চুয়াডাঙ্গা ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ


বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, বিগত ১৫ বছরের যত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে কোন না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা ছিল। আমরা কমবেশি নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। দেখেছি কীভাবে স্থানীয়রা রাজনৈতিক শক্তিটাকে প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে তাদের তাঁবেদার হিসেবে রাজনৈতিক শক্তির মতো ব্যবহৃত হয়েছে। কীভাবে মানুষজনকে হয়রানি করেছে, নিপীড়ন ও হত্যা করেছে। কখনও কখনও ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এগুলোর কোনোটারই কিন্তু সুষ্ঠু বিচার হয়নি।

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে ‘ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরম্যামন নেটওয়ার্ক সত্য, ন্যায় ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনায় সঞ্চালনা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে ড. শামারুহ মির্জা। এসময় তিনি সত্য উন্মোচনে ট্রুথ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন আলোচনা সভায়।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রামুর ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছিল। ১টি বাদী পরবর্তীতে উত্তোলন করে নিয়েছিল। ১৮টি মামলা এখনও চলমান। ২০১২ সালের ওই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পরও কিছু হয়নি। পরে বিচারিক তদন্তে ১৯৮ জনের নাম এসেছিল। যার প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, না হয় যুব লীগ, না হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন কোর্টে দাখিল হলেও প্রকাশ হয়নি। রিট এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। রামুর ঘটনার এখনো বিচার হয়নি। গত ১৫ বছরে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করে ছিল আওয়ামী লীগ।

জুলাই-আগেস্টের বিচার নিয়ে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ফৌজদারি মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া বিচার করা যায় না। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনও জুলাই-আগস্টের ঘটনার সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়নি। ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, আগস্ট মাসের গণহত্যা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে গুম- খুনের পাশাপাশি আরও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। গণগ্রেপ্তার, গণআটক, থানায় এমনকি কারাগারে নির্যাতন হয়েছে। হয়রানি একটা দৈনন্দিন এবং স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ট্যাক্স ফাইল নিয়ে টানাটানি করা, সম্পত্তি নিয়ে সমস্যায় ফেলা, চাকরি নিয়ে ঝামেলায় ফেলা এমনকি সামাজিক হয়রানিও হয়েছে।

তিনি বলেন, বাকস্বাধীনতা নিয়ে আমরা গত পাঁচ মাসে অনেক কথা বলেছি। এখন বলতে পারছি। কিন্তু কীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো? সব তো ডিজিএফআই বা এনএসআই দিয়ে করানো হয়নি। অন্যরাও করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন একটি গোষ্ঠী দেশের ভেতরে-বাইরে বিশেষ করে অনলাইনে সারাক্ষণ একটা অস্বীকারের মধ্যে আছে যে কোনো কিছু ঘটেনি। সবাই নিজেদের খুন করেছে। আশা করছি তারা যদি একটু চুপ করে অন্তত প্রকৃত সত্য স্বীকার করে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ এখনও স্বীকার করছে না। আওয়ামী লীগের অনেকে এখনও ডিনায়ালের মধ্যে আছে। কি পরিমাণ ক্রাইম (অপরাধ) তারা করেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের সোসাইটি ও তরুণ প্রজন্ম একটা রি-কন্সিলিয়েশনের জায়গায় যাবে। আওয়ামী লীগ বলছে হাজার হাজার পুলিশ মারা গেছে। আমরা ৪৪ জনের নাম দিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কেউ পেলে আমাদের দেখান। আওয়ামী লীগ তো তার ন্যারেটিভ দিচ্ছে। তারা মনে করছে এই সরকার অজনপ্রিয় হয়ে গেলে তার ন্যারেটিভ ইম্পোজ করবে।

