মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভুমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গাংনীতে প্রথম পর্যায়ের ৫টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৫টি ঘর আজো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি বরাদ্দপ্রাপ্ত পরিবারকে। আদালতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়া ও ঘরে কোন লোকজন না থাকায় অনেক মুল্যবান জিনিষপত্র চোরেরা চুরি করে নিয়েছে। ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করায় এখন সেখানে মাদকাসক্ত ও চোর ডাকাতদের আশ্রয়স্থলে পরিনত হয়েছে।
অন্যদিকে যাদেরকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে তাদেরকে কবুলিয়ত নামা ও নামজারীর কাগজপত্র না দেয়ার নানা ধরণের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন তারা। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সুরাহা না হলে তাদের কিছুই করার নেই। তবে যাদের কবুলত নামা ও নামজারীর কাগজ দেয়া হয়নি তাদেরকে শীঘ্র তা দেয়া হবে।
গাংনী উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভুমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মটমুড়া ইউপির মোহাম্মদপুর গ্রামের এক নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০ নং দাগে ১৭ জন এবং ষোলটাকা ইউপির কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ের ৫টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৫টি। কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি ঘর নির্মান আশি শতাংশ শেষ হবার সময় স্থানীয় এক প্রভাবশালী আদালতে মামলা করায় সেগুলো নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে মোহাম্মদপুরের ১৭টি ঘর নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পর বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার সময় বাঁধার মুখে পড়েন প্রশাসন। গ্রামের প্রভাবশালী আবুল মেলেটারী এক নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০ দাগের জমি তার নিজের বলে দাবী করে আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত মামলায় স্থগিতাদেশ দিলে নিমানকৃত ঘর গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনি। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যায় ধরা হয়েছে দুই লাখ টাকা।
এদিকে নির্মাণ করার পর ঘরগুলোতে কেউ বাস না করায় ঘরের অনেক মুল্যবান সামগ্রী চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মাদক সেবীদের আড্ডাখানা ছাড়াও চোর ডাকাতের আবাস স্থল হিসেবে পরিনত হয়েছে। তাছাড়া গৃহহীনদের নামে বরাদ্দ হলেও তারা ঘর না পেয়ে মানবেতর জিবন যাপন করছেন।
মোহাম্মদপুর গ্রামের সুজন ও তার স্ত্রী বিউটি জানান, তাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হলেও তারা ঘরে উঠতে পারেন নি। মামলা ছাড়াও ঘরের কোন কাগজপত্র দেয়া হয়নি। ভুতুড়ে অন্ধকার জায়গা। তাছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল মেলেটারী সেখানে না যাওয়ার জন্য শাসিয়ে দেয়। একই কথা জানালেন, মাসুদ ও তার স্ত্রী নুরজাহান।
অপরদিকে প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪২টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হলেও তাদের নামের কাগজপত্র ও নামজারীর কাগজ দেয়া হয়নি। প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সরকারী জমিতে বরাদ্দ দেয়া ঘরে থাকলেও কাগজপত্র বুঝিয়ে না দেয়ায় অনেকেই নিরাপদ অনুভব করছেন না। প্রভাবশালীরা নানা ধরনের হুমকী ধামকী দিচ্ছেন।
মামলার বাদি আবুল হোসেন মেলেটারী জানান, তিনি ওই জমি লীজ নিয়েছেন সরকারের কাছ থেকে। এ জমিতে ভূমি অফিস অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করায় আদালতে মামলা করা হয়। মামলাপ্রাপ্ত হয়ে আদালত স্থগিতাদেশ দেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত কোন পরিবারকে হুমকী ধামকী দেয়া হয়নি।
জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকার পরও ওই জমিতে কেন গৃহ নির্মাণ করা হলো এবং বরাদ্দকৃত ঘরের মালিকদেরকে কোন কাগজপত্র না দেয়ার কারণ
জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম জানান, মোহাম্মদপুর এলঅকাতে ৫৯২০ নং দাগের জমি নিয়ে কোন মামলা রয়েছে কিনা তা কারো জানা ছিল না। গৃহ নির্মানের পর আবুল মেলেটারী নামের একজন আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসায় সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়নি এবং ঘরগুলি মালিককে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে যারা এখনও কোন কাগজ বা নামজারীর কাগজ পাননি তাদেরকে তাড়াতাড়ি কাগজ সরবরাহ করা হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি খাতুন জানান, মামলা জটিলতায় গৃহ হস্তানতর পক্রিয়া আঁটকে গেছে। আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের কিছুই করার নেই।