ক্ষমতা দেওয়া-নেওয়ার মালিক। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রাজনীতিবিদদের চাঁদাবাজি, জুলুম না করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড়ে এক পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, “ক্ষমতা দেওয়ারও মালিক আল্লাহ, ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ারও মালিক আল্লাহ। রাজনীতি যারা করেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ— ভাই, বন্ধু, সন্তান, দোস্ত মেহেরবানি করে শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখান। ত্যাগী আহত, পঙ্গু ভাই বোনদের প্রতি সম্মান দেখান। মেহেরবানী করে সমাজবিরোধী কোনো কাজ করবেন না। চাঁদাবাজি করবেন না। দখলবাণিজ্য করবেন না। মামলা বাণিজ্য করবেন না। ঘুষখোরী করবেন না। মানুষেল উপর জুলুম করবেন না। মেহেরবানি করে ছেড়ে দেন আল্লাহ আপনাদের ইজ্জত বাড়িয়ে দিবে। আল্লাহ আপনাদের রিজিকেও বরকত দিবেন। হায়াতেও বরকত দিবেন। আর যদি এগুলো অব্যাহত রাখেন তাহলে জেনে রাখুন আমরা শহীদদের রক্ত ছুয়ে শপথ নিয়েছি এই জঞ্ঝালগুলো সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শহীদদের পিতাদের কথা দিয়েছি আপনাদের সন্তানরা যে কারণে জীবন দিয়েছিলো সেই লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। তারা চেয়েছিলো একটা পরিচ্ছন্ন সমাজ। যেখানে চুরি, অপরাধ থাকবে না। চাঁদাবাজি, খুন, লুটপাট, ধর্ষণ থাকবে না। নতুন নতুন আয়না ঘর আর তৈরি হবে না। রচিত হবে মানবিক বাংলাদেশ, মানুষের বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ।
আহতদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, “আমাদের ৩৪ হাজার ভাই বোন ও সন্তান পঙ্গু হয়ে গেছেন। আমাদের হিসাব অনুযায়ী ৫০২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্ধ হয়ে গেছেন। দুনিয়ার সৌন্দর্য আর তারা দেখবে না। ৭০০ এর অধিক মানুষ এক চোখ গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেক চোখ হারাতে বসেছে। ২৫০ এর মতো মানুষ মেরুদন্ডে গুলি লেগেছে তারা এখন অচল হয়ে গেছে। হয় ঘরে বিছানায় না হয় হাসপাতালের পরে আছেন। হয় দুই পা অবশ না হয় চার হাত পা অবশ হয়ে আছে। তারা উঠে বসতে পারেন না। খাওয়া,নামাজ সবকিছু বিছানায় করতে হয়। তারা অন্যের উপর নির্ভরশীল। আপনারা তাদের প্রতি সদয় হবেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের সন্তানদের স্লোগানই আমাদের স্লোগান ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’। একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার একটি শপথ নেই। যদি দেখেন বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে তাহলে আমাদের ভালোবাসবেন। দোয়া দিবেন। আর অন্যায় করলে আমাদের সমালোচনা করবেন। আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চাই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল চ্যালেঞ্জ ও ষড়যন্ত্র একসাথে মোকাবেলা করব। যুবসমাজরা তোমরা আমাকে বুড়েগা মনে করবে না, আমিও যুবক। ইনকিলাবের যুদ্ধে, অনাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তোমাদের সাথে আমি থাকবো ইন শা আল্লাহ।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর রংপুর তাজহাট থানা আমীর মাওলানা রবিউল ইসলাম, রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যাপক মাহাবুর রহমান বেলাল, সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক কাজল। রংপুর মহানগর শিবিরের সভাপতি, রংপুর জেলা শিবিরের সভাপতি প্রমুখ।