চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত বিল্লাল হোসেনকে (৪৫) পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর (৫৮) ও সাবেক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম সহ ৯ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বিল্লাল হোসেনের বোন আলপোনা পারভীন (৪০) বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আমলী আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।
দর্শনা আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রিপল আলী বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে মামলাটি চুয়াডাঙ্গা সি আই ডি কে তদন্ত করার জন্য প্রেরণ করেছেন।
মামলার অন্যান্য আসামরা হলেন, যথাক্রমে দর্শনা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন নফর (৪৭), সাবেক দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান মিজান (৫২), দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মনসুর বাবু (৫৫), দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আলীহিম (৫৫), দামুড়হুদা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আহসান হাবিব (৫৮), কনস্টেবল সাজিদুর রহমান (৪০), এএসআই দেবাশীষ (৪০)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের এডভোকেট মোঃ মাসুদ পারভেজ রাসেল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের গ্রামের মোঃ বিল্লাল হোসেনের কাছে দলীয় দাপট দেখিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন নফর, আলী মনসুর বাবু ও আলীহিম পুলিশের ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে। বিল্লাল হোসেন চাঁদা দিতে রাজি না হাওয়ায় তারা দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই মিজানুর রহমান কে জানায়। এ সময় দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই মিজানুর রহমান এমপি আলী আজগর টগর ও তার ভাই আলী মনসুর বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিন নফর ও আলীহিমের পরিকল্পনার কথা চুয়াডাঙ্গার সাবেক পুলিশ সুপার আব্দুল রহিম শাহ, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব, কনস্টেবল সাজিদুর রহমান ও এএসআই দেবাশীষকে জানালে তারা বিল্লাল হোসেনকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা মতো তারা বিগত ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট রাতে অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে। বিল্লালকে তুলে নিয়ে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর উজলপুর রাস্তার হরর চরার মাঠে নিয়ে আসামিরা বিল্লাল কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও একাধিক গুলি করে হত্যা করে।
পরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিল্লাল হোসেন নিহতর নাটক সাজায় তারা। সকালে সাক্ষীগণসহ স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় বিল্লাল হোসেনের বাম বুকে, বাম বগলের নিচে, দান উরু সহ একাধিক স্থানে গুলি করা এবং পিঠে দুই হাটুর নিচে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা। এসময় বিল্লালের দুই হাত হ্যান্ডকাপ দিয়ে বাধা ছিল। তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ উপড়ানো হয়। পরের দিন এই খবর জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এ ঘটনায় আদালতে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা শুনলে আসামিরা আমার পরিবারকে অপহরণসহ গুম খুনের হুমকি দেয়। দেশে স্বৈরাশাসক পতনের পর ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় বিল্লাল হোসেনের বোন আলপনা পারভীন বাদী হয়ে সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা দর্শনা আমলী আদালতে এই হত্যা মামলা দায়ের করে।
এ মামলার আইনজীবী চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের এডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, বিজ্ঞ আদালত বাদীর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সি আই ডি পুলিশের নিকট প্রেরণ করেছেন।