তিনি বলেন, এবারের যে আন্দোলন, বাংলাদেশের সোসাইটির যে ম্যাচুরিটি এটা অবিশ্বাস্য। ৫ আগস্টের পরে সাত-আটদিন পুলিশ ছিল না। এই সোসাইটিতে তো প্রতিটি ঘরে হানাহানি হওয়ার কথা ছিল। ১৫ থেকে ২০ হাজার লোককে যদি মেরে ফেলা হতো তাহলে আমাদের সোসাইটি, জাতি ড্যামেজ হয়ে যেতো। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অনেক ম্যাচিউরিটি এসেছে। আমাদের সংবাদপত্র উন্নত হয়েছে। আমাদের সত্য অন্বেষণের জন্য জায়গাটা উন্নত হয়েছে। নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, আয়নাঘরের মূল তত্ত্বাবধায়কদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হলেও কেউ গ্রেপ্তার হননি। বেশিরভাগ ক্যান্টেনমেন্টে বসে আছে। কেন? র‌্যাবের ডিজি বলেছে র‌্যাবে আয়নাঘর ছিল। ডিজিএফআই কেন বলে না?

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত। এই ট্রাইব্যুনালের ইতিহাস আছে, এখানে কীভাবে মানুষকে একটার পর একটা ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সুখরঞ্জন বালি নামে একজন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরণ করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যে আদালতে এসব তামাশা হলো এতগুলো বছর ধরে এই কোর্টেই আপনারা আরেকটি বিচার করবেন? সরকারের পক্ষ থেকে জবাব দিতে হবে আমাদের। তাসনিম খলিল বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করার একটি হাতিয়ার ছিল না? বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একজন প্রসিকিউটর আছে তার বিরুদ্ধে শক্ত অভিযোগ রয়েছে। এতগুলো বছর র‌্যাব, ডিজিএফআই, সিটিটিসিকে সাহায্য করেছেন মানুষকে গুম করতে, তুলে নিয়ে আসতে, অপহরণ করতে, খুন করতে। তিনি কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হন।

বার্তাবাজার/এসএইচ

 





Source link

প্রসংঙ্গ :

Powered by WooCommerce

সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ

আপডেটঃ ০১:০৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫


বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, বিগত ১৫ বছরের যত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে কোন না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা ছিল। আমরা কমবেশি নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। দেখেছি কীভাবে স্থানীয়রা রাজনৈতিক শক্তিটাকে প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে তাদের তাঁবেদার হিসেবে রাজনৈতিক শক্তির মতো ব্যবহৃত হয়েছে। কীভাবে মানুষজনকে হয়রানি করেছে, নিপীড়ন ও হত্যা করেছে। কখনও কখনও ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এগুলোর কোনোটারই কিন্তু সুষ্ঠু বিচার হয়নি।

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে ‘ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরম্যামন নেটওয়ার্ক সত্য, ন্যায় ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনায় সঞ্চালনা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে ড. শামারুহ মির্জা। এসময় তিনি সত্য উন্মোচনে ট্রুথ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন আলোচনা সভায়।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রামুর ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছিল। ১টি বাদী পরবর্তীতে উত্তোলন করে নিয়েছিল। ১৮টি মামলা এখনও চলমান। ২০১২ সালের ওই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পরও কিছু হয়নি। পরে বিচারিক তদন্তে ১৯৮ জনের নাম এসেছিল। যার প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, না হয় যুব লীগ, না হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন কোর্টে দাখিল হলেও প্রকাশ হয়নি। রিট এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। রামুর ঘটনার এখনো বিচার হয়নি। গত ১৫ বছরে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করে ছিল আওয়ামী লীগ।

জুলাই-আগেস্টের বিচার নিয়ে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ফৌজদারি মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া বিচার করা যায় না। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনও জুলাই-আগস্টের ঘটনার সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়নি। ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, আগস্ট মাসের গণহত্যা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে গুম- খুনের পাশাপাশি আরও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। গণগ্রেপ্তার, গণআটক, থানায় এমনকি কারাগারে নির্যাতন হয়েছে। হয়রানি একটা দৈনন্দিন এবং স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ট্যাক্স ফাইল নিয়ে টানাটানি করা, সম্পত্তি নিয়ে সমস্যায় ফেলা, চাকরি নিয়ে ঝামেলায় ফেলা এমনকি সামাজিক হয়রানিও হয়েছে।

