এ তিনটি জিনিসের (মানুষের দেহ, মন ও এনার্জি বা শক্তি) সমন্বয়ে আমাদের শরীর চলে। এর কোনো একটি যদি ঠিকঠাক কাজ না করে তাহলে আমাদের শরীর ঠিকভাবে কাজ করবে না। আর ইয়োগা বা যোগব্যায়ামের কাজ হলো শরীর, মন ও আত্মার সমন্বয় ঘটিয়ে শান্তি ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করা।
যোগব্যায়ামের ইংরেজি নাম ইয়োগা, যার সাধারণ অর্থ ইউনিয়ন বা মিলন। সুতরাং শরীর, মন ও আত্মার মিলনে প্রাচীনকাল থেকে এ উপমহাদেশে শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে যোগব্যায়াম বা ইয়োগা।
ইয়োগা কোনও একটি ব্যায়ামের নাম নয়। এটি তিন ধরনের চর্চার সমন্বয়—আসন, প্রাণায়াম ও ধ্যান। ইয়োগার আসনেরও আছে অনেক ধরণ।
আজকাল ফিটনেসের ক্ষেত্রে নিয়মিত যোগব্যায়ামকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন আধুনিক ফিজিওথেরাপিস্টরাও। এক্ষেত্রে ফিজিওলোজিস্ট মাইশা মোমতাজ একজন সুস্থ ও ফিটফাট মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে নিয়মিত ইয়োগা বা যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন।
* নিয়মিত ইয়োগা বা যোগব্যায়াম করলে শরীরে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির সঠিকভাবে সঞ্চার ঘটে। যার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালনও সঠিকভাবে বজায় থাকে। অন্যদিকে, এই কারণের জন্য শরীরে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা থাকলে তাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে। অন্যদিকে রক্ত সঞ্চালনের জন্য শরীরের পাশাপাশি ত্বকও ভাল থাকে।
* যাদের হাঁপানির টান বা শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে ধীরে ধীরে তাদের সমস্যাও কমে যায় এবং সচল থাকে।
* নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে হজম ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। যাদের গ্যাস, অম্বলের সমস্যা রয়েছে তাদের ফিট থাকতে যোগব্যায়ামের বিকল্প নেই। পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করলে শরীরে একাধিক রোগ কমে যায়। পাচনতন্ত্র যত সঠিকভাবে কাজ করবে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করাও তত সহজ হবে। সুতরাং ওজন যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে যোগব্যায়াম অবশ্যই করতে হবে।
* শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সোডিয়াম না থাকলে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়, যেমন রক্তচাপ কমে যাওয়া, থাইরয়েড ইত্যাদি। অন্যদিকে সোডিয়াম মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে খাদ্যের পাশাপাশি যোগব্যায়াম। যোগব্যায়াম রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে হ্রাস পায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। অন্যদিকে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে যোগাসন।
* ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের মত সমস্যা দেখা দেয় শরীরে। এই কারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের সব সময় যোগ ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
* যোগ ব্যায়াম করলে যে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। লাল রক্তকণিকার পরিমাণ সঠিক থাকার অর্থ হল হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকা। এর ফলে অ্যানিমিয়ার মত রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেহেতু বাড়ে, যোগাসন করলে রক্তে লাল লোহিত কণিকার পরিমাণও বেড়ে যায়।
* বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের নানান জায়গায় ব্যথা দেখা যায়। যোগাসন করলে আর্থারাইটিসের সমস্যা থেকেও মুক্ত পাওয়া যায়। অন্যদিকে, মাইগ্রেনের মত স্নায়ুর সমস্যাকেও প্রতিরোধ করে যোগাসন।
* এছাড়াও ইয়োগার নানা আসন শরীরের বিভিন্ন পেশি ও অঙ্গের শক্তি এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত যোগচর্চার মাধ্যমে অসুস্থ শরীর রোগমুক্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সুস্থ শরীর আরও তেজ ও সতেজ হয়ে উঠে।