‘দিল্লি না ঢাকা’ স্লোগানে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। সোমবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বিক্ষোভে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন নিপাত যাক’, গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি’, জ্বালো রে জালো, আগুন জ্বালো’, প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায় বিক্ষোভকারীদের।
এর আগে একই স্থানে সমাবেশ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সমাবেশে পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন আইনজীবীকে হত্যা করেছে ইসকন। সেখানে ভারত দুঃখ প্রকাশ করতে পারত। কিন্তু তা না করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিষয়ে দেশটি হস্তক্ষেপ করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে বাংলাদেশে সংকট তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমরা বলতে চাই, ষড়যন্ত্র যতই করা হোক না কেন আমরা বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করব না।’
জানা যায়, সোমবার (২ ডিসেম্বর) আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী একটি সমিতির সদস্যরা।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ হামলা চালান তারা।
এদিন আগরতলার সার্কিট হাউস অবস্থিত গান্ধী মূর্তির সামনে প্রথমে বিক্ষোভ সমাবেশ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়। এক পর্যায়ে সমিতির সদস্যরা সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে এবং সেই পতাকা ছিঁড়ে ফেলে। পরে ভবনের সামনে থাকা সাইনবোর্ড ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ভারতীয় পুলিশ বাহিনী এবং টিএসআর। তাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বিষয়ে ওই সমিতির কার্যকরী সদস্য বি কে রায় জানান, সহকারী হাইকমিশনের বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে, তারা দেখেননি এবং তারা ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও অফিসের ভেতরে কাউকে দেখতে পাননি।
ভারতের দুঃখ প্রকাশ
এদিকে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে ঘটনাটি দুঃখজনক বলে জানিয়েছে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশে হাইকমিশন ও ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার করছে সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ভাঙার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এমন অবস্থায় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বাংলাদেশের কড়া প্রতিক্রিয়া
ভারতের আগরতলার ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের একটি বৃহৎ দলের সহিংস বিক্ষোভ ও হামলার জন্য বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কূটনৈতিক মিশনগুলোকে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা আয়োজক সরকারের দায়িত্ব। তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনাটি মোকাবেলা করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।