চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার পোলবাগুন্দা গ্রামে স্ত্রী ডালিমা খাতুনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে স্বামী। পুলিশ ঘাতক স্বামীকে আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাত ৯টার দিকে আলমডাঙ্গার রায়লক্ষ্মীপুর গাবতলার মাঠে সেচ পাম্পের পাইপের মধ্যে থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ৩৬ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওলামারি গ্রামের মনছেন আলির মেয়ে ডালিমা খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার পোলবাগুন্দা গ্রামের মৃত ইসলাম মন্ডলের ছেলে ফন্টু মন্ডলের বিয়ে হয়।
তাদের দুই সন্তান মেয়ে সারজিনা খাতুন ও ছেলে জামিরুল ইসলামকে কয়েক বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন। পোলবাগুন্দা গ্রামের স্কুলপাড়ার শের আলির সাবেক স্ত্রী টগি খাতুনের সঙ্গে ফন্টুর দীর্ঘদিন যাবৎ পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় বছর খানেক আগে শের আলি তার স্ত্রী টগি খাতুনকে তালাক দেন।
এরপর ফন্টু মণ্ডল তার স্ত্রী ডালিমার নামে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন করে টগি খাতুনকে নিয়ে পালিয়ে যান। ৭ মাস আগে আবার বাড়ি ফেরেন ফন্টু। এরপর সব কিছু ঠিকঠাক চললেও গত মঙ্গলবার ফন্টু মণ্ডল বাড়ি থেকে নগদ ৭ হাজার টাকা নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে পরকীয়া প্রেমিকা টগিকে টাকা পাঠান। স্ত্রী ডালিমা খাতুন তার স্বামীকে টাকার কথা বললে দুজনের মধ্যে জগড়া হয়। এরপর স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী ফন্টু।
এরপর গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দিনমজুর ফন্টু মণ্ডল স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বের হন। তবে রাতে তিনি বাড়িতে ফিরলেও তার স্ত্রী বাড়িতে ফেরেননি। পরদিন তাকে সকালে কোদাল নিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। দুপুরের পর ফন্টু মণ্ডল গা ঢাকা দেন।
এরপর ছেলে জামিরুল গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার মায়ের খোঁজ করতে থাকে। বিকেলের দিকে পার্শ্ববর্তী রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের গাবতলার মাঠের একটি ভুট্টাখেতে রক্ত ও চুল দেখতে পান গ্রামবাসী। ওই মাঠে সোলার প্যানেলের সেচ পাম্পের পাইপের ভেতরে একটি মরদেহের অংশ বিশেষও দেখা যাচ্ছিল। পাশেই রক্ত ও মাথার চুল পড়ে আছে। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থাকা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। মরদেহ উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের খবর দেওয়া হয়। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে পাইপের মধ্যে থেকে মরদেহ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানায় নেয়া হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফন্টু মণ্ডল তার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করতে আসেন সরোজগঞ্জ বাজারে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই সরোজগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশ তাকে আটক করে।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্ত্রীর হত্যার কথা স্বীকার করেছে। বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে মেলামেশা করায় বাধা দেয়ায় কারণে স্ত্রীকে হত্যার পর সোলার প্যানেলের সেচ পাম্পের পাইপের মধ্যে ফেলে দেয়। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।