একের পর এক অবিস্মরণীয় সব ছবি বানিয়ে গেছেন বেনেগাল—অঙ্কুর, নিশান্ত, মন্থন, ভূমিকা, মান্দি, কালযুগ, ভারত এক খোঁজ, যাত্রা, সুরাজ কা সাতভান ঘোড়া, মাম্মো, সর্দারি বেগম, ওয়েলকাম টু সাজনপুর। এখন তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক ছবি নিয়ে।
মুম্বাইয়ে পরিবর্তনই একমাত্র চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় নিয়ম।
১৯৭৭ সাল থেকে মুম্বাইয়ের তারদেওয়ে অফিস করেন শ্যাম বেনেগাল। রোজ সকাল ১০টার দিকে অফিসে আসেন তিনি, বেরিয়ে যান সন্ধ্যার খানিক আগে। একমাত্র শুটিংয়ে বা সফরে থাকলেই এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে।
৮৬ বছর বয়সি শ্যাম বেনেগাল বিনয়ী ও স্পষ্টভাষী। তার চলচ্চিত্র ভারতের সমাজ নিয়ে নানাভাবে, নানা অবিস্মরণীয় উপায়ে নিরীক্ষা করে। অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন তিনি, অনেক প্রতিভাবান অভিনেতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের।
একের পর এক অবিস্মরণীয় সব ছবি বানিয়ে গেছেন বেনেগাল—অঙ্কুর, নিশান্ত, মন্থন, ভূমিকা, মান্দি, কালযুগ, ভারত এক খোঁজ, যাত্রা, সুরাজ কা সাতভান ঘোড়া, মাম্মো, সর্দারি বেগম, ওয়েলকাম টু সাজনপুর। এখন তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক ছবি নিয়ে।
শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক ছবি ‘বঙ্গবন্ধু’ লিখেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জাইদি। এটি নির্মিত হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের সরকারের যৌথ প্রযোজনায়। ছবিটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, শেখ মুজিবু রহমানের স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছার চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং তাদের মেয়ে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া।
করোনা মহামারির কারণে বায়োপিকটির নির্মাণকাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। ছবিটির চূড়ান্ত পর্যায়ের শুটিং হবে বাংলাদেশে।
এই ছবি নিজের চলচ্চিত্রজীবন ও দর্শন নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডটইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন শ্যাম বেনেগাল। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ অনূদিত হলো টিবিএসের পাঠকদের জন্য।
প্রশ্ন: আপনার জন্য প্রতিদিন কাজে আসাটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
বেনেগাল: এই শৃঙ্খলাটুকু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে এই অভ্যাস আমার স্বাস্থ্য বেশি ভালো রেখেছে। জীবনে একটা মৌলিক শৃঙ্খলা থাকা দরকার। মানুষ নয়টা-পাঁচটার অফিস করা নিয়ে মজা করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই শৃঙ্খলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাজ শুরু করার সময় আমি আমার টাইমিং প্যাটার্নটা ঠিক রেখেছি। কিছু মানুষ রাতে কাজ করতে পারেন, আমি পারি না। বাড়িতে কাজ নিয়ে যাওয়া আমার পছন্দ না।
আমার কাছে দিন হচ্ছে কাজের সময়। আমার পড়াশোনা, চিত্রনাট্য লেখা, গবেষণা, লোকজনের সঙ্গে দেখা করা—অনেক কাজই এখানে করি।
পড়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার যদি কোনো বিলাসিতা থেকে থাকে, সেটি পড়ার অভ্যাস। হায়দরাবাদের নিজাম কলেজে পড়ার সময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমাকে ৬-৭ হাজার বইয়ের একটা লাইব্রেরি উপহার দিয়েছিল।
প্রশ্ন: প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গুরু দত্ত ছিলেন আপনার কাজিন। ১৯৫০-এর দশকে যখন হায়দরাবাদ থেকে মুম্বাই চলে আসেন, তখন আপনি কি তার সঙ্গে কাজ করেছিলেন?