তিনি বলেন, বাকস্বাধীনতা নিয়ে আমরা গত পাঁচ মাসে অনেক কথা বলেছি। এখন বলতে পারছি। কিন্তু কীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো? সব তো ডিজিএফআই বা এনএসআই দিয়ে করানো হয়নি। অন্যরাও করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন একটি গোষ্ঠী দেশের ভেতরে-বাইরে বিশেষ করে অনলাইনে সারাক্ষণ একটা অস্বীকারের মধ্যে আছে যে কোনো কিছু ঘটেনি। সবাই নিজেদের খুন করেছে। আশা করছি তারা যদি একটু চুপ করে অন্তত প্রকৃত সত্য স্বীকার করে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ এখনও স্বীকার করছে না। আওয়ামী লীগের অনেকে এখনও ডিনায়ালের মধ্যে আছে। কি পরিমাণ ক্রাইম (অপরাধ) তারা করেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের সোসাইটি ও তরুণ প্রজন্ম একটা রি-কন্সিলিয়েশনের জায়গায় যাবে। আওয়ামী লীগ বলছে হাজার হাজার পুলিশ মারা গেছে। আমরা ৪৪ জনের নাম দিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কেউ পেলে আমাদের দেখান। আওয়ামী লীগ তো তার ন্যারেটিভ দিচ্ছে। তারা মনে করছে এই সরকার অজনপ্রিয় হয়ে গেলে তার ন্যারেটিভ ইম্পোজ করবে।

তিনি বলেন, এবারের যে আন্দোলন, বাংলাদেশের সোসাইটির যে ম্যাচুরিটি এটা অবিশ্বাস্য। ৫ আগস্টের পরে সাত-আটদিন পুলিশ ছিল না। এই সোসাইটিতে তো প্রতিটি ঘরে হানাহানি হওয়ার কথা ছিল। ১৫ থেকে ২০ হাজার লোককে যদি মেরে ফেলা হতো তাহলে আমাদের সোসাইটি, জাতি ড্যামেজ হয়ে যেতো। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অনেক ম্যাচিউরিটি এসেছে। আমাদের সংবাদপত্র উন্নত হয়েছে। আমাদের সত্য অন্বেষণের জন্য জায়গাটা উন্নত হয়েছে। নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, আয়নাঘরের মূল তত্ত্বাবধায়কদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হলেও কেউ গ্রেপ্তার হননি। বেশিরভাগ ক্যান্টেনমেন্টে বসে আছে। কেন? র‌্যাবের ডিজি বলেছে র‌্যাবে আয়নাঘর ছিল। ডিজিএফআই কেন বলে না?

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত। এই ট্রাইব্যুনালের ইতিহাস আছে, এখানে কীভাবে মানুষকে একটার পর একটা ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সুখরঞ্জন বালি নামে একজন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরণ করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যে আদালতে এসব তামাশা হলো এতগুলো বছর ধরে এই কোর্টেই আপনারা আরেকটি বিচার করবেন? সরকারের পক্ষ থেকে জবাব দিতে হবে আমাদের। তাসনিম খলিল বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করার একটি হাতিয়ার ছিল না? বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একজন প্রসিকিউটর আছে তার বিরুদ্ধে শক্ত অভিযোগ রয়েছে। এতগুলো বছর র‌্যাব, ডিজিএফআই, সিটিটিসিকে সাহায্য করেছেন মানুষকে গুম করতে, তুলে নিয়ে আসতে, অপহরণ করতে, খুন করতে। তিনি কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হন।

বার্তাবাজার/এসএইচ

 





Source link