চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সমর্থকদের দ্বারা আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যার বিক্ষোভ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়। এসময় তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শহিদ মিনারে এসে শেষ করেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই’, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই ইসকনের ঠাঁই নাই’ ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘আদালতে উকিল মরে এই সরকার কি করে’, ‘সন্ত্রাসবাদের আস্তানা এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, চট্টগামের আদালত প্রাঙ্গণে হত্যার ঘটনা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের ঔদ্ধত্য প্রকাশ। আমরা এই ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধ আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। পতিত স্বৈরাচার আমাদের সাম্প্রদায়িক বিরোধ তৈরি করতে চায়। আমরা দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ি এটা চায়। কিন্তু এদেশের বিবেকবান মানুষরা কোনো ফ্যাসিবাদের ফাঁদে পা দিবো না।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাদ বলেন, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে সহ্য করতে পারেনা তারা বিভিন্ন ধরনের কলকাঠি নাড়ছে। বাংলাদেশের একটি সুন্দর মুহূর্তের সময় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাকে চাঙ্গা করে দেশের মানুষকে বিভক্ত করতে চেষ্টা করছে। হিন্দুদের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা দেশের সকল ধমাবলম্বীকে নিয়ে একসাথে চলতে চাই। হিন্দুদের মধ্যে কিছু ভাইকে বিপথগামী করে ইসকন বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আনজুম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের শ্বশুরবাড়ি দিল্লি থেকে এদেশেকে অশান্ত করার জন্য বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি উগ্রবাদি সংগঠনের লিডার বলেছেন তিনি বাংলাদেশে আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করতে চান। পতিত স্বৈরাচারকে শক্তিশালী করতে চায় এমন কোনো উগ্রবাদী সংগঠনকে আমরা নতুন বাংলাদেশে দেখতে চাই না। সরকারকে বলতে চাই যে উগ্রবাদী সংগঠন বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে আপনারা অতিদ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। কোনো ধর্মের মানুষের প্রতি আক্রমণ হোক তা আমরা মেনে নিবো না।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে কিছু উগ্রবাদী সংগঠন উঠেপড়ে লেগেছে। ভারতীয় আধিপত্যের বিস্তার ঘটাতে তারা সর্বদা সোচ্চার হয়ে কাজ করছে। ইস্কনের মত কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন আমাদের দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতিতে ফাটল ধরিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চায়। পতিত স্বৈরাচারের উদ্দেশ্যকে সফল করতে চায়। বর্তমান সরকারকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই আইনজীবী সাইফুল হত্যার বিচার এবং এ ধরনের সকল জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন করতে হবে।’
তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘পতিত শক্তির উদ্দেশ্য কেউ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করলে তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করতে ছাত্র সমাজ প্রস্তুত আছে। চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনায় যেই সংগঠনের লোকই জড়িত থাকুক, সেই সংগঠনকে এর দায় নিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এই সাইফুল হত্যার দায়ভার এড়াতে পারেনা। আদালত প্রাঙ্গণে এমন হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইসকন সদস্যদের বিরুদ্ধে।