চুয়াডাঙ্গা ১১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তার ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামীকে যাবজ্জীবন

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আলোচিত আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় একমাত্র আসামীকে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে আদালত তাঁকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানা করেছেন। সেই সঙ্গে ওই নারী চিকিৎসকের পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত।

 

আজ সোমবার কলকাতার শিয়ালদহের জেলা দায়রা জজ আদালত এই আদেশ দিয়েছেন। গত শনিবার এই আদালত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন। ঘটনার ৫ মাস ১১দিন পর আজ বেলা পৌনে ৩টার দিকে এই শাস্তি ঘোষণা করা হয়।

 

গত শনিবার এই আদালতের বিচারক উভয় পক্ষের সওয়াল–জবাবের পর ভারতের ন্যায় সংহিতার তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন সঞ্জয় রায়কে। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের চার্জশিটে একমাত্র অপরাধী ছিলেন।

আজ এই রায় দেন কলকাতার শিয়ালদহের জেলা দায়রা জজ আদালতের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস।

আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

অন্যদিকে সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী রাজদীপ হালদার, আসামির ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে চরম শাস্তি না দেওয়ার দাবি করেন।

 

আজ শাস্তি ঘোষণার আগে আদালতে সঞ্জয় রায়কে তোলা হলে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আবার বলে ওঠেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আদৌ জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

যদিও বিচারক জানিয়ে দেন, এখন আর সেই কথা বলার সুযোগ নেই তাঁর। এখন তিনি শুধু শাস্তি নিয়ে কথা বলতে পারেন।

 

এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নিহত চিকিৎসকের মা–বাবা। আগামী ১৭ মার্চ সেই আবেদনের শুনানি হবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। নির্যাতিতার মা–বাবা আজ আবার বলেছেন, শুধু একজন এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন না। সিবিআইকে অন্য অপরাধীদেরও খুঁজে বের করে দিতে হবে। যদিও সঞ্জয় রায় আগে থেকে দাবি করেছিলেন যে তিনি ওই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

এদিকে এই রায় ঘোষণা নিয়ে আজ শিয়ালদহ আদালতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে, সে জন্য পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করে। আদালতে ঢোকার সব কটি পথ আটকে দেওয়া হয়। আদালত চত্বরে নিয়োজিত ছিল প্রচুর পুলিশ।

 

যদিও রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকেরা অন্য দোষীদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডের তথ্য–প্রমাণ লোপাটের প্রতিবাদে ও দোষীদের বিরুদ্ধে সিবিআইর অতিরিক্ত চার্জশিট প্রদানের দাবিতে আন্দোলন জারি রেখেছে চিকিৎসকদের একাংশ। কলকাতার ‘ওয়েস্টবেঙ্গল জয়েন্ট প্লাটফর্ম অব ডক্টরস’–এর ডাকে চলমান এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন এসব চিকিৎসক।

 

গত বছরের ৯ আগস্ট আরজি করের ওই চিকিৎসক রাতে হাসপাতালে ডিউটি করার সময় ধর্ষণের শিকার ও নৃশংসভাবে খুন হন। এই খুনের অপরাধে পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে ১০ আগস্ট। ১৩ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। ১৪ আগস্ট কলকাতায় এই ঘটনার প্রতিবাদে পালিত হয় রাত জাগা কর্মসূচি। সেদিনই রাতে আরজি কর হাসপাতালে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় একশ্রেণির দুষ্কৃতকারী। ২০ আগস্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলার শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। ২ সেপ্টেম্বর আর্থিক দুর্নীতি ও তথ্য–প্রমাণ লোপাটের দায়ে গ্রেপ্তার হন আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ রায় এবং টালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ মন্ডল। ৫ অক্টোবর ন্যায়বিচারের দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকেরা আমরণ অনশন শুরু করেন। ২১ অক্টোবর সেই অনশন প্রত্যাহার করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে।

 

এর আগে ১১ অক্টোবর সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট দেয়। ৪ নভেম্বর সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে শিয়ালদহ আদালত।

 

আজ আদালতের রায় ঘোষণার আগে আরজি কর ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডে খুন হওয়া চিকিৎসকের মা-বাবা সাংবাদিকদের জানান, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করার দাবিতে তাঁদের চলমান আন্দোলন জারি থাকবে। তাঁরা আরও বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড একজন ঘটাতে পারেন না। সিবিআইকে নেপথ্যকারীদের খুঁজে বের করে দিতে হবে। এর পেছনে জড়িত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করার দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে। তবে তাঁরা অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

