‘আমরা কোনোদিন পাকিস্তানি ছিলাম না। নাগরিকত্ব থাকা স্বত্বেও আমাদের অধিকার দেওয়া হয় না। সরকারের অনেক খাস জমি আছে, সেখানে আমাদের স্থায়ী পুনর্বাসন করা হোক। বিগত ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি। আমাদের প্রত্যেককে ২ শতাংশ করে হলেও জমি দেওয়া হোক। ক্যাম্পের ভেতর মানবেতর জীবন আর চাই না।
রোববার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটোরিয়ামে এক সংলাপে এসব কথা বলেন উর্দুভাষীরা। সমাবেশের আয়োজন করে রেফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)।
উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি আশরাফুল হক বাবু বলেন, ৫০ বছর ধরে আমরা ৮-৮ ফুটের একটি ঘরে মানবেতরভাবে বসবাস করছি। উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও আমরা আজও যথাযোগ্য মর্যাদা পাইনি। আমাদের সঙ্গে বাংলাভাষীরা আছেন। আপনারা আমাদের জন্য ভয়েস রেইজ করুন। ৭১ এর পর থেকে আমরা নিগৃহীত হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, যারা ক্যাম্পে আছি আমাদের পানিবাহিত রোগসহ অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন না হলে সাসটেইনেবল উন্নয়ন হবে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমাদের কেউই বসবাস করতে চায় না।
অনলাইনে এ সংলাপে যুক্ত হন প্রবাসী উর্দুভাষী বাংলাদেশি অধিকারকর্মী এবং গবেষক হাসান মোহাম্মদ। তিনি বলেন, উর্দুভাষী বাংলাদেশিদের আইডেন্টিটি সংকট জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এই সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এরমধ্য দিয়েই আমরা সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদুর রহমান বলেন, এদেশের সর্বোচ্চ আদালত বলার পরেও কিছু কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আপনাদের পক্ষে যায় না। এটা দুঃখজনক। আপনাদের মাত্র ২ শতাংশ জমির চাহিদা যদি বাংলাদেশ পূরণ করতে না পারে এটা দুঃখজনক।
রামরু’র নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বলেন, উর্দুভাষীদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের স্বীকৃতির ১৬ বছর পরও তাদের মর্যাদার সঙ্গে স্থায়ী পুনর্বাসনের বিষয়টি সুরাহা হয়নি। রামরু দীর্ঘদিন ধরে তাদের মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সমুন্নত করার আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাদের মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন।
অধ্যাপক ও নৃবিজ্ঞানী অবন্তী হারুণ বলেন, আমরা যেমন উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছি। তেমনিভাবে আমাদেরও উচিৎ না, উর্দু ভাষীদের ওপর বাংলা ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া। ঢাবিতেও উর্দু ভাষা রয়েছে, তাহলে কেন এই ভাষার মানুষ নিয়ে বৈষম্য।
প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, একজনের অধিকারের আওয়াজ উঠলে অন্যের অধিকারের পথ প্রশস্ত হয়। আমরা যদি মুক্তি চাই সবার মুক্তির কথা বলতে হবে।
আরএএস/জেডএইচ/