৭২-এর সংবিধান বাতিলের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড় সংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)-এর দলীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নুর একথা বলেন।
তিনি বলেছেন, বিভিন্ন সময় সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। এটা বাতিলের প্রয়োজন নেই। বরং সবার সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা যায়। জাতি একবারই স্বাধীন হয়। ’৭১-এর সঙ্গে ’২৪-এর তুলনা চলে না। সংবাদ সম্মেলনে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন দলটির নেতারা। এ সময় নতুন বাংলাদেশ গঠনে অতীতের সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে সকল ব্যবধান ভুলে গণঅধিকার পরিষদকে এক করা হয়েছে। দু-একজন এর বাইরে থাকতে পারে। তিনি আশা করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এরা সবাই যুক্ত হবেন।
২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন রেজা কিবরিয়া। একপর্যায়ে নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানের নেতৃত্বে দলটির একাংশ এবং মিয়া মশিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বে অপরাংশ গঠিত হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নুর-রাশেদের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। এরপর গণঅধিকার পরিষদের (মশিউজ্জামান-ফারুক) সদস্য সচিব ফারুক হাসান গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)-এ যোগদান করেন। এদিকে দলীয় সংহতিবিরোধী তৎপরতা পরিচালনার অভিযোগে ফারুক হাসানকে অব্যাহতি ও তার দলীয় প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফারুক হাসান বলেন, গণঅধিকার পরিষদ তরুণদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মাঝখানে কিছু মতপার্থক্যের কারণে গণঅধিকার পরিষদ আলাদাভাবে পথ চলতে শুরু করে। কিন্তু ২০২৪ সালের বিপ্লবে গণঅধিকার পরিষদের উভয়ে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাই দেশ ও জাতির প্রয়োজনে গণঅধিকার পরিষদের উভয় নেতারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ অনুভব করার জায়গা থেকে আজকে থেকে গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গণঅধিকার পরিষদ আজকে থেকে একটিই, যার ভিত্তি কোটা আন্দোলন। নুরুল হক নুর আরও বলেন, কোটা আন্দোলন ও জুলাই আন্দোলনে আহত সবাইকে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে সরকারের নানা দুর্বলতা লক্ষ করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। আওয়ামী হাইকমান্ডের লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে, সচিবালয়ে আগুন আমাদের হতাশ করছে। শিক্ষার্থীরা একটি ঘোষণাপত্রের উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা সেটিকে সর্বজনীন করার উদ্যোগ নিয়ে জাতিকে একটি বিভাজন থেকে রক্ষা করেছেন। আগামীর নতুন বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশকে পিছনে নিয়ে যাবে। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তিতেই দেশ চালাতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমরা রাজপথে ছিলাম। একসঙ্গে পথ চলতে গিয়ে আমাদের মতপার্থক্য হয়েছে, সেই মতপার্থক্যের আজ অবসান ঘটতে শুরু হয়েছে। জনগণের কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশ গঠনে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে আমরা অতীতের ন্যায় একীভূত হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তিনি জাতিকে আরেকটি বিভাজনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সকল দল, সংগঠন ও অংশীজনদের নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে করতে হবে। কারণ এই গণঅভ্যুত্থানের মালিক এই দেশের ১৮ কোটি জনগণ। জনগণকে বাদ দিয়ে এই দেশে আর কোনো রাজনীতি হবে না।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, ৪৩তম বিসিএস বাদ পড়াদের গেজেটভুক্ত করতে হবে। শেখ হাসিনার সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে বিএনপি-জামায়াত করার কারণে অনেকের গেজেট আটকানো হতো; ঠিক একই কায়দায় এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও আটকানো হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন পুরোপুরি বাদ দেওয়া দরকার। আমরা দাবি জানাচ্ছি, নির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতীত কারো গেজেট যেন আটকানো না হয়। ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়া ১৬৮ জনকে গেজেটভুক্ত করা না হলে, বাদপড়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে যদি রাজপথে নামতে হয়- সেটিও আমরা করবো। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনই ছিল কোটা আন্দোলনের মূল স্পিরিট, সেখানে কোনো অন্যায়-বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।
গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ, নির্বাহী কমিটির নেতারা।
বার্তাবাজার/এস এইচ