বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে ই-গেইট উদ্বোধন করা হলেও এখনো ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। ই-গেট পরিচালনার টেকনিশিয়ান না থাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কবে থেকে এ কার্যক্রম চলবে তাও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না। তবে আগের ম্যানুয়াল নিয়মে পাসপোর্টযাত্রীরা যাতায়াত করছেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শনিবার (৪ মার্চ) উদ্বোধনের পর থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত কোনো পাসপোর্টযাত্রী ই-গেট ব্যবহার করেননি। ই-গেইট কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো টেকনিশিয়ান না আসায় এখনো চালু করা হয়নি। তবে দ্রুত ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান আসবেন বলে জেনেছি।
জানা গেছে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ই-গেট কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। শনিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে ই-গেট উদ্বোধন করেন।
ই-গেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পুলিশ ই-পাসপোর্টের বিভিন্ন তথ্যাদি তাদের ইমিগ্রেশন ওয়ার্কস্টেশনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বল্প সময়ে যাচাই-বাছাই করতে পারবে। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বিঘ্নে এবং দ্রুততার সঙ্গে যথাযথ তথ্য যাচাই করে ই-পাসপোর্টধারীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা। এটি স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সর্বাধুনিক ও সর্বোত্তম প্রযুক্তি হিসেবে সন্নিবেশিত রয়েছে।
ই-গেট ব্যবহারের পদ্ধতিতে প্রথম ধাপে প্রবেশপথে নিজের ছবি, তথ্য ও বারকোডযুক্ত ই-পাসপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠা স্ক্যান করলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে যাত্রীর সব তথ্য যাচাই শেষে খুলে যাবে প্রথম গেট। এরপর দ্বিতীয় ধাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যামেরাযুক্ত ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর মুখমণ্ডল মিললে খুলে যাবে দ্বিতীয় গেট। সার্ভার এবং সিস্টেম ঠিক থাকলে মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই শেষ হবে একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে দেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো ই-পাসপোর্টের আওতায় আসেননি। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে-বিদেশে ৭০ লাখের বেশি গ্রাহককে সফলভাবে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে সব জেলা পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ২০২২ সালের ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গমনে ১৩টি ও আগমনীতে ১৩টি ই-গেট, ১৮ নভেম্বর শাহ আমানত বিমানবন্দরে বহির্গমনে তিনটি ও আগমনীতে তিনটি ই-গেট এবং এ বছর ৮ জানুয়ারি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গমনে তিনটি ও আগমনীতে তিনটি ই-গেট সচল করে আধুনিক ইমিগ্রেশন সুবিধা শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজারের অধিক যাত্রী এই সেবা গ্রহণ করেছেন।
সবশেষ সোমবার বেনাপোল স্থলবন্দরের চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে বহির্গমনে দুটি ও আগমনীতে দুটি ই-গেট উদ্বোধন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য স্থলবন্দরে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এই ই-গেট সেবা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম প্রবর্তন করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরা মাত্র ১৮ সেকেন্ডে ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে একজন যাত্রীর সময় লাগে প্রায় পাঁচ থেকে আট মিনিট। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের। সেই ভোগান্তি নিরসনে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে চারটি ই-গেইট স্থাপন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো স্থলবন্দরেও স্থাপিত ই-গেট সেবা কার্যক্রম চালু হলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যেমন ভোগান্তি কমবে তেমনি দালাল ও প্রতারকদের দৌরাত্মও কমে আসবে।