বেনেগাল: বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়েই আমি বোম্বে চলে আসি। এখানে এসেছিলাম ছবি বানাব বলে। এসে দেখলাম, গুরু দত্তের সঙ্গে কাজ করলে আমি কিছুই শিখতে পারব না। সেকেন্ড, থার্ড বা ফোর্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে চাইনি আমি।
বোম্বে এসে প্রথমে আমি ১৭৫ রুপি বেতন পেতাম। এ টাকায় নিজে বাসা নিয়ে কোথাও থাকার উপায় ছিল না। গুরু দত্তের মায়ের তখন আমার ওপর মায়া হলো। তিনি আমাকে তার সঙ্গে থাকতে বললেন। লিন্টাস বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি ওখানে ছিলাম।
লিন্টাসে আমি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত কাজ করি। অনেক বিজ্ঞাপনচিত্র বানিয়েছি লিন্টাসে। সেটা ছিল আমার শেখার সময়। আলিক পাদামসি ছিলেন চলচ্চিত্র বিভাগের প্রধান। আমি তাকে সাহায্য করতাম। কপিরাইটার হিসেবেও কাজ করতাম।
আলিক থিয়েটারের ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন। এটা আমার জন্য মস্ত সুবিধা ছিল। সৌভাগ্যবশত আলিক তার থিয়েটারের লোকদের সঙ্গেই অনেকটা সময় কাটাতেন। এর ফলে আমি স্বাধীনভাবে বিজ্ঞাপনচিত্র বানাতে পেরেছি। এজন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ। এই কাজ আমাকে বিস্তর অভিজ্ঞতা দিয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ শেখার জন্য আমাকে ফিল্ম স্কুলে যেতে হয়নি।
প্রশ্ন: ‘বঙ্গবন্ধু’ ছবিটি নির্মাণের প্রস্তাব আপনার কাছে এল কীভাবে?
বেনেগাল: আমাকে ছবিটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এটি ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে। ছবিটির অধিকাংশ কাজই শেষ করেছি। অভিনেতারা বাংলাদেশ থেকে বোম্বে এসেছিলেন। বাংলাদেশে একটা শিডিউল বাকি আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সেটা শেষ করা হবে।
প্রশ্ন: এই ছবি থেকে শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে আমরা কী জানতে পারব?
বেনেগাল: ওই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ছাড়া মুজিবের ব্যাপারে আমি খুব বেশি জানতাম না। বিশাল ট্র্যাজেডি ছিল সেটা।
ছবিটি অবশ্যই ভারসাম্য রেখে বানানো হবে, বীরপূজা হবে না। আপনাকে চরিত্রের হৃদয়ে পৌঁছতে হবে। হৃদয় ছাড়া ব্যক্তি আর মানুষ থাকে না।
মুজিবের যাত্রা শুরু আর দশজন রাজনীতিবিদের মতোই। পরে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদী হন। তিনি একজন অসাধারণ ক্যারিশম্যাটিক নেতা ও অবিশ্বাস্য বক্তা ছিলেন। শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পারতেন তিনি।
আমাকে যে ব্যাপারটা আকর্ষণ করেছে, তা হলো মহান জননেতা হওয়ার পাশাপাশি তিনি তার জনগণকেও খুব বেশি ভালোবাসতেন। গ্রিক থিয়েটারের ভাষায় বলতে পারেন, এই ভালোবাসাই ছিল তার ‘ট্র্যাজিক ত্রুটি’।
মানুষকে বড় বেশি বিশ্বাস করতেন বলেই তিনি বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলেন। (জীবননাশের ব্যাপারে) তাকে সময়ে সময়ে সতর্ক করা হয়েছিল। এমনকি মিসেস (ইন্দিরা) গান্ধীও তাকে সতর্ক করেছিলেন।
অন্যদিকে, তিনি সেই অল্প কয়েকজন রাজনীতিকের একজন, যাদের পরিপূর্ণ ও সমন্বিত পারিবারিক জীবন ছিল। এটা খুবই বিরল।
প্রশ্ন: ছবিটির সহ-রচয়িতা শামা জাইদি। তার সঙ্গে আপনার কয়েক দশকের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন।
বেনেগাল: শামা আমার স্ত্রী নীরার সঙ্গে মুসৌরিতে একই স্কুলে পড়ত। আমাদের মধ্যে একটা স্বাভাবিক কাজের সম্পর্ক আছে। শামা যেমন পড়তে ভালোবাসে, ও তেমনি দুর্দান্ত গবেষকও। ও যদিও মূলত লেখক হিসেবে আমার সঙ্গে কাজ করেছে, তবে ‘মন্থন’ ও ‘ভূমিকা’সহ আমার প্রথমদিকের ছবির কস্টিউম ডিজাইনও করেছে।
‘ভারত এক খোঁজ’-এ প্রথম লেখক হিসেবে কাজ করে ও। ওই ছবির সম্পাদনা পরিষদের প্রধানও ছিল শামা। সেই থেকে আমার সঙ্গে কাজ করছে ও।
প্রশ্ন: অনেক ছবিই আপনি ছেড়ে দিয়েছেন। এসবের মধ্যে ছিল ‘কারমেন’-এর ভারতীয় অ্যাডাপ্টেশনও। এমন আর কোনো প্রকল্প আছে?
