চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুজন আলীর (৩০) গলিত লাশ উদ্ধারের দুইদিনের মাথায় পুলিশ ৩ ঘাতককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
ঘাতকেরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সুজন আলীকে পালাক্রমে বলাৎকারের পর তাকে হত্যা করে বিলের কচুরিপানার মধ্যে লাশ ফেলে দেয়। ঘটনার ২০ দিনের মাথা পুলিশ গত ২৬ অক্টোবর সুজন আলীর লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেন।
উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের সুজন আলী জীবননগর পৌর কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। সুজন আলী অবিবাহিত এবং মেয়েলী স্বভাব প্রকৃতির ছিলেন বলে এলাকাবাসীর দাবী। তিনি জীবননগর পৌর এলাকার গোপালনগর গ্রামে একটি বাড়ীতে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সুজন আলীর সাথে বিভিন্ন মানুষের গোপন অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। একইভাবে গত ৬ অক্টোবর রাতে সুজন তার ভাড়া বাড়ী থেকে মেদিনীপুর গ্রামের মৃত আনার মোল্যার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক রিজ্জাক (৫৫), শাখারিয়া গ্রামের মৃত ওয়াদ আলীর ছেলে মজিবর রহমান (৪০) ও মৃত আমিন উদ্দিনের ছেলে মহিউদ্দিন মহিরের ডাকে সাড়া দিয়ে গোয়ালপাড়া মোড়ে যান। সেখান থেকে তাকে মাঠের ভেতরে নিয়ে তারা পালাক্রমে সুজনকে বলাৎকার করেন। এতে সুজন অসুস্থ হয়ে পড়লে মারা গেছে চিন্তা করে তারা নিড়ানি দিয়ে বুকে ও শরীরের বিভিন্ন আঘাত করে মৃত্যু পুরোপুরি নিশ্চিত করে। এ অবস্থায় রিজ্জাক, মহি ও মজিবর ঘটনা আড়াল করতে সুজনের লাশ মেদিনীপুর মাঠের পার্শ্ববর্তী ঘাড়কাঠি বিলের কচুরিপানার ভেতরে ফেলে চলে যায়।
এদিকে পরিবারের সদস্যরা শিক্ষক সুজন আলী নিখোঁজ হওয়ায় কয়েক দিন পর জীবননগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করতে থাকে। কিন্তু কোথাও কোন হদিস না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় গত ২৬ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাঠে কাজ করা লোকজন ঘাড়কাঠি বিলের কচুরিপানার ভেতরে গলিত পচা কঙ্কালসার লাশ দেখতে পান। এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুজনের গলিত লাশ উদ্ধার করেন। লাশটি কঙ্কালসার হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের প্রথমদিকে শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হয়। পরবর্তীতে কঙ্কালসারের শরীরে থাকা সার্জিক্যাল রড দেখে সুজনের লাশ বলে তারা নিশ্চিত হন।
এ ঘটনায় পুলিশ নড়েচড়ে বসে। অনুসন্ধান করতে থাকে ঘটনার সাথে কারা জড়িত। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত রিজ্জাক, মহি ও মজিবরকে গ্রেফতার করে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা স্কুল শিক্ষক সুজন আলীকে বলাৎকারের পর হত্যা করে লাশ ঘাড়কাঠি বিলের কচুরিপানার ভেতরে লুকিয়ে রাখে বলে স্বীকার করে।
শুরুতেই আটক রিজ্জাকের প্রতি নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ থাকলেও পুলিশের গড়িমসির কারণে ঘটনার অনেক পরে সুজন আলীর কঙ্কালসার গলিত লাশ পরিবারের ভাগ্যে জুঁটলো। রিজ্জাক আলীকে পুলিশ ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে আটক করলেও দায়সারা জিজ্ঞাসাবা করে ছেড়ে দেয়।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন হোসেন বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিজ্জাক, মজিবুর ও মহিউদ্দিন মহিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।