চুয়াডাঙ্গা ১১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিশু সন্তান রাইয়ান ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিংকর্তব্য বিমুঢ় স্ত্রী রজনী খাতুন

গাংনীর ল্যান্স কর্পোার‌্যাল দেলোয়ারের বাড়িতে শোকের মাতম

শত্রুর বুলেট নয়, সিলেটে নির্মানাধিন ভবনের মালামাল পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে দেশ সেবায় অংশ নেয়া বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর বীর সৈনিক দেলোয়ার হোসেনের। তার এই অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকে বিহবল। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশি এমনকি এলাকাবাসিও শোকে মুহ্যমান। পরিবার প্রতিবেশি এমনকি এলাকাবাসিরাও সংশ্লিষ্ট ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের শাস্তির দাবী করেন।

 

দেলোয়ার হোসেন সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ৫০ ফিল্ড আর্টিলারীতে সিলেট সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। সে মেহেরপুরের গাংনীর রাইপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বামী হারানোর শোকে কান্নার পাশাপাশি মুর্ছা যাচ্ছিলেন ল্যান্স কর্পোার‌্যাল দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী রজনী খাতুন। বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। চার বছর বয়সি ছেলে রাইয়ান ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত। এদিকে শোকে জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে বাবা আতিয়ার রহমান আর মা ইসমতারা ছেলের বউ ও নাতিকে সান্তনা দিচ্ছেন। ছেলের অকাল প্রয়ান কোন মতেই মানতে পারছেন না তারা। বাড়ির সামনে মাচানে গাছের নীচে বসে আছেন এলাকার লোকজন ও আত্মীয় স্বজন। সবার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া।

 

শুধু পরিবার নয়, প্রতিবেশি এমনকি তার সহপাঠিরাও শোকে মুহ্যমান। তারা সব সময় দেলোয়ারের পরিবারকে সান্তনা দিচ্ছেন ও যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারণে এ মর্মান্তিক মৃত্যু তার বিচার দাবী করেন তারা। সেই সাথে দেলোয়ারের স্ত্রী অথবা পরিবারের লোকজনকে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান।

 

ল্যান্স কর্পোরাল দেলোয়ার হোসেনে মা ইসমতারা খাতুন জানান, মারা যাবার দুদিন আগে পরিবার পরিজনের কথা ছাড়াও কোরবানী দেয়ার ব্যাপারে কথা হয়। সব সময় আমাদের খবর নিতো দেলোয়ার। সেই সাথে নাতি রাইয়ানকে দেখে রাখার কথা বলতো। এখন আর কেউ খবর নেবে না জানতেও চাইবেনা আমরা কেমন আছি। এমনি বিলাপ করে কাঁদছিলেন তিনি।
স্ত্রী রজনী খাতুন বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। সন্তানকে কোলে নিয়ে বারবার স্বামির ছবি দেখছিলেন আর তার স্মৃতি চারণ করছেন। স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

 

কি করবে কোথায় দাঁড়াবে তার সন্তানকে নিয়ে ? এমন প্রশ্ন যেন তাকে বারবার বিদ্ধ করছিল। রজনী আরো জানান, সব সময় তাকে পড়ালেখার প্রতি জোর দিতো দেলোয়ার। ভাল রেজাল্ট করার জন্য উৎসাহ দিতো কিন্তু ভাল রেজাল্ট করা হলো অথচ দেলোয়ার শুনে যেতে পারলো না। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান তিনি।

 

বাবা আতিয়ার রহমান জানান, ছেলে দেলোয়ার ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস্য। কষ্ট করে পড়া লেখা শিখিয়ে দেশ সেবায় অংশ নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। তার মৃতুতে গোটা পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারণে তার সন্তানকে হারিয়েছেন তার বিচার চান তিনি। সেই সাথে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রীকে একটি চাকরীর ব্যবস্থা করলে তার সন্তানকে বড় করে তুলতে পারবেন বলেও সেনা কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানান তিনি।

 

রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু জানান, দেলোয়ার হোসেন ছিলেন অত্যন্ত সদালাপি। তার মতো কারো যেন অকাল মৃত্যু না ঘটে সে ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ করার আহবান জানানো পাশাপাশি ভুক্তভোগি পরিবারটির সদস্যদেরকে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করার জন্য সেনা প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষন করেন এই জনপ্রতিনিধি।
প্রসঙ্গতঃ ৩ জুন শনিবার দুপুর ২টার দিকে সিলেট নগর ভবনের পাশে সিটি সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করছিলেন দেলোয়ার হোসেন।

 

সে সময় ভবনের ওপর থেকে একটি স্টিলের পাইপ তার মাথায় পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করা হয় বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস।

 

অবহেলাজনিত কারণে ল্যান্স করপোরাল মো. দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুর অভিযোগে করা এ মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় যে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল অ্যান্ড কোং-এর মালিক মো. জামাল উদ্দিন, তাদের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রাজ্জাক, এবং ক্রেনচালক মো. সাদেক।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Powered by WooCommerce

