শিলিগুড়িতে নুমালিগড় রিফাইনারির বিপণন টার্মিনাল থেকে বিপিসির পার্বতীপুর ডিপোতে আসবে আমদানি করা তেল; উদ্বোধন আজ ১৮ মার্চ।
ভারত থেকে তেল আনতে পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষে এখন সরবরাহ শুরুর অপেক্ষা; আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে হচ্ছে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম।
সব প্রস্তুতি শেষে আজ বুধবার উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর হয়ে বাংলাদেশে আসা দেশের প্রথম আন্তঃদেশীয় এ পাইপলাইন দিয়ে পরীক্ষামূলক তেল সঞ্চালন শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন নামে পরিচিত ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পাইপলাইনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের (এনআরএল) বিপণন টার্মিনাল থেকে বিপিসির পার্বতীপুর ডিপোতে আমদানি করা তেল আসবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান জানান, প্রথম দিকে ৭/৮ দিন দৈনিক কয়েক ঘণ্টা ধরে চলবে পরীক্ষামূলক এ সরবরাহ। আগামী ১৮ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এ পাইপলাইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় নির্মিত এ পাইপলাইনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ডিপোকে সংযুক্ত করা হয়েছে। আসাম রাজ্যে অবস্থিত ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নামালিগড় রিফাইনারি থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তেল আসে শিলিগুড়িতে।
এতদিন ভারতের ওই রিফাইনারি থেকে রেলপথে তেল আসছে। খরচ সাশ্রয়ে পরে পাইপলাইনে তেল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিপিসির অধীন মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চে এ পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কোভিড মহামারীর কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে কাজ এক বছর পিছিয়ে যায়।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বিপিসির ওই ডিপো থেকে ওই অঞ্চলের ১৬টি জেলার জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা হয়। এতদিন চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে রেল ওয়াগন ও সড়ক পথে এখানে তেল সরবরাহ করা হত। পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে ট্রেনের ওয়াগনে করে নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে বছরে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টন তেল আনা হত।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখন পাইপলাইন নির্মাণ হওয়ার পর তেল পরিবহনের খরচ সাশ্রয় হবে, সময় বাঁচবে এবং আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে তেল আনা যাবে।
পার্বতীপুরে পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ হলেও এখন বেশ কয়েকটি সংরক্ষণাগার বা রিজার্ভার তৈরি বাকি আছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, “পার্বতীপুরে যে ট্যাঙ্কপাম্প আছে তা আপাতত যথেষ্ট। ওখানে আরও কিছু ট্যাঙ্কপাম্প হচ্ছে যেগুলোর কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে। তখন আমরা দুইটাতেই একসঙ্গে কানেকশন দিয়ে দেব।”
নতুন এ পাইপলাইন করার ফলে খরচ সাশ্রয় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, খরচ যে কমবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এতদিন তেল পরিবহন, লোড আনলোড করতে গিয়ে অনেক খরচ পড়ে যেত। এখন এসব ঝামেলা একেবারেই থাকবে না।
“সরল কথায় বলা যায় পরিবহন বাবদ খরচ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাবে। তেল আসার পরিমাণ বাড়লে খরচ কমে আসবে। আরও ২/৪ মাস পর বিষয়টি হয়ত আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে যে, খরচ আসলে কতটা কমলো।”
২০২২ সালে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল মিলিয়ে ৬০ লাখ টন জ্বালানির প্রয়োজন হয়েছিল, এর মধ্যে শুধু ডিজেলই প্রয়োজন হয়েছে ৪৮ লাখ টন। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় প্রয়োজন হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ টন জ্বালানির।
নতুন পাইপলাইন হয়ে গেলে ভারত থেকে আরও বেশি পরিমাণ তেল আমদানির চেষ্টা করা হবে বলে জানান বিপিসির চেয়াম্যান।
২০১৭ সালের এপ্রিলে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি সই হয়। একই বছরের অক্টোবরে এনআরএল বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানির জন্য বিপিসির সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদী আরেকটি চুক্তি করে।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাইপলাইনের কাজ উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।