চুয়াডাঙ্গা ০৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের টোপ গিলে শাহ জাফরের সব কুলই হারা


ফরিদপুর-১ আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগ থেকে দুইবার এবং জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে একবার করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে সবশেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনএম থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারান।

স্থানীয়রা বলেন, ফরিদপুর-১ আসনে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। তাই জনপ্রিয়তাও ছিল। কিন্তু শেষে নামসর্বস্ব একটি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিয়ে সব কূল হারিয়েছেন এই বাঘা রাজনীতিক।

এদিকে গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে তাকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। সম্প্রতি ফরিদপুরে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএনপি।

প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম একজন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। আওয়ামী লীগের টোপ গিলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে আজ তিনি হতেন এ অঞ্চলের বাঘা নেতা। অথচ তিনি এখন এলাকায় নিষিদ্ধ।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দেন শাহ আবু জাফর। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বিএনএম তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। বিএনএমে যোগ দিয়েই আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন তিনি। তখন কাছের মানুষদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফরিদপুর-১ আসনের এমপি বানাবে। এজন্য তিনি নতুন দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ওই আসনে দলীয় প্রার্থী দিলে জামানত হারান আবু জাফর। তিনি ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পান। এ ঘটনায় মনোকষ্টে এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন তিনি। এছাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের সাপোর্ট নেওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরাও তাকে বয়কট করেন। সবশেষ ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

গত ৩০ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তা সংলগ্ন পুরনো বাসস্ট্যান্ডে শেখ হাসিনার ফাঁসি ও তার দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সমাবেশ করে বোয়ালমারী উপজেলা কৃষক দল। ওই সমাবেশ থেকে শাহ আবু জাফরকে হাসিনার দোসর আখ্যা দিয়ে ফরিদপুরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক।

তিনি বলেন, আমাদের দলে একজন বেঈমান ছিলেন। তার নাম শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। এই লোভী উচ্ছিষ্টভোগী নেতা বিএনপির সঙ্গে বেঈমানি করে রাতের আঁধারে কিংস পার্টি খুলে হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাই তাকে এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

এদিকে গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একদল দুর্বৃত্ত পৌর সদর থানার সামনে উপজেলা প্রশাসন মার্কেটে অবস্থিত বিএনএমের অফিস উদ্বোধনের এক দিন পরই তালা ভেঙে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা।

হামলাকারীরা অফিসের চেয়ার টেবিল, আসবাবপত্র ও শাহ আবু জাফরের ছবি ভাঙচুর করে। এর আগের দিন বিকেলে উপজেলা বিএনএমএর কার্যালয়টি উদ্বোধন করেছিলেন শাহ আবু জাফর। উদ্বোধনের ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা স্লোগান দিতে থাকে ‘খুনি হাসিনার দোসর শাহ জাফর নিপাত যাক’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, বিএনএম নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। এ দেশে গণতন্ত্রকে সুগম করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই সমান সুযোগ থাকা উচিত। আমার অফিস ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এটা করেছে, তারা ঠিক করেনি।

বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর দলটিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে পথচলা শুরু করেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। পরে ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে ফরিদপুর-১ আসন থেকে এবং ১৯৮৮ সালে একই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ২০০৩ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর ২০০৫ সালে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

এন কে বি নয়ন/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

প্রসংঙ্গ :

Powered by WooCommerce

আওয়ামী লীগের টোপ গিলে শাহ জাফরের সব কুলই হারা

আপডেটঃ ১২:৫৫:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪


ফরিদপুর-১ আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগ থেকে দুইবার এবং জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে একবার করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে সবশেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনএম থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারান।

স্থানীয়রা বলেন, ফরিদপুর-১ আসনে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। তাই জনপ্রিয়তাও ছিল। কিন্তু শেষে নামসর্বস্ব একটি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিয়ে সব কূল হারিয়েছেন এই বাঘা রাজনীতিক।

এদিকে গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে তাকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। সম্প্রতি ফরিদপুরে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএনপি।

প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম একজন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। আওয়ামী লীগের টোপ গিলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে আজ তিনি হতেন এ অঞ্চলের বাঘা নেতা। অথচ তিনি এখন এলাকায় নিষিদ্ধ।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দেন শাহ আবু জাফর। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বিএনএম তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। বিএনএমে যোগ দিয়েই আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন তিনি। তখন কাছের মানুষদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফরিদপুর-১ আসনের এমপি বানাবে। এজন্য তিনি নতুন দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ওই আসনে দলীয় প্রার্থী দিলে জামানত হারান আবু জাফর। তিনি ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পান। এ ঘটনায় মনোকষ্টে এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন তিনি। এছাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের সাপোর্ট নেওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরাও তাকে বয়কট করেন। সবশেষ ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

গত ৩০ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তা সংলগ্ন পুরনো বাসস্ট্যান্ডে শেখ হাসিনার ফাঁসি ও তার দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সমাবেশ করে বোয়ালমারী উপজেলা কৃষক দল। ওই সমাবেশ থেকে শাহ আবু জাফরকে হাসিনার দোসর আখ্যা দিয়ে ফরিদপুরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক।

তিনি বলেন, আমাদের দলে একজন বেঈমান ছিলেন। তার নাম শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। এই লোভী উচ্ছিষ্টভোগী নেতা বিএনপির সঙ্গে বেঈমানি করে রাতের আঁধারে কিংস পার্টি খুলে হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাই তাকে এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

এদিকে গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একদল দুর্বৃত্ত পৌর সদর থানার সামনে উপজেলা প্রশাসন মার্কেটে অবস্থিত বিএনএমের অফিস উদ্বোধনের এক দিন পরই তালা ভেঙে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা।

হামলাকারীরা অফিসের চেয়ার টেবিল, আসবাবপত্র ও শাহ আবু জাফরের ছবি ভাঙচুর করে। এর আগের দিন বিকেলে উপজেলা বিএনএমএর কার্যালয়টি উদ্বোধন করেছিলেন শাহ আবু জাফর। উদ্বোধনের ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা স্লোগান দিতে থাকে ‘খুনি হাসিনার দোসর শাহ জাফর নিপাত যাক’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, বিএনএম নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। এ দেশে গণতন্ত্রকে সুগম করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই সমান সুযোগ থাকা উচিত। আমার অফিস ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এটা করেছে, তারা ঠিক করেনি।

বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর দলটিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে পথচলা শুরু করেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। পরে ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে ফরিদপুর-১ আসন থেকে এবং ১৯৮৮ সালে একই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ২০০৩ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর ২০০৫ সালে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

এন কে বি নয়ন/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link