রমজানে ইফতারীর অন্যতম অনুসঙ্গ বেগুনি। আর এটি ছাড়া ইফতার যেন বেমানান। তাই সবজি ব্যবসায়িরাও এ মাসটিকে বেশ আশীর্বাদ মনে করে। তবে বেগুন ব্যবসায়িদের জন্য আশীর্বাদ হলেও রমজানে বেগুন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে ক্রেতা সাধারনের কাছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ব্যবসায়িরা বেগুনের দাম হাফ সেঞ্চুরি থেকে সেঞ্চুরিতে হাঁকিয়েছে।
অন্যান্য সবজির দাম ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বাড়লেও বেগুনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। ব্যবসায়িরা বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল তাই দাম বেড়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের দাবী ক্রেতা সাধারণের। আর প্রশাসন বলছে, বেশি দামে কেউ পন্য বিক্রি করলে নেয়া হবে আইনী ব্যবস্থা।
রমজানের আগের দিন গত বৃহষ্পতিবার গাংনীর হেমায়েতপুর, জোড়পুকুর ও মড়কা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বেগুন ৪৫ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, শসা ৫৫ টাকা, লেবু ২৫ টাকা হালি, কলা এক হালি ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা আর ঢেড়স ছিল প্রতিকেজি মাত্র ৬৫ টাকা। অথচ একদিনের ব্যবধানে আকাশ চুম্বী দাম। এতে বাজারের আগুণে পুড়ছে ক্রেতাদের পকেট।
গাংনী তহবাজার ও ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা কেন্দ্র বামন্দী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারী পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। একদিনের ব্যবধানে কোনটা দ্বিগুণ দাম বেড়েছে। আবার কোনটা বেড়েছে অর্ধেক। তবে বেগুণ ও শসা খিরার দামে ক্রেতারা দিশেহারা। বেগুন ১০০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, শসা ৭৫ টাকা কেজি দরে, লেবু এক হালি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, পাকা কলা এক হালি ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ঢেড়স ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারের চিত্রও পাল্টেছে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে। বৃহষ্পতিবার গাংনীর কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে খাসির গোস্ত ৯০০ টাকা, গরু ৭০০টাকা, ব্রয়লার ২৪০ টাকা, সোনালী ৩৪০ টাকা, দেশি ৬০০ টাকা। আজ শুক্রবার সকালে দেখা গেছে, খাসি ৯৫০ টাকা, গরু ৮০০ টাকা, ব্রয়লার ২৮০ টাকা, সোনালী ৪০০ টাকা আর দেশি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা কেজি।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মুল্যও বেড়েছে। ছোলার দাম ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য জিনিষের মুল্য রয়েছে অপরিবর্তীত।
মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও বাজারে ক্রেতা সাধারণের সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রতি রমজানে ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করে। এবার নিত্য পণ্যের দাম কিছুটা স্থীতিশীল হলেও সবজি ব্যবসায়িদের পোয়া বারো। তারা এক সপ্তাহ আগে থেকেই কৃষকদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা দিয়ে বেগুন শসা খিরাসহ অন্যান্য সবজি কিনে রেখেছে। এখন সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত দাম হাঁকছেন। এ সময় বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।
গাংনী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মকলেচুর রহমান জানান, রমজান মাসে অন্যান্যবার দাম বাড়লেও এবার নিত্যপণ্যের বাজার স্থীতিশীল। ছোলার দামটা ১০/১৫ টাকা বাড়তি। তবে সবজির দামটা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে যা ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
স্থানীয় সবজি ব্যবসায়িরা বলছেন, প্রতিবারই রমজান মাস আসলে ইফতারী পণ্যের সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে বেগুন শসা খিরা এগুলো যেন সোনার হরিণ। চাষিরা ক্ষেত থেকে তুলে এনে আড়ৎ কিংবা ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করলে খুচরা বাজারে দাম কম থাকে। কিন্তু এ সময়টাতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়িরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে চড়া দামে এসব সবজি কিনে নেয়ায় স্থানীয়ভাবেও দাম বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে বেগুন বিক্রি হতো মাত্র ২০/২৫ টাকা কেজি। কিন্ত্র এখন আর আগের মতো বেগুন পাওয়া যাচ্ছে না তাই দামও আগুণের মতো।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দীকা সেতু জানান, রমজান শুরুর আগে বাজার মনিটরিং শুরু করা হয়েছে। ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলা হয়েছে। বেশি দামে পন্য বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে সতর্ক করা হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।