বেনেগাল: ডজনখানেক আছে। আমার অবশ্য এসব নিয়ে কোনো আফসোস নেই। এখন আমার বয়স হয়েছে। দশ বছর আগে অবশ্য আফসোস হতো।
কারমেনের ভারতীয় সংস্করণের জন্য খানিকটা শুটিং আর গবেষণা করেছিলাম। এ আর রহমানকে দিয়ে সংগীতও রেকর্ড করিয়েছিলাম। অভিনেতা-অভিনেত্রী অবশ্য চূড়ান্ত করিনি। তবে এক পর্যায়ে কারিনা কাপুরকে নেওয়ার আগ্রহ হয়েছিল। ও তখন সবে ক্যারিয়ার শুরু করেছে।
শ্যাম বেনেগাল | ছবি: স্ক্রল ডটইন
“>
শ্যাম বেনেগাল | ছবি: স্ক্রল ডটইন
প্রশ্ন: হিন্দি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? আপনার ছবিতে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত অভিনেতাদের নিয়ে তর্কযোগ্যভাবে একটা বিকল্প তারকা-ব্যবস্থা তৈরি করেছেন আপনি।
বেনেগাল: আমি সবসময় চরিত্রের প্রয়োজন অনুসারে আমার ছবিগুলোতে অভিনেতা-অভিনেত্রী নিয়েছি। আমার প্রথম পছন্দ সবসময়ই অভিনয় জানা মানুষরা, তারকারা নয়। আর তারকারা তারকা বলেই তারকা নয়। বরং ভালো অভিনয় জানেন বলেই তারা তারকা। উদাহরণস্বরূপ, আমি ‘জুবাইদা’য় কারিশমা কাপুরকে নিয়েছিলাম ও তারকা বলে নয়। ওর মধ্যে একজন অভিনেত্রীকে দেখেছি বলে ওকে নিয়েছি।
প্রশ্ন: হিন্দি ছবির তারকা রেখাকে ‘কালযুগ’-এর মতো তারকাবহুল ছবিতে কাজ করতে রাজি করিয়েছিলেন কীভাবে?
বেনেগাল: আমি সবসময়ই রেখাকে নিয়ে ছবি করতে চাইতাম। ও দারুণ প্রতিভাবান। কিন্তু ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকার সময়ও ও কখনও সিরিয়াস ছিল না।
ওর সঙ্গে আমি প্রথম কাজ করি লাক্স সাবানের একটা বিজ্ঞাপনে। তখনই বুঝতে পারি ওর মধ্যে বিশাল সম্ভাবনা আছে।
‘কালযুগে’ রেখার সঙ্গে কাজ শুরু করার পর বুঝতে পারলাম ও কতটা মেধাবী অভিনেতা। কিছু অভিনেতাদের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। বিশেষ করে তেলুগু ও তামিল ছবির অভিনেতাদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য বেশি দেখা যায়—তারা সংলাপ পড়ে না। তারা সেটে এসে বসেন, একজন সহকারী তাদেরকে সংলাপ পড়ে শোনান। সহকারীর কাছ থেকে শুনেই তারা দৃশ্য করেন। রেখা ছিল ওরকম—ফটোগ্রাফিক স্মৃতি ছিল ওর।
কালযুগের ডাবিং করার সময় রেকর্ডিং স্টুডিয়োতে চার-পাঁচ দিন লেগে গিয়েছিল। ওকে (রেখাকে) ডাকলাম ডাবিংয়ের জন্য। আমাকে ও অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছিল। লাঞ্চের আধঘণ্টা আগে স্টুডিয়োতে আসে ও। আমি তো চটে আগুন।
কিন্তু পরের এক ঘণ্টার মধ্যে ও পুরো ডাবিং শেষ করে। ছবিতে বলা সংলাপ ও ‘লিপ-রিড’ করতে পারত। এক পর্যায়ে আমার লেখক বলল, রেখা ভুল শব্দ বলছে। কিন্তু আসল ঘটনা হলো, ওই জায়গায় শুটিংয়ে আমরা একটু সংশোধনী এনেছিলাম। সেটাও ও (রেখা) মনে রেখেছে।
পরবর্তীতে আমি যে ধরনের ছবি বানিয়েছি, ওগুলোর কোনোটাতে রেখার উপযুক্ত চরিত্র ছিল না।
প্রশ্ন: আপনাকে তো ‘প্যারালাল’ বা ‘ইন্ডিয়ান নিউ ওয়েভ’ চলচ্চিত্র নির্মাতা বলা হয়। আপনার কাছে এই তকমাগুলোর অর্থ কী?
