ

জীবননগরে অধিকমূল্যে সার বিক্রি করায় ব্যবসায়ীকে জরিমানা

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

চুয়াডাঙ্গায় ফুলশয্যার রাতে নববধূ হলো বিধবা

প্রকাশ : ০৯:২৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩

মেহেদী মাখা হাত, লাল শাড়ি পরে স্বামীর লাশের খাটিয়া, বাকরুদ্ধ হয়ে চাপা কষ্টের ছাপ নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বসে আছেন স্বামী হারানো সদ্য বিধবা নববধু।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মৃত শুকুর আলীর ছেলে লিটন আলী নিজ বাড়িতে মাকে নিয়ে একাই বসবাস করতেন । পেশায়  ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ।

 

ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখ তার প্রথম স্ত্রী র মৃত্যু হয়। সাংসারিক জীবনে তার লামিয়া খাতুন নামের একটি ৯ বছর বয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে।

 

লিটন আলী মাস্টার গতপরশু শুক্রবার দিনগত রাতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ঝিনাইদহ জেলার গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি ঘোপপাড়া গ্রামের সোলায়মান হকের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের সাথে।

 

বাসর রাতেই প্রথম স্ত্রীর রেখে যাওয়া সোনার গয়না রুলি দ্বিতীয় স্ত্রীকে পরাতে গিয়ে হঠাৎ করেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। রুলি পরানো আর হলো না। হঠাৎ করে অসুস্থ হলে মাটিতে পড়ে তার দাঁত ভেঙে যায়। সাথে সাথে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। হাসপাতালে যাবার প্রস্তুতি নেয়ার সময় হাসপাতালেই লিটন আলী মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়েন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

 

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মাতম বইতে শুরু করে। হতভাগ্য নববধূর নতুন সংসার গড়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। গতাকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো নববধূর হাতে মেহেদীর রঙ লাল শাড়ী পরে অপলক দৃষ্টিতে বাকরুদ্ধ স্বামীর নিথর দেহাবশেষের দিকে তাকিয়ে আছে। অঝরো ঝরছে চোখের অশ্রু। হৃদয় বিদারক শেষবারের মত মৃতের মুখখানি একবার দেখতে আসা ও গ্রামের লোকজন ভীড় করে। চাপা কষ্ট আর অশ্রুসিক্ত নয়নে ফিরছেন সবাই। চারপাশে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

 

বাচ্চা আর নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সংসারের স্বপ্ন যেনো অপূর্ণ রয়ে গেলো। একের পর এক প্রকৃতির নিয়মের কাছে কতটা অসহায় পরিবারটি সেটা ভেবেই লোকজনের মধ্যে একটিই শব্দ উচ্চারণ হচ্ছে হায়! হায়! কি হয়ে গেলো। সকলের প্রিয় মিষ্টভাষী, সদালাপী মানুষটির এ প্রস্থান যেনো মনের মধ্যে দাগ কেটে গেলো। ফুলশয্যার রাতেই স্ত্রী বিধবা হলো।

 

বাসর রাতেই স্ত্রী বিধবা! খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফনকাজ করা হয়।

সুত্রঃ দৈনিক মাথাভাঙ্গা