সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কালে এক সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রেখে ২ কর্মচারীর উপর হামলা চালানো হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও নদীর চরে বসবাস কারী ৫০/ ৬০ জন নারী-পুরুষ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে তালা ভাঙ্গা ও দেড় কোটি টাকা লুটের অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নাজিমগঞ্জ বাজারের সাইদুর বস্ত্রালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত ২ কর্মচারীকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। আহতরা হলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শহিদুল ইসলাম (৪০) এবং অফিস সহকারী রনজিত মন্ডল (৩৫)।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাইদুর বস্ত্রালয়ের মালিক সাইদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম সহ ৩০/৪০ জনের নামে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। জানা গেছে, নিষেধ অমান্য করে সাইদুর বস্ত্রালয় সহ একাধিক দোকান মালিক রাতারাতি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করার ঘটনায় গত ২১ নভেম্বর সহকারি কমিশনার ভূমি অফিসের ১৬০৯, ১৬১১, ১৬১২ নং স্মারকে অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার জন্য সাইদুল বস্ত্রালয়ের মালিক সাইদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, হোমিওপ্যাথিক ডা. সিদ্দিকুর রহমান এবং জাহাঙ্গীর হোসেনকে নোটিশ দেন এসিল্যান্ড। সেই মোতাবেক সাড়ে ৯ টার দিকে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত বিশ্বাস তার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ফোর্স নিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য অভিযানে যায়। ওই সময় প্রথমে দোকান মালিক দোকানের তালা ভেঙে খুলে দিলেও পরবর্তীতে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজে বাঁধা দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তার ভাড়াটিয়া ক্যাডার বাহিনী নিয়ে প্রথমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে বাক-বিতণ্ডতায় জড়িয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত বিশ্বাস সহ তার কর্মচারীদের উপরে হামলা চালালে ২ কর্মচারী আহত হয়। ওই সময় সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করে উপজেলা সদরে চলে আসে।
প্রসঙ্গতঃ কালিগঞ্জ উপজেলার সন্নিকটে সরকারি পেরি ফেরি ভুক্ত নাজিমগঞ্জ বাজারের কোটি টাকার সরকারি খাস জায়গা উজয়মারি গ্রামের সুরত আলী মোড়লের পুত্র সাইদুর বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী সাইদুল মোড়ল, সিরাজুল মোড়ল এবং মনিরুল মোড়ল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাঁটিয়ে শীতলপুর মৌজার বি,আর,এস ১ নং খতিয়ানের ৭৭৮ দাগের প্রায় দেড় বিঘা জমি দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গোডাউন, বাসা বাড়ি, তৈরি করে ভাড়া দিয়ে আসছিল। পরবর্তীতে ০.১৬ একর জমির উপর আবারো নতুন করে গোডাউনের ছাদ নির্মাণ করতে গেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে ঘটনাস্থলে যেয়ে নিষেধাজ্ঞা দেন। উক্ত নিষেধ অমান্য করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নামধারী কিছু ক্যাডারদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে রাতারাতি ছাঁদ নির্মাণ করে ফেলে। এর প্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর বসন্তপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার গাজী মোহাম্মদ আলী ১৫১ নং স্মারকে মামলা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট অভিযোগ পত্র দাখিল করে। কিন্তু উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিজানের ঘুষ বাণিজ্যে তা পন্ড হয়ে যায়।
অন্যদিকে সাইদুর বস্ত্রালয়ের মালিক মনিরুল ইসলাম মনির ৪ তলা ভবনে সার্ভেয়ার মিজান ভাড়া থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সহায়তা করে আসলেও ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিগত সরকারের আমলের এক আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এই সমস্ত অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও কারোর কিছু বলার সাহস হতো না। তার আত্মীয় মারা যাওয়ার পর ভোল পাল্টে বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএমএন এর প্রার্থী এক সময়কার হাসিনা সরকারের ১৪ দলীয় জোটের রূপকার খ্যাত এইচ.এম গোলাম রেজার নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে মাঠ চোষে বেড়িয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর অবস্থা বুঝে আবারো ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপি’র নেতা পরিচয় বিভিন্ন সভা সমাবেশে সেলফি তুলে পোস্ট দেওয়ায় সব কুল এখন হারিয়ে বসেছে। এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ভূমি অমিত কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি নিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।