যশোরে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো একই পরিবারের চারজনসহ সাত জনের। এরমধ্যে তিন বছরের জমজ দু’ভাই রয়েছে। যশোর-মাগুরা সড়কের লেবুতলার তেতুলতলা বাজারে পরিবহন ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের বাড়ি যশোর সদরের সুলতানপুর গ্রামে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহগুলো উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন (২৬), ইজিবাইক চালক বাঘারপাড়া উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে মুসা (১৭), যাদবপুর গ্রামের হেলাল মুন্সির তিন বছর বয়সি দু’জমজ ছেলে হাসান ও হোসেন, হেলাল মুন্সি শাশুড়ি মাহিমা (৪০), মাহিমার বোন সাইদুর রহমানের স্ত্রী রাহিমা (৩০), রাহিমার মেয়ে ফাহিমা (৭)। এ সময় হেলাল মুন্সির স্ত্রী সোনিয়া ও তার মেয়ে খাদিজা গুরুতর আহত হয়। আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে সোনিয়াকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার যশোর থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস রূপসা (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৩৮৭৬) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তেঁতুলতলা বাজারে পৌঁছায়। এ সময় বাজারের প্রথম স্প্রিডব্রেকার অতিক্রম করার সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইজিবাইকের পেছনে ধাক্কা দিয়ে সড়কের পাশে উল্টে যায়। এতে ইজিবাইকের চালকসহ সাত জন যাত্রী সড়কে ছিটকে পড়ে। এরপর তাদের গায়ের ওপর ইজিবাইক ও বাসটি আছড়ে পড়লে তারা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তবে, ইজিবাইক চালকের হাসপাতালে আনার পথে মৃত্যু হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
মৃত জমজ শিশুর স্বজনরা জানান, হাসান হুসাইন তার মা সোনিয়ার সাথে তাদের খালাতো বোন খাদিজাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে ইজিবাইকযোগে যশোর শহরের ঝর্ণা ক্লিনিকে যায়। এরপর তারা বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে যশোর-মাগুরা সড়কের লেবুতলা তেঁতুলতলা বাজারে পৌঁছালে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক মুদি দোকানি বলেন, ইজিবাইটিও যশোর থেকে আসছিল। স্প্রিডব্রেকার অতিক্রম করে ডানদিকের তেজরোল গ্রামের রোডে ঢুকতে গেলে পেছনে থেকে বাইকে দ্রুতগতির বাসটি ধাক্কা দেয়। এ সময় বাসের নিচে চাপা পড়ে ইজিবাইক।
বারোবাজার হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও ইজিবাইকটি তাদের হেফাজতে রয়েছে। দুর্ঘটনার পর এক ঘন্টার চেষ্টায় সড়ক থেকে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে নিহত স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।
অপরদিকে, মৃত্যুর খবর জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে যান জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, হাসপাতালারের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।