অভিজ্ঞ ব্যাংকার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। দেড় দশক আগে তিনি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ফার্স্ট এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কর্মরত আছেন। ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে ভালো করতে হলে কী কী দক্ষতা দরকার, কারা এতে ভালো করতে পারবেন, কীভাবে পারবেন, সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ কী কী—এসব বিষয় নিয়ে হ্যালো বাংলাদেশের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার ইকবাল হোসেন
আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন।
নটরডেম কলেজ থেকে বাণিজ্যে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ হতে ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ), মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) ডিগ্রি অর্জন করি। দেশীয় বিভিন্ন সাটিফিকেট কোর্সের পাশাপাশি অ্যাওফি বাহরাইন হতে সিএসএএ ডিগ্রী অর্জন করি।
ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে ভালো করতে গেলে কী কী দক্ষতা থাকতে হয়? কীভাবে এগুলোর চর্চা করা যেতে পারে?
ব্যাংক ক্যারিয়ারে ভালোভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে কিছু মৌলিক এবং কিছু পেশাদারী দক্ষতা। যেমন হিসাব বিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি ও কম্পিউটারে দক্ষতা, কমিউনিকেশন স্কিল, টেকনিক্যাল এবং এনালিটিক্যাল স্কিলের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা, লিডারশিপ এবং টিমওয়ার্ক, কাস্টমার সার্ভিস স্কিল, লিগাল এবং রেগুলেটরি জ্ঞান, টাইম ম্যানেজমেন্ট, সেলস এবং মার্কেটিং স্কিল অর্জন। ব্যাংকের প্রধান সম্পদ হলো গ্রাহক। কোনো গ্রাহক এলে তার সঙ্গে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে হবে। কোনো সমস্যা নিয়ে এলে নেতিবাচক কথা বলা যাবে না। গ্রহকের সমস্যা সমাধান করতে না পারলেও যদি সমাধানের চেষ্টা করেন, তাতেই তিনি সন্তুষ্ট হবেন। সমস্যার কথা না শুনেই যদি বিদায় করে দেন, সেই গ্রাহক আপনার কাছে আসবেন না। গ্রাহকই হলো ব্যাংকের দূত। তিনি ফিরে গিয়ে ব্যাংক সম্পর্কে ভালো কথা বললে তো অন্যরাও ওই ব্যাংকে আসবেন।
যারা ব্যাংকে কাজ করতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে নেটওয়ার্কিং তৈরি করুন। সার্টিফিকেট কোর্স এবং প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্কিল উন্নয়ন করুন। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন। গ্রাহক সেবা এবং সম্পর্ক ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা বাড়ান। নিজের ও অন্যদের এক্সপেরিয়েন্স থেকে শিখুন। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করুন। স্বচ্ছতা এবং সততা বজায় রাখুন। আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্য রাখুন। সমসাময়িক ও ভবিষ্যৎ ব্যাংকিং বিষয়ে নিজেকে আপডেট রাখুন
ব্যাংকের চাকরির সুবিধা কী কী?
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে অন্যান্য পেশার তুলনায় উচ্চ বেতন, উন্নত কর্ম পরিবেশ ও আধুনিক সুবিধাদি পাওয়া যায়। পাশাপাশি ব্যাংকের কর্মকর্তারা স্বল্প মুনাফায় বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের সুবিধা ও নির্বাহীরা গাড়ী সুবিধা পেয়ে থাকেন। নিজের দক্ষতা দেখিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে ব্যাংকের চাকরিতে। এছাড়াও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রফেশনাল গ্রোথ এবং উন্নতির সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকারদের সামাজিক মর্যাদা ও গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। ব্যাংকারদের গ্রাহকসেবার মাধ্যমে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরির সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সফর এবং এক্সপোজার সুযোগ রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমা সুবিধা প্রদান করে থাকে।
ব্যাংকের চাকরির চ্যালেঞ্জ কী কী?
অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক পরিবর্তন অথবা সংকটের প্রভাব। অন্য পেশার তুলনায় অধিক কর্মঘণ্টা ও কাজের চাপ। গ্রাহকের অসন্তোষ এবং অভিযোগ। অডিট (নিরীক্ষা) এবং নিয়ম-কানুনের চাপ। পদোন্নতির প্রতিযোগিতা। প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্কিল উন্নয়ন করার প্রয়োজনীয়তা।
দেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান চিত্র কেমন?
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মন্দ ঋণ। অনেক ব্যাংকই মন্দ ঋণের ভারে জর্জরিত। এটি ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আরেকটি গভীর সমস্যা হচ্ছে তারল্য সংকট। কিছু ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদামতো তাদের অর্থ উত্তোলন করার সুবিধা দিতে পারছেনা। মালিকানা ও অন্যান্য জটিলতার কারণে অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের আস্থা হারিয়েছে। হারানো আস্থা ফিরে পেতে ব্যাংকগুলো তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল সেবা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সাইবার আক্রমণ এবং তথ্য চুরির ঝুঁকি বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।