বেনেগাল: আমি আমার ধরনের চলচ্চিত্র বানাতে চেয়েছি। চেয়েছি বিনোদনমূলক ছবি যেমন হওয়া উচিত, তেমন ছবি বানাতে। ‘নিউ ওয়েভ সিনেমা’, ‘প্যারালাল সিনেমা’—এসব তকমা মিডিয়ার লোকেরা ব্যবহার করত।
আমি কেবল অনুভব করেছি, সিনেমার একটা নিজস্ব ফর্ম থাকা উচিত। কেবল নাটকীয় অভিনয়কেই চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: তারপরও সমালোচনা হয়েছে যে, আপনার ছবি আনুষ্ঠানিকভাবে যথেষ্ট সাহসী নয়।
বেনেগাল: আমি কোনোকালেই ফর্মালিস্ট ছিলাম না। কখনোই একটা ফর্মের ধারণা নিয়ে আমি কাজ শুরু করিনি। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে, বিষয়বস্তু নিজেই তার ফর্ম তৈরি করবে কিংবা খুঁজে নেবে। আমি কাজ করেছি জীবনের নানা পরিস্থিতি নিয়ে, বিমূর্ততা বা বিমূর্ত ধারণা নিয়ে কাজ করিনি।
আমার অনেক ছবি বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়েছে। আমি ভাগ্যবান, কারণ আমি এমন গল্প বলতে পেরেছি যেগুলোর সঙ্গে দর্শক এক ধরনের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। আদর্শ দর্শক বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না আমার।
কাজেই এসব তকমা অর্থহীন। আমি শ্যাম বেনেগাল, চলচ্চিত্র নির্মাতা। আমার মধ্যে কখনোই কোনো আদর্শিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না—কোনো ছবিতে গানের প্রয়োজন হলে আমি নির্দ্বিধায় গান ব্যবহার করেছি।
প্রশ্ন: আপনি কি আপনার কোনো ছবি বারবার দেখেন? আপনার কোনো ছবি কি কখনও রিমেক করবেন?
বেনেগাল: নিজের ছবি আমি বারবার দেখি না। এটা আমার সহ্য হয় না। আর নিজের কোনো ছবিও আমি কখনও রিমেক করতে চাই না। আমার ছবিগুলো একটা নির্দিষ্ট স্থান ও কালের ছবি।
প্রশ্ন: জীবন ও ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে সিনেমার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
বেনেগাল: আগে সিনেমাকে যে অর্থে দেখা হতো, সেই অর্থ এখন পাল্টে গেছে।
এখন একটা ছবি বানানোর সময় আপনাকে মাথায় রাখতে হয় যে, ছবিটা বড় সিনেমা হলে এবং ছোট পর্দায়, এমনকি সেলফোনেও দেখা হবে। আগেরদিনে এসব নিয়ে ভাবতে হয়নি। এই ব্যাপারটা একটু হলেও ছবি বানানোর পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। বিষয় আর চরিত্রের দিকে নজর দেওয়ার চাপ আছে। চরিত্রগুলোকে শারীরিকভাবে আরও ভালো করে ফুটিয়ে তুলতে হয়। ক্লোজ-আপ আর মিড-শট বেশি নিতে হয়।
প্রশ্ন: তারপরও এই প্রক্রিয়া এখনও আপনাকে মোহাবিষ্ট করে রাখে? ছবি বানাতে বানাতে আপনি কখনও ক্লান্ত হন না?
বেনেগাল: কখনোই না। ডাক্তার বা ছুতারকে কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা জিজ্ঞেস করার মতো হয়ে গেল প্রশ্নটা। কাজটাতে যদি আপনি ভালো হন, তাহলে ক্লান্ত হবেন কেন?
যে কাজ আমি পছন্দে বেছে নিয়েছি, সেই কাজে কখনও বিরক্ত হতে পারি না। কখনও এক মিনিটের জন্যও ভাবিনি যে আমি ভুল করেছি। চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়াটা লেখক বা চিত্রশিল্পী হওয়ার মতোই। এটা একইসাথে স্থানীয় এবং সর্বজনীন। অন্য কোন পেশায় এটা পাবেন? একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হলেন এমন গবেষক, যিনি একইসঙ্গে মাইক্রোস্কোপ আর টেলিস্কোপ দিয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।
‘বঙ্গবন্ধু’ আমার শেষ প্রজেক্ট নয়। যত দিন শরীর আর মন সুস্থ আছে, আমি ছবি বানিয়ে যাব।