বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এই পরিবর্তন কোনো জাদু বা ম্যাজিক নয় যে বলবো আর হয়ে যাবে। এজন্য জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণ, জনগণ ও জনগণ। শুধু তাই নয়, এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সব জুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ নেবো।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জোহান ড্রিম ভ্যালি মিলনায়তনে ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইল জেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুন, গুম, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয় সেটা বিএনপির দ্বারাই হবে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠে-ঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহীদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, ৭১ সালে যুদ্ধের সময় কোনো দল বর্ডার টপকে ভারতে আমোদ-প্রমোদ করে কাটিয়েছে। আবার কোনো দল স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছে। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করাও এই ঈমানের মধ্যে পড়ে।
তিনি বলেন, আমি প্রতিবারই বলছি সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও গত ১৬ বছর গুম-খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশ্যে করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। তালিকা করে শহীদ ও আহতদের খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দলীয়ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করবো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
৭১ সালে একটা দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আরেকটি দল মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করেছে।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের সব নেতাকর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। নিজেদের জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে। নিজেদের শুধরাতে হবে। দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে এক চ্যালেঞ্জ। কাজেই আগামীতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সব প্রতিশোধ নেবো।
আমি মনে করি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এজন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি।
৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধির করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করবো।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পান্নুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মোরশেদ হাসান খান, মীর মো হেলাল উদ্দিন, ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, দপ্তরের মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল উপস্থিত ছিলেন।
ডিএস../