মেহেরপুরের গাংনীর এক সময়কার খর স্রোতা নাগদার খাল খনন না করায় ভরাট হয়ে এখন মরতে বসেছে। মৃতপ্রায় এ খালটি খনন করা হলে অত্র অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৭০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। সেই সাথে বাড়বে শস্য উৎপাদন। খালটি খননের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাগদার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। খালটি খননের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশল অফিস।
মেহেরপুরের গাংনীর চেংগাড়া, বানিয়াপুকুর, শিমুলতলা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এ নাগদার খালটি ছিল বেশ খর¯্রােতা। এক সময় ব্রিটিশ বেনিয়ারাও নাকি এ খাল দিয়ে বড় বড় জাহাজ নিয়ে ব্যবসা করতে আসতো। কিন্তু এ খালটি এখন সরু ক্যানালে পরিনত হয়েছে। ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ খালটি খনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। খালের মুখে পলি জমায় এবং তা অপসারণ না করায় ক্রমশঃ খালটির মৃত প্রায়। খালের পানির উপর নির্ভর করে এলাকার সাড়ে ৭০০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হতো। দ্বি-ফসলি জমি তিন ফসলীতে রুপান্তরীত হয়েছিল।
খালটিতে পানি প্রবাহ না থাকায় অনেকেই ফসল আবাদ করেন না। এতে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। তবে খালের ৪০০ মিটার পুনর্খনন করায় ওই স্থানটিতে কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছেন।
গোপালনগরের লাল্টু জানান, এ খালের পাশে তার ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। আগে খালের পানি দিয়ে সেচকাজ চলতো। এখন খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ দিতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জমি অনাবাদি থাকায় লীজ দেয়া হয়েছে। বানিয়াপুকুর গ্রামের আব্বাছ আলী জানান, খালটি এখন অতি সরু ক্যানেলে পরিনত। পলি জমে খরাট হওয়ায় খালটি ভরাট হয়ে গেছে। একই কথা জানালেন শিমুলতলা গ্রামের চাষি শহিদুল ইসলাম।
নাগদার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দাল হক জানান, এলাকার কৃষক ও মৎসজীবীদের নিয়ে খালটিতে পানি প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য নাগদার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। ২০০৬ সালে গঠিত এ সমিতিতে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৬২৭ জন। এ সমিতি খালের পানি প্রবাহ চলমান রাখতে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে ৪০০ মিটার খাল খনন করা হয়। এর সুবিধাও পাচ্ছেন এলাকাবাসি। ফসল আবাদ নয়, ফসল ঘরে তোলার জন্য রাস্তা নির্মানও করা হয়েছে। খালটি খনন করা হলে আবাদি জমির পরিমান বাড়বে সেই সাথে বাড়বে উন্নয়ন। ইতোমধ্যে খাল খননের আবেদনও করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু জানান, এ খালের পানি কইকুড়ি চাতরের বিল হয়ে ছেউটিয়া নদীতে মিশে। অসময়ে এখানে øুইস গেটের মাধ্যমে পানি জমিয়ে রেখে শুষ্ক মৌসূমে সেচের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু খালটি খনন না করায় সেটি মরতে বসেছে। খালটি খননের জন্য ইতোমধ্যে নাগদার খাল পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি আবেদন করেছেন। আমরাও চাই খালটি তার প্রাণ ফিরে পাক। খালটি খনন হলে দুই সহ¯্রাধিক কৃষক সুবিধা পাবে। আবাদের আওতায় আসবে সাড়ে ৭০০ হেক্টর জমি।
গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ জানান, এই খালের আগের রূপ ফিরেয়ে আনার লক্ষ্যে নাগদার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি ইতোমধ্যে একটি আবেদন করেছেন। এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। খালটি পুনখনের জন্য অনেকদিন ধরেই কাজ করা হচ্ছে। এই কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে।