শিল্প মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) একটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারী প্রতিষ্ঠান। বিসিআইসির মাধ্যমে পরিচালিত মিরপুরের বিসিআইসি কলেজসহ সারা দেশে বিসিআইসি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত কলেজ সমূহে প্রায় ১৫০ জন কলেজ শিক্ষক কর্মরত আছেন। ১৯৮৮ সালের অধ্যাদেশ ও প্রবিধানমালার আলোকে বিসিআইসির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ন্যায় কলেজের শিক্ষকগণও একই নিয়মে, মর্যাদায় ও বেতন ভাতায় নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে চাকুরী করে থাকেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায় দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর যাবৎ বিসিআইসির সকল কলেজ শিক্ষক পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে হতাশা, ক্ষোভ ও বিক্ষুব্ধ হয়ে অমানবিক ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন যা বিসিআইসির সম্পূর্ণ অসৎ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বেআইনী বলে মনে করেন তারা সকলেই।
বিসিআইসির কলেজ শিক্ষকগণ বিসিআইসির অন্যান্য কর্মকর্তাদের ন্যায় একই প্রশাসন ক্যাডার ভুক্ত হলেও কেবল তাদের ক্ষেত্রেই চলমান রয়েছে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করার মত নিবর্তন মূলক আচরণ এবং এর জন্য দায়ী বিসিআইসির প্রধান কার্যালয়ের উদাসীনতা ও শিক্ষকদের প্রতি বিরূপ ও হীনমন্য আচরণ। বার বার কলেজ শিক্ষকগণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন নিবেদন করলেও এর কোন প্রতিকার না পেয়ে ২০১২ সালে ১৬ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত এমন ২২ জন প্রভাষক মহামান্য হাইকোর্টে রিট-পিটিশন দায়ের করলে তা আপীল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায় এবং মামলাটির রায় আবেদনকারীদের পক্ষে যায় ২০১৮ সালে। তবুও তা বাস্তবায়ন করেনি বিসিআইসি। অবশেষে আদালত অবমাননার মামলা করলে আদালতের দন্ড হতে রেহাই পেতে বিসিআইসি ঐ ২২ জনকে মাত্র ২০ দিনের ভূতাপেক্ষতা দিয়ে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি দেয়। অথচ আদালতের রায় অনুসারে যা দেওয়ার কথা ছিল ২০১২ সাল থেকে সেটা তারা করেনি কারণ ঐ ২২ জন ২০১৫ সালের নবম জাতীয় পে-স্বেলের সুবিধাপ্রাপ্ত হবে, এই অসৎ চিন্তা মাথায় রেখে বিসিআইসি এ টা করে। এটাও একধরণের চরম বৈষম্য এবং আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। এসবের কোন তোয়াক্কাই করে না বিসিআইসি শুধু কলেজ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। অন্য কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে নয়।
জানা যায় , ২০১০ সালের (২০/০৫/২০১০) ১২৯৬ তম বোর্ড সভায় শিক্ষকদের যথাযথ পদোন্নতি সংক্রান্ত একটি সেট-আপ (ঝবঃ ঁঢ়) অনুমোদন করা হয় এবং পরবর্তীতে ০৩/০৪/২০১২ তারিখের ১৮৮৩ তম বোর্ড সভায় অনুমোদিত ঐ সেট-আপ টি বিসিআইসির প্রবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু বিসিআইসির উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বিসিআইসির কলেজ শিক্ষকগণ দীর্ঘ ২৪ বছর যাবত পদোন্নতি বঞ্চিত। কিন্তু এরই মধ্যে বিসিআইসির অন্যান্য কর্মকর্তাগণ যথাক্রমে ২০১৮ সালে ৪৪২ জন, ২০১২ সালে ৩৯০ জন ও অতিসম্প্রতি ৪২২ জন পদোন্নতি নিয়েছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। কিন্তু শিক্ষকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় , এবং প্রমাণ আছে যে, তিন চার বছর পর পরই বিসিআইসির অন্যান্য কর্মকর্তাগণ প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রতিবছর প্রমোশন নেন। এবং একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যান পদোন্নতি পেতে পেতে ডিপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার কখনো বা চিফ ইঞ্জিনিয়ার। কেবল প্রমোশন নাই শুধু কলেজ শিক্ষকদের। বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা যায় অল্প কিছু দিন আগে বিসিআইসির প্রধান কার্যালয় হতে প্রবিধাণ মালার সংশোধনীর জন্য একটি প্রস্তাবনা ও খসড়া সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিসিআইসির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বেতন ভাতার সুবিধাদি ইত্যাদির যথাযথ উল্লেখ থাকলেও শিক্ষকদের বিষয়ে কোন কিছুই বা কোন বিষয়ই উল্লেখ নাই। এতে শিক্ষকরা ভীষণ ভাবে ক্ষুব্ধ।
ভূক্তভোগী শিক্ষকরা জানায়, বিসিআইসির প্রধান কার্যালয় সহ সকল স্তরের কর্মকর্তাদের বৈষম্যের অবসান ঘটলেও কেবল কলেজ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন আরো বেড়েই চলছে। তারা এই দুর্বিষহ বৈষম্য থেকে অনতিবিলম্বে মুক্তি চায়। স্কুল কলেজের অভিভাবক ও অভিজ্ঞমহলের ধারণা বিসিআইসি পরিচালিত স্কুল কলেজ গুলোতে চলমান বৈষম্য ও অসন্তোষ চলতে থাকলে ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সহ অশুভ কোন ফলাফল বয়ে আনতে পারে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। তারাও শিক্ষকদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হওয়া সমর্থন করে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু ও কার্যকরী দৃষ্টি ও পদক্ষেপ কামনা করে পদোন্নতি বঞ্চিত কলেজ শিক্ষকগণ।