চুয়াডাঙ্গা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাদ্যে মজুদ বাড়াতে ভারতের বিকল্প বাজার খুঁজছে সরকার

খাদ্যের মজুদ বাড়াতে পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে চাল আমদানি করা হবে। আমন সংগ্রহসহ বিভিন্নভাবে খাদ্যের মজুদ ২০ লাখ টনে উন্নীত করতে চায় সরকার। প্রয়োজনে ভারতের সঙ্গেও চাল আমদানির ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। মূলত সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলমান থাকায় বিকল্প উৎস থেকে আমদানি বাড়িয়ে খাদ্যের মজুদ বাড়ানোই সরকারের লক্ষ্য।

 

বর্তমানে সাত লাখ টন চালসহ খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে ১১ লাখ টনের ওপরে, যা গত বছরের তুলনায় আড়াই লাখ টন কম। পাকিস্তান ছাড়াও মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের সঙ্গেও চাল আনার ব্যাপারে যোগাযোগ চলছে। দরদামে বনিবনা হলে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে প্রয়োজনীয় চাল আমদানি করা হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

 

সূত্র আরো জানায়, চলতি আমন মৌসুমে দেশের কৃষকদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে অন্তত ১৫ লাখ টন চাল আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া রাশিয়া, ইউক্রেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও বুলগেরিয়া থেকে কেনা হবে কয়েক লাখ টন গম। ফলে আমন সংগ্রহ শেষে সরকারি গুদামে মজুদের পরিমান দাঁড়াবে ২০ লাখ টনের ওপরে।

 

এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান। গতকাল সোমবার নিজ দপ্তরে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গতবারের চেয়ে মজুদ বলা হচ্ছে আড়াই লাখ টন কম। বাস্তবে তা নয়। কারণ গত পাঁচ মাসে আমরা টিসিবিকে আড়াই লাখ টন চাল দিয়েছি, যা অতীতে কখনো দিইনি। এ ছাড়া ফেনী-নোয়াখালীসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় বাড়তি বরাদ্দ দিতে হয়েছে।

 

এগুলো থাকলে গত বছরের চেয়ে মজুদ বেশি হতো। ২০২১ সালে এই সময়ে মজুদ ছিল মাত্র আড়াই লাখ টন। সে তুলনায় ঝুঁকিতে নেই। ভারতের সঙ্গে চাল আমদানি নিয়ে কথা হচ্ছে। কোনো কারণে তারা না দিলে বিকল্প হিসেবে অন্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। আমন সংগ্রহ শেষে মজুদ ২০ লাখ টনের ওপরে উঠবে। তাই এ মুহূর্তে উদ্বেগের কিছু নেই।’

 

জানা গেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশে মোট খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৯ হাজার ৮৫৭ টন। এর মধ্যে চালই ছিল ১২ লাখ ৯৭ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন খাদ্যশস্যের মোট মজুদ নেমে এসেছে (৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত) ১১ লাখ ১১ হাজার ৩৫৭ টনে। এর মধ্যে চালের মজুদ রয়েছে সাত লাখ টন। গমের মজুদ আছে চার লাখ ১১ হাজার টন। সে অনুযায়ী, চার মাসে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ কমেছে ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আগে স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে এবং চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের এক কোটি পরিবার প্রতি মাসে পাঁচ কেজি করে চাল পায়। এ খাতে বরাদ্দ না থাকলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে টিসিবিকে চাল সরবরাহ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের হঠাৎ বন্যায় সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত প্রায় চার লাখ টনের ওপরে চালের বরাদ্দ দেওয়ায় মজুদ কমে গেছে।

 

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র আরো বলছে, বর্তমানে আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলছে। সরকার ১০ লাখ টন আমন চাল সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে। বন্যায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না-ও হতে পারে। তাই মজুদ বাড়াতে সরকার আমদানির দিকে ঝুঁকছে। এরই মধ্যে চারটি দরপত্রের মাধ্যমে দুই লাখ টন চাল এবং তিনটি দরপত্রের মাধ্যমে দেড় লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ভারতের চাল আসতে দেরি হওয়ায় আরো এক লাখ টন চাল মায়ানমার থেকে আনার অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এর বাইরেও বিকল্প হিসেবে মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আনার আলোচনা চলছে। ভিয়েতনাম ও মায়ানমার থেকে আনার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও ১৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ জন্য সব ধরনের শুল্ক তুলে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এগুলো সম্পন্ন হলে সরকারি গুদামে চালের টইটম্বুর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

এ প্রসঙ্গে গত ২৯ নভেম্বর খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার নিজ দপ্তরে কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের চাল আমদানির মূল উৎস ভারত। তাদের সঙ্গেও আমরা কাজ করছি। এর বাইরেও মায়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম চলছে। ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান থেকে (জিটুজি) চাল আনার বিষয়েও আলোচনা চলছে। ইউক্রেন ও আর্জেন্টিনা থেকে তিনটি গমের চালান আসবে। বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে আমদানিতে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। তার পরও অনেক দেশ কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত চাল-গম দেয় না—এমন নজির আছে। তাই আমাদের বিকল্প পথও খোলা রাখতে হয়। কোনো কারণে প্রতিশ্রুত চাল-গম না পাওয়া গেলে বিকল্প উৎস থেকে সেটা পূরণ করা হবে।-কালের কণ্ঠ

mtnews24

প্রসংঙ্গ :

