চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানার তিন দারোগার বিরুদ্ধে ত্রাণ (২০) ও আবু বক্কর (২২) নামে দুই যুবককে আটকিয়ে মাদক মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৬৫ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বাড়ি জীবননগরের পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার কাজিরবেড় গ্রামে ও আবু বক্কর বাড়ি জীবননগর উপজেলার পাথিলা গ্রামে।
গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে জীবননগর ডিগ্রি কলেজের পিছনে এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী দু’যুবকের নিটকস্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধা রাতে ত্রাণ ও আবু বক্কর জীবননগর ডিগ্রি কলেজের পিছনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যায়। এসময় স্থানীয় দালাল শ্রেণীর কয়েক যুবক তাদের দু’জনকে আটকিয়ে মাদকসেবী সাজিয়ে তাদের পরিচিত পুলিশকে খবর দেয়।
জীবননগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপু, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মল্লিক শরিফ ও এএসআই আনোয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই দুই যুবককে আটক করে ও তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ দু যুবককে থানায় না নিয়ে তেঁতুলিয়া মাঠের মধ্যে নিয়ে আটকিয়ে তাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হলে পুলিশ তাদেরকে কি পরিবারকে সংবাদাদিয়ে জানায় রাতের ভিতর টাকা দিতে না পারলে দাদেরকে মাদক দিয়ে চালান দিবে বলে হুমকি প্রদান করে।
এক লাখ টাকা তাদের পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না বলে জানান ওই যুবক। তবে শেষ পর্যন্ত তাও রক্ষা হয়নি। যুবকদের পরিবারের লোকজন ওই স্থানে এলে তাদের সাথে পুলিশের সাথে ৬৫ হাজার টাকায় রফা হয়। যুবকদের পরিবারের লোকজন কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা দিতে গেলেও পুলিশ তাতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত ওই রাতে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজন যুবকদের কাছে থাকা নম্বরে বাকি টাকা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে পাঠায়। তারপর শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে ওই দুই যুবককে ছেড়ে দিলেও তাদের মুঠোফোন রেখে দেয় পুলিশ।
শর্ত দেওয়া হয়, সকালে এসে টাকা বিকাশ ও নগদ থেকে উঠিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে দিয়ে মুঠোফোন ফেরত নিতে হবে। ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের কথামত যুবকরা সকালে এসে বিকাশ ও নগদ থেকে টাকা উঠিয়ে দিয়ে মুঠোফোন ফেরত নেয়।
এদিকে, সোমবার বিকেল থেকে ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জীবননগর উপজেলার এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে যুবকদের ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জীবননগর থানার এএসআই আনোয়ার ও এএসআই মল্লিক শরিফ বলেন, এ ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। পুরো ঘটনাটাই মিথ্যা। এমন কোন ঘটনা সম্পর্কে আমদের কিছু জানা নেই।
অভিযোগ রয়েছে, জীবননগর থানার এএসআই মল্লিক শরিফ এবং এএসআই আনোয়ারের বিরুদ্ধে এর আগেও মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাদকসহ আসামি ছেড়ে দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রশাসনিকভাবে তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় একের পর এক এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেই চলেছেন তারা।
এ বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ বলেন, এ ধরনের ঘটনার কথা শুনেছি। বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। আমি সরেজমিনে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।###