চুয়াডাঙ্গা ০১:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবননগরে হত্যা রহস্য উদঘাটন,ফুফাতো ভাই গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের মজনু খাঁ ওরফে ফজলু (২৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার সময় জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে ফজলুর ফুফাতো ভাই জব্বারকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে হত্যার মূল রহস্য। উদ্ধার করা হয়েছে ফজলুর পাখিভ্যান ও মোবাইল ফোন।

 

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জব্বার জানিয়েছে যে, কোমলপানীয় স্পিডের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে ফজলুকে সে হত্যা করেছে। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য ফজলুকে হত্যা করে তাঁর পাখিভ্যান ও মোবাইল ফোন বিক্রি করে টাকা নেওয়ায় ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। হত্যার পর সে চেষ্টা করেছে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার। গ্রেফতারকৃত জব্বার মিয়া (২৯) সন্তোষপুর গ্রামের ছেলে।

 

পুলিশ জানায়, জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সন্তোষপুরের গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে মজনু খাঁ ওরফে ফজলু এবং একই গ্রামের দলিল উদ্দিনের ছেলে জব্বার সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। তাঁরা ওই গ্রামের একই পাড়ায় বসবাস করতো এবং তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দুই ভাই উপজেলার দেহাটি গ্রামের পোল ফ্যাক্টিরিতে কাজ করতো এবং নিয়মিত ফজলুর পাখিভ্যানে যাতায়াত করতো। মঙ্গলবার (২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪) দুপুরে তাঁরা পোল ফ্যাক্টরি থেকে কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসে। একইদিন রাতে এশার আজানের পর ফজলুর পাখিভ্যানে করে তাঁরা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

 

সারারাত ফজলু বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়। একাধিক বার ফজলুর মোবাইল ফোনে কল করলেও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। বুধবার সকালে পরিবারের লোকজন লোকমুখে জানতে পারে ফজলু জীবননগর থানাধীন মনোহরপুর গ্রামের ভৈরব নদের পাড়ে মোশারফ গাইনের পানের বরজ সংলগ্ন কাঁচা রাস্তার পাশে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে এবং তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। জীবিত আছে ভেবে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

 

ওইদিনই ফজলুর পিতা কাশেম আলী বাদী হয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জীবননগর থানা পুলিশকে জানান। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানাতে না পারায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাতে নিহতের লাশ দাফন করা হয় নিজ গ্রামের কবরস্থানে।

 

এদিকে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে জীবননগর থানার এসআই ফিরোজ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে জব্বারকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মিথ্যা ও কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে চেষ্টা করে জব্বার। তবে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং জানায় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানোর পর ঝিনাইদহের ডাকবাংলা এলাকা হতে উদ্ধার করা হয় ফজলুর পাখিভ্যান ও মোবাইল ফোন।

 

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে রবিবার (২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪) জীবননগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে তাকে চুয়াডাঙ্গার বিজ্ঞ আদালতে সোপার্দ করা হয়েছে। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রসংঙ্গ :

নির্বাচন বিলম্বের গোপন উদ্দেশ্য থাকলে পরিণাম হবে ভয়াবহ

avashnews

Powered by WooCommerce

জীবননগরে হত্যা রহস্য উদঘাটন,ফুফাতো ভাই গ্রেফতার

আপডেটঃ ১০:৪০:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের মজনু খাঁ ওরফে ফজলু (২৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার সময় জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে ফজলুর ফুফাতো ভাই জব্বারকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে হত্যার মূল রহস্য। উদ্ধার করা হয়েছে ফজলুর পাখিভ্যান ও মোবাইল ফোন।

 

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জব্বার জানিয়েছে যে, কোমলপানীয় স্পিডের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে ফজলুকে সে হত্যা করেছে। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য ফজলুকে হত্যা করে তাঁর পাখিভ্যান ও মোবাইল ফোন বিক্রি করে টাকা নেওয়ায় ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। হত্যার পর সে চেষ্টা করেছে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার। গ্রেফতারকৃত জব্বার মিয়া (২৯) সন্তোষপুর গ্রামের ছেলে।

 

পুলিশ জানায়, জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সন্তোষপুরের গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে মজনু খাঁ ওরফে ফজলু এবং একই গ্রামের দলিল উদ্দিনের ছেলে জব্বার সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। তাঁরা ওই গ্রামের একই পাড়ায় বসবাস করতো এবং তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দুই ভাই উপজেলার দেহাটি গ্রামের পোল ফ্যাক্টিরিতে কাজ করতো এবং নিয়মিত ফজলুর পাখিভ্যানে যাতায়াত করতো। মঙ্গলবার (২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪) দুপুরে তাঁরা পোল ফ্যাক্টরি থেকে কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসে। একইদিন রাতে এশার আজানের পর ফজলুর পাখিভ্যানে করে তাঁরা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

 

সারারাত ফজলু বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়। একাধিক বার ফজলুর মোবাইল ফোনে কল করলেও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। বুধবার সকালে পরিবারের লোকজন লোকমুখে জানতে পারে ফজলু জীবননগর থানাধীন মনোহরপুর গ্রামের ভৈরব নদের পাড়ে মোশারফ গাইনের পানের বরজ সংলগ্ন কাঁচা রাস্তার পাশে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে এবং তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। জীবিত আছে ভেবে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

 

ওইদিনই ফজলুর পিতা কাশেম আলী বাদী হয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জীবননগর থানা পুলিশকে জানান। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানাতে না পারায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাতে নিহতের লাশ দাফন করা হয় নিজ গ্রামের কবরস্থানে।

 

এদিকে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে জীবননগর থানার এসআই ফিরোজ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে জব্বারকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মিথ্যা ও কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে চেষ্টা করে জব্বার। তবে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং জানায় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানোর পর ঝিনাইদহের ডাকবাংলা এলাকা হতে উদ্ধার করা হয় ফজলুর পাখিভ্যান ও মোবাইল ফোন।

 

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে রবিবার (২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪) জীবননগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে তাকে চুয়াডাঙ্গার বিজ্ঞ আদালতে সোপার্দ করা হয়েছে। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।