মেহেরপুরের গাংনীর বামন্দী- কাজিপুর আঞ্চলিক সড়ক এক রকম চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ছয়মাস রাস্তাটির সংস্কার কাজ বন্ধ রাখায় ভোগান্তি বেড়েছে চরমে। বারবার তাগিদ দেয়ার পরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি রাস্তার কাজ সমাপ্ত করছেনা বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ।
গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সুত্রে জানা গেছে, বামন্দী- কাজিপুর আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার কাজ পান কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মেসার্স সৈকত এন্টারপ্রাইজ। মোট চার কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত এ রাস্তাটির কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের মার্চ মাসে। রাস্তাটির খনন বালিভরাট ও খোয়া ফেলে অর্ধেক কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মাস ছয়েক আগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হঠাত কাজটি বন্ধ রাখে।
এদিকে দৌলতপুর উপজেলা সিমান্ত সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও অন্ততঃ ৪০ টি গ্রামের লোকজন ঐতিহ্যবাহী বামন্দী বাজারে ব্যবসা বাণিজ্য, দূর দূরান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত ছাড়াও দূরপাল্লার যাত্রীবাহি বাস চলাচল করে। শিক্ষা ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এ সড়কটি বেশ জনগুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাটির কাজ বন্ধ হওয়ায় শিক্ষা ও ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করে জিবনের ঝুঁকি নিয়ে। তাছাড়া রাস্তার ধুলাবালি এলাকার পরিবেশকে দূর্বিসহ করে তুলেছে।
বামন্দী বাজারের বিশিষ্ট পশু ব্যবসায়ি দেলোয়ার হোসেন জানান, আগে রাস্তাটি খাদা খন্দে ভরা ছিল। সে সমময় গরু বহনের জন্য ২০০ টাকার স্থলে লাগতো ৩০০ টাকা। এখন রাস্তার অবস্থা এতই করুন যে, কোন গাড়ি আসতে চায় না। আসলেও প্রতিটি গরুর জন্য ভাড়া গুনতে হয় ৫০০ টাকা। মুরগী ব্যবসায়ি সোহেল রানা জানান, রাস্তাটি সংস্থার না করায় প্রচÐ ঝাকিতে গাড়ি নষ্ট হওয়া ছাড়াও মুরগি মারা যায়। ফলে অব্যাহত লোকসান গুনছেন তারা।
বালিয়াঘাট বাজারের মুদি ব্যবসায়ি আলমগীর হোসেন জানান, রাস্তার ধুলো বালিতে দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তাটি না ঠিক করেই চলে গেছে ফলে ধুলো বালি থেকে বাঁচতে নিজেরাই রাস্তায় পানি ছিটিয়ে ধুলোবালি থেকে বাচার চেষ্টা করছেন তারা। একই কথা জানালেন, চা দোকানী আশরাফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম। তারা আরো জানান, ধুলোবালির কারণে এখানে আর কেউ বসে না। ফলে কোন বেচা বিক্রিও নেই।
হাড়াভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদেরকে প্রতিনিয়িত বিদ্যালয়ে আসতে হয়। রাস্তা খারাপের কারণে কোন যান বাহন পাওয়া যায় না। পায়ে হেটে বা সাইকেলে আসতে গেল ধুলোয় জামা কাপড় নষ্ট হয়। পড়ালেখা করার মানসিকতা নষ্ট হয়। প্রতিনিই পোশাক নষ্ট হয়। পোশাকের কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসা সম্ভব হয় না। একই কথা জানালেন বিদ্যালয়ে শিক্ষকবৃন্দ।
রাস্তার দু’পাশের বাসিন্দারা জানান, তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের কারণে বাতাসে ভেসে আসা ধুলায় বাড়ি ঘরের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ধুলায় আসবাবপত্র এমনকি খাবারও নষ্ট হচ্ছে। গাছ গাছালিও ধুলায় ভরপুর। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা শ^াসকষ্টসহ নানা ধরণের জটিল রোগে ভুগছেন।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার জবাব মেলেনি।
গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ জানান, কাজটি অর্ধেকেরও বেশি সমাপ্ত হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ সমাপ্ত করার জন্য বেশ কয়েকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আবারো কাজটি শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।