ফেরি চালুর ফলে দুই আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রার মধ্যে সড়কপথে দূরত্ব কমেছে ৭০ কিলোমিটার। এর ফলে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।
ছবি: টিবিএস
“>
ছবি: টিবিএস
ফেরি চালুর ফলে দুই আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রার মধ্যে সড়কপথে দূরত্ব কমেছে ৭০ কিলোমিটার। এর ফলে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।
ছবি: টিবিএস
“>
ছবি: টিবিএস
উত্তাল বলেশ্বর নদীতে রায়েন্দা-মাছুয়া নৌরুটে ফেরি চালু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হলো।
ফেরি চালুর ফলে দুই আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রার মধ্যে সড়কপথে দূরত্ব কমেছে ৭০ কিলোমিটার। এর ফলে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর লাখ লাখ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এ ফেরি সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাগেরহাট সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর দুই তীরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও দ্রুততর করতে রায়েন্দা-বড় মাছুয়া ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে রায়েন্দা পর্শ্বনে রাস্তা নির্মাণ শুরু হয়। অক্টোবরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ এই ফেরিতে পার হবে। পা হবে সহস্রাধিক যানবাহনও। স্থানীয়দের দাবি, প্রতি ঘণ্টায় যেন ফেরি চালু রাখা হয়।
ফেরি উদ্বোধনী ট্রিপের চালক আব্দুর রউফ জানান, মাছুয়া থেকে রায়েন্দা ঘাটে ভিড়তে ৪০ মিনিট সময় লেগেছে। অন্যান্য সময় হয়ত ৪০ থেকে ৫০ মিনিট লাগতে পারে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নে বাড়ি মালতি রায়ের। থাকেন বাগেরহাটের শরণখোলায়। তিনি বলেন, ‘স্বামীর চাকরির সুবাদে শরণখোলায় থাকতে হয় আমাদের। এত নিকটে নিজেদের বাড়ি থাকলেও সহজে যেতে পারি না। কারণ এত বড় নদী ট্রলারে পাড়ি দিতে ভয় লাগে। এখন ফেরি হওয়াতে খুব সহজেই আমরা নিয়মিত বাড়ি যেতে পারব।’
একই উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের ওসমান, মাধুরী রানী, চুন্নু মিয়াসহ কয়েক জন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি ফেরির। কারণ খেয়া বা ট্রলারযোগে উত্তাল এই নদী পাড়ি দিতে আমাদের নানান সমস্যা হত। অবশেষে ফেরি চালু হওয়াতে বাস, ট্রাক, এ্যাম্বুলেন্স, অটো, ভ্যান-রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। আমাদের অনেক সুবিধা হবে। সহজে মঠবাড়িয়া থেকে রায়েন্দা, বাগেরহাট, খুলনা-ঢাকা যেতে পারব।’
স্থানীয়রা জানান, ফেরি চালু হওয়াতে তাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। ফেরির সুবাদে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, তুষখালি, ইন্দুরকানি, বরগুনার পাথরঘাটাসহ পুরো বরিশালের সাথে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। আগে খেয়ায় অনেক টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। তাছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ও লাগত বেশি। এছাড়া উত্তাল বলেশ্বরে ট্রলারে যেতে ঝুঁকিও ছিল অনেক। এখন তারা নিরাপদে, কম খরচে যাতায়াত করতে পারবো।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক সম্পর্কসহ নানা কারণে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার সাথে পাশ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু এই যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে ছিল বলেশ্বর নদী। বলেশ্বর নদীতে ফেরি চালু হওয়ায় এই এলাকার মানুষের যোগযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।’
বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, এই ফেরি সার্ভিস চালুর ফলে পায়রা থেকে মোংলা বন্দরের মধ্যে নতুন যোগাযোগ স্থাপন হবে। বলেশ্বর নদীর দুই তীরের মানুষ স্বল্প সময় এবং অল্প ব্যয়ে তাদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন।
ফেরির সুবিধা থাকায় দুই পাড়ের মানুষের জন্য যাত্রীবাহী গন পরিবহনও চালু হবে বলে জানান তিনি।
বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ঘাটে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন ও পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. রুস্তম আলী ফরাজী এই ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।