শিশু সন্তান রাইয়ান ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিংকর্তব্য বিমুঢ় স্ত্রী রজনী খাতুন

গাংনীর ল্যান্স কর্পোার‌্যাল দেলোয়ারের বাড়িতে শোকের মাতম

প্রকাশ : ১১:৫৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

শত্রুর বুলেট নয়, সিলেটে নির্মানাধিন ভবনের মালামাল পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে দেশ সেবায় অংশ নেয়া বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর বীর সৈনিক দেলোয়ার হোসেনের। তার এই অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকে বিহবল। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশি এমনকি এলাকাবাসিও শোকে মুহ্যমান। পরিবার প্রতিবেশি এমনকি এলাকাবাসিরাও সংশ্লিষ্ট ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের শাস্তির দাবী করেন।

 

দেলোয়ার হোসেন সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ৫০ ফিল্ড আর্টিলারীতে সিলেট সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। সে মেহেরপুরের গাংনীর রাইপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বামী হারানোর শোকে কান্নার পাশাপাশি মুর্ছা যাচ্ছিলেন ল্যান্স কর্পোার‌্যাল দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী রজনী খাতুন। বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। চার বছর বয়সি ছেলে রাইয়ান ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত। এদিকে শোকে জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে বাবা আতিয়ার রহমান আর মা ইসমতারা ছেলের বউ ও নাতিকে সান্তনা দিচ্ছেন। ছেলের অকাল প্রয়ান কোন মতেই মানতে পারছেন না তারা। বাড়ির সামনে মাচানে গাছের নীচে বসে আছেন এলাকার লোকজন ও আত্মীয় স্বজন। সবার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া।

 

শুধু পরিবার নয়, প্রতিবেশি এমনকি তার সহপাঠিরাও শোকে মুহ্যমান। তারা সব সময় দেলোয়ারের পরিবারকে সান্তনা দিচ্ছেন ও যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারণে এ মর্মান্তিক মৃত্যু তার বিচার দাবী করেন তারা। সেই সাথে দেলোয়ারের স্ত্রী অথবা পরিবারের লোকজনকে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান।

 

ল্যান্স কর্পোরাল দেলোয়ার হোসেনে মা ইসমতারা খাতুন জানান, মারা যাবার দুদিন আগে পরিবার পরিজনের কথা ছাড়াও কোরবানী দেয়ার ব্যাপারে কথা হয়। সব সময় আমাদের খবর নিতো দেলোয়ার। সেই সাথে নাতি রাইয়ানকে দেখে রাখার কথা বলতো। এখন আর কেউ খবর নেবে না জানতেও চাইবেনা আমরা কেমন আছি। এমনি বিলাপ করে কাঁদছিলেন তিনি।
স্ত্রী রজনী খাতুন বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। সন্তানকে কোলে নিয়ে বারবার স্বামির ছবি দেখছিলেন আর তার স্মৃতি চারণ করছেন। স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

 

কি করবে কোথায় দাঁড়াবে তার সন্তানকে নিয়ে ? এমন প্রশ্ন যেন তাকে বারবার বিদ্ধ করছিল। রজনী আরো জানান, সব সময় তাকে পড়ালেখার প্রতি জোর দিতো দেলোয়ার। ভাল রেজাল্ট করার জন্য উৎসাহ দিতো কিন্তু ভাল রেজাল্ট করা হলো অথচ দেলোয়ার শুনে যেতে পারলো না। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান তিনি।

 

বাবা আতিয়ার রহমান জানান, ছেলে দেলোয়ার ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস্য। কষ্ট করে পড়া লেখা শিখিয়ে দেশ সেবায় অংশ নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। তার মৃতুতে গোটা পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারণে তার সন্তানকে হারিয়েছেন তার বিচার চান তিনি। সেই সাথে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রীকে একটি চাকরীর ব্যবস্থা করলে তার সন্তানকে বড় করে তুলতে পারবেন বলেও সেনা কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানান তিনি।

 

রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু জানান, দেলোয়ার হোসেন ছিলেন অত্যন্ত সদালাপি। তার মতো কারো যেন অকাল মৃত্যু না ঘটে সে ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ করার আহবান জানানো পাশাপাশি ভুক্তভোগি পরিবারটির সদস্যদেরকে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করার জন্য সেনা প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষন করেন এই জনপ্রতিনিধি।
প্রসঙ্গতঃ ৩ জুন শনিবার দুপুর ২টার দিকে সিলেট নগর ভবনের পাশে সিটি সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করছিলেন দেলোয়ার হোসেন।

 

সে সময় ভবনের ওপর থেকে একটি স্টিলের পাইপ তার মাথায় পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করা হয় বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস।

 

অবহেলাজনিত কারণে ল্যান্স করপোরাল মো. দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুর অভিযোগে করা এ মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় যে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল অ্যান্ড কোং-এর মালিক মো. জামাল উদ্দিন, তাদের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রাজ্জাক, এবং ক্রেনচালক মো. সাদেক।