Powered by WooCommerce

খাদ্যে মজুদ বাড়াতে ভারতের বিকল্প বাজার খুঁজছে সরকার

আপডেটঃ ১১:৫১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

খাদ্যের মজুদ বাড়াতে পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে চাল আমদানি করা হবে। আমন সংগ্রহসহ বিভিন্নভাবে খাদ্যের মজুদ ২০ লাখ টনে উন্নীত করতে চায় সরকার। প্রয়োজনে ভারতের সঙ্গেও চাল আমদানির ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। মূলত সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলমান থাকায় বিকল্প উৎস থেকে আমদানি বাড়িয়ে খাদ্যের মজুদ বাড়ানোই সরকারের লক্ষ্য।

 

বর্তমানে সাত লাখ টন চালসহ খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে ১১ লাখ টনের ওপরে, যা গত বছরের তুলনায় আড়াই লাখ টন কম। পাকিস্তান ছাড়াও মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের সঙ্গেও চাল আনার ব্যাপারে যোগাযোগ চলছে। দরদামে বনিবনা হলে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে প্রয়োজনীয় চাল আমদানি করা হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

 

সূত্র আরো জানায়, চলতি আমন মৌসুমে দেশের কৃষকদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে অন্তত ১৫ লাখ টন চাল আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া রাশিয়া, ইউক্রেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও বুলগেরিয়া থেকে কেনা হবে কয়েক লাখ টন গম। ফলে আমন সংগ্রহ শেষে সরকারি গুদামে মজুদের পরিমান দাঁড়াবে ২০ লাখ টনের ওপরে।

 

এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান। গতকাল সোমবার নিজ দপ্তরে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গতবারের চেয়ে মজুদ বলা হচ্ছে আড়াই লাখ টন কম। বাস্তবে তা নয়। কারণ গত পাঁচ মাসে আমরা টিসিবিকে আড়াই লাখ টন চাল দিয়েছি, যা অতীতে কখনো দিইনি। এ ছাড়া ফেনী-নোয়াখালীসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় বাড়তি বরাদ্দ দিতে হয়েছে।

 

এগুলো থাকলে গত বছরের চেয়ে মজুদ বেশি হতো। ২০২১ সালে এই সময়ে মজুদ ছিল মাত্র আড়াই লাখ টন। সে তুলনায় ঝুঁকিতে নেই। ভারতের সঙ্গে চাল আমদানি নিয়ে কথা হচ্ছে। কোনো কারণে তারা না দিলে বিকল্প হিসেবে অন্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। আমন সংগ্রহ শেষে মজুদ ২০ লাখ টনের ওপরে উঠবে। তাই এ মুহূর্তে উদ্বেগের কিছু নেই।’

 

জানা গেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশে মোট খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৯ হাজার ৮৫৭ টন। এর মধ্যে চালই ছিল ১২ লাখ ৯৭ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন খাদ্যশস্যের মোট মজুদ নেমে এসেছে (৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত) ১১ লাখ ১১ হাজার ৩৫৭ টনে। এর মধ্যে চালের মজুদ রয়েছে সাত লাখ টন। গমের মজুদ আছে চার লাখ ১১ হাজার টন। সে অনুযায়ী, চার মাসে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ কমেছে ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আগে স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে এবং চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের এক কোটি পরিবার প্রতি মাসে পাঁচ কেজি করে চাল পায়। এ খাতে বরাদ্দ না থাকলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে টিসিবিকে চাল সরবরাহ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের হঠাৎ বন্যায় সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত প্রায় চার লাখ টনের ওপরে চালের বরাদ্দ দেওয়ায় মজুদ কমে গেছে।

 

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র আরো বলছে, বর্তমানে আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলছে। সরকার ১০ লাখ টন আমন চাল সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে। বন্যায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না-ও হতে পারে। তাই মজুদ বাড়াতে সরকার আমদানির দিকে ঝুঁকছে। এরই মধ্যে চারটি দরপত্রের মাধ্যমে দুই লাখ টন চাল এবং তিনটি দরপত্রের মাধ্যমে দেড় লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ভারতের চাল আসতে দেরি হওয়ায় আরো এক লাখ টন চাল মায়ানমার থেকে আনার অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এর বাইরেও বিকল্প হিসেবে মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আনার আলোচনা চলছে। ভিয়েতনাম ও মায়ানমার থেকে আনার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও ১৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ জন্য সব ধরনের শুল্ক তুলে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এগুলো সম্পন্ন হলে সরকারি গুদামে চালের টইটম্বুর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

এ প্রসঙ্গে গত ২৯ নভেম্বর খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার নিজ দপ্তরে কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের চাল আমদানির মূল উৎস ভারত। তাদের সঙ্গেও আমরা কাজ করছি। এর বাইরেও মায়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম চলছে। ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান থেকে (জিটুজি) চাল আনার বিষয়েও আলোচনা চলছে। ইউক্রেন ও আর্জেন্টিনা থেকে তিনটি গমের চালান আসবে। বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে আমদানিতে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। তার পরও অনেক দেশ কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত চাল-গম দেয় না—এমন নজির আছে। তাই আমাদের বিকল্প পথও খোলা রাখতে হয়। কোনো কারণে প্রতিশ্রুত চাল-গম না পাওয়া গেলে বিকল্প উৎস থেকে সেটা পূরণ করা হবে।-কালের কণ্ঠ

mtnews24