মায়ের কথা রাখতে ১৩ বছর পর বাড়ি আসবে বলে কথা দিয়েছিল ছেলে শফিকুল ইসলাম। এসে বিয়ে করে সংসার পাতবে। দরীদ্র পরিবারের ছেলে সুখ নামের সোনার হরিণ ধরার জন্য একের পর এক বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিল শফিকুল। হ্যা শফিকুল ফিরে এসেছে মায়ের কাছে তবে জিবন্ত নয়, লাশ হয়ে। আজ রোব্বার সকালে তার লাশ তার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীর কাষ্টদহ গ্রামে পৌছেছে।
গত সোমবার শফিকুলের হাত-পা বাঁধা গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে তার সহকর্মীরা। শফিকুল ওই গ্রামের মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে।
পারিবারিক সুত্র জানায় শফিকুল ইসলাম তার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে প্রথমে পাড়ি জমায় কাতারে। সেখানে ১২ বছর থাকার পর বাড়ি ফিরে আসে। সংসারে মা ভাই ও বোনদের সুখের জন্য আবারো পাড়ি জমান সুদুর আফ্রিকায়। নাগরিকত্ব পেতে সেখানে একটি বিয়ে করেন শফিকুল। পরে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
বেশ ভালই যাচ্ছিল দিন। কিছু দিন পর আফ্রিকান স্ত্রীর সাথে দ্ব›দ্ব দেখা দেয়। এর পর থেকে শফিকুলকে বিভিন্ন সময়ে জিম্মী করে অর্থ আদায় করা হতো। পরিবারের লোকজন মুক্তিপণ দেয়ার পর শফিকুলকে দেশে ফিরে আসতে বলে এবং বিয়ে করে সংসার পাততে বলেন মমতাময়ী মা।
শফিকুলও মায়ের কথায় রাজি হয়। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার কাজটিও করছিলেন তার বন্ধুরা। এরই মাঝে ঘটে বিপত্তি। গত সোমবার হঠাৎ তার সহকর্মীরা শফিকুলের হাত-পা বাঁধা গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে। বিষয়টি বাড়িতে জানানো হয়। এর পর থেকে গোটা পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। অপেক্ষা করতে থাকে শফিকুলের লাশটি একবারের জন্য হলেও দেখার। আজ রোব্বার সকালে শফিকুলের লাশ এসে বাড়িতে পৌছায়। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা।
সকালে শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এলাকাবাসির ভীড়। আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মমতাময়ি মা রাহিমা ও বোন মিলি কান্না করছিলেরন আর বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। তারা আদরের সন্তান ও ভাইয়ের মরদেহের পাশে বসে বিলাপ করছিল। বন্ধু বান্ধবদের মধ্যেে ছিল চাপা কান্না। তারা জানালেন শফিকুলের মতো একজন সুন্দর ও মুক্তমনের বন্ধু হারালেন তারা।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন এবং পুলিশের একটি টীম শফিকুল ইসলামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান।