চুয়াডাঙ্গা ০১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে এত ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটল যেভাবে

নির্ধারিত সময়েই পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার জনপ্রিয় ট্রেনগুলোর মধ্যে অন্যতম করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বহু মানুষ প্রতিদিন ওই ট্রেনে চড়ে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যান চিকিৎসা করাতে।

 

ট্রেনে থাকা যাত্রীদের কয়েকজনের বক্তব্য, শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার পর ওড়িশার বালাশোর স্টেশন পেরনোর পর আচমকাই বিকট শব্দ। ক্রমশ গতি কমতে থাকে করমণ্ডলের। একাধিক বগি ডান দিকে হেলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে। গতি কমার সঙ্গে সঙ্গেই বগি হেলে যাওয়া টের পেয়েই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ততক্ষণে আরও খানিকটা হেলে যায় বগি। প্রায় এক কিলোমিটার পথ এভাবেই আস্তে আস্তে এগোতে থাকে ট্রেনটি।

 

জানা গেছে, করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কয়েকটি বগি গিয়ে পড়ে পাশের লাইনের ওপর। ডাউন লাইনের ওপর আড়াআড়ি গিয়ে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরা। ততক্ষণে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে পড়েছে। একটি মালবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে চলছিল। কোনোভাবে করমণ্ডল এক্সপ্রেস সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে সেই মালগাড়ির পেছনে।

 

মালবাহী ট্রেনের পেছনে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ধাক্কার আঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালবাহী ট্রেনের বগির ওপরে উঠে যায়। পেছনে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটির বেশিরভাগ বগি।

 

ঠিক ওই সময়ই উল্টো দিক থেকে আসছিল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন। যা লাইনের ওপর আড়াআড়িভাবে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরার ওপর দিয়ে চলে যায়।

 

ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডলের বগির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয় হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক বগি। ছিটকে পড়েন ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীরা।

 

দুর্ঘটনার অন্য একটি ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় রেলকর্মীদের একটি অংশের দাবি, প্রথমে লাইনচ্যুত হয় বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হাওড়াগামী ট্রেনের কয়েকটি কামরা আপ লাইনে এসে পড়ে আড়াআড়িভাবে।

সেই সময় আপ লাইনে ছুটে আসছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হাওড়াগামী ট্রেনের লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দ্রুতগতিতে ছুটে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে অন্য পাশের লাইনে (থার্ড লাইন) দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনে ধাক্কা মারে। ধাক্কার আঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপরে উঠে যায়।

 

দুর্ঘটনার জেরে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে একটি অংশ আটকে পড়েন ছিটকে পড়েন কামরার মধ্যেই। প্রাথমিকভাবে ট্রেনের যাত্রীরাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। অন্ধকারে সমস্যা বাড়ে।

দুর্ঘটনা যে এলাকায় হয়েছে সেই এলাকাটি নির্জন। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় মানুষ ছুটে এসে উদ্ধারকাজে নামতে পারেননি। কিন্তু একটু সময় যেতেই হাজির হতে থাকেন আশপাশের বাসিন্দারা।

ট্রেনের যাত্রীদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। কিন্তু সেই সময় মূল সমস্যা হয় আলোর অভাব। ট্রেনের কোনো আলো জ্বলছিল না। তার ওপর নির্জন এলাকা হওয়ায় নেই কোনো সড়কবাতিও।

 

টর্চ ও মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখতে পান, এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দেহাংশ, যাত্রীদের জিনিসপত্র, খাবার। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বগি থেকে ভেসে আসতে থাকে কান্না, চিৎকারের শব্দ।

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় রেলের উদ্ধারকারী দল। নেমে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ।

ওড়িশায় দুর্ঘটনার জেরে হাওড়া, শালিমার থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়। রেল সূত্রের দাবি, ৫১টি ট্রেন ঘুরপথে বা সংক্ষিপ্ত পথে চালানো হচ্ছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথও বদলে দেওয়া হয়।

 

বাতিল হওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরীগামী জগন্নাথ এক্সপ্রেস, পুরী এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেইল। শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেসও বাতিল করা হয়েছে। হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে শালিমার-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস ও শালিমার-হায়দরাবাদ ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে।

সূত্র : আনন্দবাজার

Powered by WooCommerce

ভারতে এত ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটল যেভাবে

আপডেটঃ ০৮:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩

নির্ধারিত সময়েই পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার জনপ্রিয় ট্রেনগুলোর মধ্যে অন্যতম করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বহু মানুষ প্রতিদিন ওই ট্রেনে চড়ে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যান চিকিৎসা করাতে।

 

ট্রেনে থাকা যাত্রীদের কয়েকজনের বক্তব্য, শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার পর ওড়িশার বালাশোর স্টেশন পেরনোর পর আচমকাই বিকট শব্দ। ক্রমশ গতি কমতে থাকে করমণ্ডলের। একাধিক বগি ডান দিকে হেলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে। গতি কমার সঙ্গে সঙ্গেই বগি হেলে যাওয়া টের পেয়েই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ততক্ষণে আরও খানিকটা হেলে যায় বগি। প্রায় এক কিলোমিটার পথ এভাবেই আস্তে আস্তে এগোতে থাকে ট্রেনটি।

 

জানা গেছে, করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কয়েকটি বগি গিয়ে পড়ে পাশের লাইনের ওপর। ডাউন লাইনের ওপর আড়াআড়ি গিয়ে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরা। ততক্ষণে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে পড়েছে। একটি মালবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে চলছিল। কোনোভাবে করমণ্ডল এক্সপ্রেস সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে সেই মালগাড়ির পেছনে।

 

মালবাহী ট্রেনের পেছনে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ধাক্কার আঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালবাহী ট্রেনের বগির ওপরে উঠে যায়। পেছনে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটির বেশিরভাগ বগি।

 

ঠিক ওই সময়ই উল্টো দিক থেকে আসছিল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন। যা লাইনের ওপর আড়াআড়িভাবে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরার ওপর দিয়ে চলে যায়।

 

ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডলের বগির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয় হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক বগি। ছিটকে পড়েন ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীরা।

 

দুর্ঘটনার অন্য একটি ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় রেলকর্মীদের একটি অংশের দাবি, প্রথমে লাইনচ্যুত হয় বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হাওড়াগামী ট্রেনের কয়েকটি কামরা আপ লাইনে এসে পড়ে আড়াআড়িভাবে।

সেই সময় আপ লাইনে ছুটে আসছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হাওড়াগামী ট্রেনের লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দ্রুতগতিতে ছুটে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে অন্য পাশের লাইনে (থার্ড লাইন) দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনে ধাক্কা মারে। ধাক্কার আঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপরে উঠে যায়।

 

দুর্ঘটনার জেরে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে একটি অংশ আটকে পড়েন ছিটকে পড়েন কামরার মধ্যেই। প্রাথমিকভাবে ট্রেনের যাত্রীরাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। অন্ধকারে সমস্যা বাড়ে।

দুর্ঘটনা যে এলাকায় হয়েছে সেই এলাকাটি নির্জন। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় মানুষ ছুটে এসে উদ্ধারকাজে নামতে পারেননি। কিন্তু একটু সময় যেতেই হাজির হতে থাকেন আশপাশের বাসিন্দারা।

ট্রেনের যাত্রীদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। কিন্তু সেই সময় মূল সমস্যা হয় আলোর অভাব। ট্রেনের কোনো আলো জ্বলছিল না। তার ওপর নির্জন এলাকা হওয়ায় নেই কোনো সড়কবাতিও।

 

টর্চ ও মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখতে পান, এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দেহাংশ, যাত্রীদের জিনিসপত্র, খাবার। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বগি থেকে ভেসে আসতে থাকে কান্না, চিৎকারের শব্দ।

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় রেলের উদ্ধারকারী দল। নেমে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ।

ওড়িশায় দুর্ঘটনার জেরে হাওড়া, শালিমার থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়। রেল সূত্রের দাবি, ৫১টি ট্রেন ঘুরপথে বা সংক্ষিপ্ত পথে চালানো হচ্ছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথও বদলে দেওয়া হয়।

 

বাতিল হওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরীগামী জগন্নাথ এক্সপ্রেস, পুরী এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেইল। শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেসও বাতিল করা হয়েছে। হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে শালিমার-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস ও শালিমার-হায়দরাবাদ ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে।

সূত্র : আনন্দবাজার