Powered by WooCommerce

পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তার ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামীকে যাবজ্জীবন

আপডেটঃ ০৫:৩৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আলোচিত আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় একমাত্র আসামীকে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে আদালত তাঁকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানা করেছেন। সেই সঙ্গে ওই নারী চিকিৎসকের পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত।

 

আজ সোমবার কলকাতার শিয়ালদহের জেলা দায়রা জজ আদালত এই আদেশ দিয়েছেন। গত শনিবার এই আদালত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন। ঘটনার ৫ মাস ১১দিন পর আজ বেলা পৌনে ৩টার দিকে এই শাস্তি ঘোষণা করা হয়।

 

গত শনিবার এই আদালতের বিচারক উভয় পক্ষের সওয়াল–জবাবের পর ভারতের ন্যায় সংহিতার তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন সঞ্জয় রায়কে। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের চার্জশিটে একমাত্র অপরাধী ছিলেন।

আজ এই রায় দেন কলকাতার শিয়ালদহের জেলা দায়রা জজ আদালতের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস।

আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

অন্যদিকে সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী রাজদীপ হালদার, আসামির ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে চরম শাস্তি না দেওয়ার দাবি করেন।

 

আজ শাস্তি ঘোষণার আগে আদালতে সঞ্জয় রায়কে তোলা হলে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আবার বলে ওঠেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আদৌ জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

যদিও বিচারক জানিয়ে দেন, এখন আর সেই কথা বলার সুযোগ নেই তাঁর। এখন তিনি শুধু শাস্তি নিয়ে কথা বলতে পারেন।

 

এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নিহত চিকিৎসকের মা–বাবা। আগামী ১৭ মার্চ সেই আবেদনের শুনানি হবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। নির্যাতিতার মা–বাবা আজ আবার বলেছেন, শুধু একজন এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন না। সিবিআইকে অন্য অপরাধীদেরও খুঁজে বের করে দিতে হবে। যদিও সঞ্জয় রায় আগে থেকে দাবি করেছিলেন যে তিনি ওই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

এদিকে এই রায় ঘোষণা নিয়ে আজ শিয়ালদহ আদালতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে, সে জন্য পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করে। আদালতে ঢোকার সব কটি পথ আটকে দেওয়া হয়। আদালত চত্বরে নিয়োজিত ছিল প্রচুর পুলিশ।

 

যদিও রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকেরা অন্য দোষীদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডের তথ্য–প্রমাণ লোপাটের প্রতিবাদে ও দোষীদের বিরুদ্ধে সিবিআইর অতিরিক্ত চার্জশিট প্রদানের দাবিতে আন্দোলন জারি রেখেছে চিকিৎসকদের একাংশ। কলকাতার ‘ওয়েস্টবেঙ্গল জয়েন্ট প্লাটফর্ম অব ডক্টরস’–এর ডাকে চলমান এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন এসব চিকিৎসক।

 

গত বছরের ৯ আগস্ট আরজি করের ওই চিকিৎসক রাতে হাসপাতালে ডিউটি করার সময় ধর্ষণের শিকার ও নৃশংসভাবে খুন হন। এই খুনের অপরাধে পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে ১০ আগস্ট। ১৩ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। ১৪ আগস্ট কলকাতায় এই ঘটনার প্রতিবাদে পালিত হয় রাত জাগা কর্মসূচি। সেদিনই রাতে আরজি কর হাসপাতালে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় একশ্রেণির দুষ্কৃতকারী। ২০ আগস্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলার শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। ২ সেপ্টেম্বর আর্থিক দুর্নীতি ও তথ্য–প্রমাণ লোপাটের দায়ে গ্রেপ্তার হন আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ রায় এবং টালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ মন্ডল। ৫ অক্টোবর ন্যায়বিচারের দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকেরা আমরণ অনশন শুরু করেন। ২১ অক্টোবর সেই অনশন প্রত্যাহার করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে।

 

এর আগে ১১ অক্টোবর সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট দেয়। ৪ নভেম্বর সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে শিয়ালদহ আদালত।

 

আজ আদালতের রায় ঘোষণার আগে আরজি কর ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডে খুন হওয়া চিকিৎসকের মা-বাবা সাংবাদিকদের জানান, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করার দাবিতে তাঁদের চলমান আন্দোলন জারি থাকবে। তাঁরা আরও বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড একজন ঘটাতে পারেন না। সিবিআইকে নেপথ্যকারীদের খুঁজে বের করে দিতে হবে। এর পেছনে জড়িত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করার দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে। তবে তাঁরা অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।