ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবির রাজ্যে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের মতোই আরেকটি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পরপরই বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ঘোষণা দিয়েছেন, তারা পশ্চিমবঙ্গে একটি রাম মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। তবে তিনি বলেছেন, রাম মন্দির নির্মাণকে প্রস্তাবিত মসজিদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত নয়।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, অগ্নিমিত্রা পাল হুমায়ুন কবিরের বাবরি মসজিদের মতো একটি মসজিদ নির্মাণের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। অভিযোগ করেছেন, হুমায়ুন কবির উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি এর আগেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপি থেকে নির্বাচিত বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘মসজিদের প্রতিক্রিয়ায় রাম মন্দির নির্মাণ করা উচিত নয়। বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে এবং রাম মন্দিরও নির্মাণ করা যেতে পারে…যিনি বলেছেন বাবরি মসজিদ নির্মাণ হবে, তিনিই একসময় বলেছিলেন যে, হিন্দুদের হত্যা করে ভাগীরথীতে ফেলে দেওয়া হবে। এর জন্য কোনো শোকজ নোটিশ বা শাস্তি দেওয়া হয়নি।’
অগ্নিমিত্রা পাল আরও অভিযোগ করেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্তব্যগুলোর পেছনে…তিনি তাঁর ভোটব্যাংকের জন্য আরেকটি বাংলাদেশ তৈরি করছেন। রাম মন্দির নির্মিত হবে। আমরা অযোধ্যা রাম মন্দিরের এক বছর পূর্তি উদ্যাপন করব এবং বেলঘরিয়াতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।’
এদিকে, বিজেপি নেতা শংকর ঘোষও হুমায়ুন কবিরের বাবরি মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং রাম মন্দির নির্মাণকে ‘স্বাভাবিক’ এবং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মন্দির নির্মাণ স্বাভাবিক; এটি আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক। মসজিদ সেই সব লোকদের সঙ্গে সম্পর্কিত যারা আমাদের আক্রমণ করেছিল। বাংলাদেশই আমাদের এই সম্প্রদায়ের মনোভাব বোঝায়।’
এর আগে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবির তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন, বাবরি মসজিদ মুসলমানদের জন্য একটি গভীর আবেগের বিষয়। তিনি বলেন, ‘বাবরি মসজিদ মুসলমানদের জন্য একটি আবেগময় বিষয় ছিল। এটি বাবরের হাতে নির্মিত হয়েছিল এবং আমরা সবাই জানি ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। ৩০ বছর হয়ে গেছে এবং এখনো বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণ হয়নি। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি সর্বসম্মত রায় দেয়, যেখানে মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করা হয়।’
হুমায়ুন কবির পশ্চিমবঙ্গে প্রস্তাবিত মসজিদ সম্পর্কিত অভিযোগগুলোও খণ্ডন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত মুর্শিদাবাদে, কেউ কেউ বলছেন একটি নতুন বাবরি মসজিদ নির্মিত হবে লোকজনকে উসকানি দেওয়ার জন্য। তবে এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এখানে কোনো সমস্যা নেই। বাবরি মসজিদের জমি সম্পর্কিত বিষয়ে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, জমি কোথা থেকে কেনা হবে, তাহলে স্পষ্ট করে বলছি যে, আমরা রাজ্য সরকারের কাছে কোনো জমির জন্য আবেদন করিনি। না, আমরা কোনো সরকারি জমি বা অনুদান নেওয়ার ইচ্ছা রাখি না।’
হুমায়ুন কবির উল্লেখ করেন, মসজিদের জন্য কোনো সরকারি জমি বা অনুদান ব্যবহার করা হবে না। তিনি বলেন, ‘সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে ট্রাস্ট গঠন করা হবে, যারা স্থান নির্ধারণ করবে এবং ট্রাস্টের তহবিল দিয়ে জমি কিনবে। এই প্রক্রিয়া সব আইনগত নিয়ম মেনে হবে, যার মধ্যে কর প্রদান এবং রেজিস্ট্রেশন অন্তর্ভুক্ত। এটি বিশ্বাসের বিষয়, কাউকে বিপাকে ফেলার বিষয় নয়।’
বাংলাদেশিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে কবির বলেন, ‘সীমান্তে সুরক্ষা বজায় রাখা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। যদি কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করে তবে কেন্দ্রীয় সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ তা সামাল দেওয়া। এটি আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তাঁরা তাদের ধরুক বা বহিষ্কার করুক—তা তাদের ব্যাপার। আমি এ ধরনের কোনো সমস্যা এখনো লক্ষ্য করিনি।’