অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অস্ত্র পেতে যাচ্ছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির পর মিলবে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি। সেইসঙ্গে অস্ত্র সংরক্ষণাগার প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত জমা থাকবে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ লাইন্স অথবা সংশ্লিষ্ট থানায়।
সম্প্রতি অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহারের নীতিমালা অনুমোদন দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্ত্র প্রদান সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির এক সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নীতিমালা অনুমোদনের পক্ষে সায় দেন। গত মঙ্গলবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দ্রুততম সময়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পাশাপাশি অধিদপ্তরের প্রতিটি কার্যালয়ে আলমারি বা অস্ত্রাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিতে বলা হয়। অস্ত্র হিসেবে ৯ মিলিমিটার সেমি-অটোমেটিক পিস্তল দেওয়া হবে। অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, পরিদর্শক ও উপপরিদর্শকরা এই অস্ত্র পাবেন।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ইউনিফর্ম আছে, কিন্তু অস্ত্র বা হাতিয়ার নেই। তাই সফল অভিযান পরিচালনার স্বার্থে তাদের অস্ত্র দেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে অধিদপ্তরটি প্রধান মূল সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ২০০৮ সাল থেকে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাদকবিরোধী অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চাইলেও নানান জটিলতা ও বিভিন্ন পক্ষের আপত্তিতে বিষয়টি ঝুলে যায়। এই সময়ে নিরস্ত্র অধিদপ্তরের সদস্যরা মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি ৭৮টি পিস্তল, ৭টি শর্টগান, ২৭টি ম্যাগাজিন, ১৭টি রিভলবার, একটি এয়ারগান, ১ হাজার ১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার ও জব্দ করে। মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিগত ১০ বছরে অভিযান পরিচালনাকালে অধিদপ্তরের ১২৫ জন সদস্য গুরুতর আহত হন। দুজন প্রাণও হারান।
অস্ত্র ব্যবহারকারী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালালেও জরুরি অবস্থায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার আগে প্রয়োজন অনুযায়ী সময়মতো সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা বেশিরভাগই সশস্ত্র, হিংস্র ও সংঘবদ্ধ হওয়ায় অধিদপ্তরের নিরস্ত্র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। ফলে প্রায়ই অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীদের দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ প্রাথমিক পর্যায়ে অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ৫৭৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে উপপরিচালক ৯০ জন, সহকারী পরিচালক ৯৩ জন, পরিদর্শক ১৮৬ জন ও উপপরিদর্শক ২১০ জনকে অস্ত্র দেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তাবের কথা জানায়। একই সঙ্গে ৯ মিলিমিটার সেমি অটোমেটিক পিস্তল টি-৫৪ অস্ত্রের প্রাধিকারভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, নীতিমালা অনুমোদনের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অস্ত্র ব্যবহারের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য প্রত্যেক কার্যালয়ে অস্ত্রাগার নির্মাণের কথাও বলা হয়। অন্যথায় জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি কক্ষ, পুলিশ লাইনস বা থানায় জিম্মায় রাখতে বলা হয়েছে। আর এসব অস্ত্র ১৯৭৭ সালের আইন অনুযায়ী সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্ত্র প্রদান সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত সভার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে অধিদপ্তরের সিপাহি, পরিদর্শক ও উপপরিদর্শকদের মাদক নির্মূলে সহযোগিতার জন্য অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয় এবং এই কমিটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা জানানো হয়।