আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরের পর চলতি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার (১.৭২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা এক হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চলতি মাসের বাকি ২৪ দিনে (৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) এই হারে এলে মাস শেষে গত চার মাসের মতো ডিসেম্বরেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে। গত বছরের ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা ছিল গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা ছিল গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।চতুর্থ মাস অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন)।
অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) হিসাবে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ (১১.১৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৮৮০ কোটি ৮৪ লাখ (৮.৮১ বিলিয়ন) প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পাঁচ মাস ৭ দিনে (১ জুলাই থেকে ৭ ডিসেম্বর) ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৩৭ লাখ (১১.৭৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিট্যান্স প্রবাহেও গতি ফেরে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে। কোভিড মহামারির সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে।
সংকট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত কয়েক মাসে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।