চুয়াডাঙ্গা ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণঅভ্যুত্থানে আহত এতিম হাসানকে থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে সরকার


স্বৈরাচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে গুলি-পিটুনিতে রাস্তায় মস্তিষ্ক বেরিয়ে আসা হাসানকে (২১) থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে সরকার। আজ রাতে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় তাকে নেওয়ার জন্য থাইল্যান্ড থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে।

আজ রাত সাড়ে ১০টায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়ার কথা রয়েছে। তার চিকিৎসায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাবদ খরচ ৪৩ লাখ ও হাসপাতালে খরচ ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ খরচ আরও বাড়বে। সরকার তার চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করবে।

হাসানকে বিদায় জানানোর জন্য এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো আবু জাফর, জাতীয় নাগরিক কমিটির ডা. মো. আব্দুল আহাদ, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান।

আহত হাসান একজন ইয়াতিম। বাবা মারা গেছেন বেশ আগেই। পড়াশোনা করানোর মত কেউ ছিল না। কিন্তু নিজের অদম্য উৎসাহে হিফজ সম্পন্ন করে হাফেজ হন। কম বয়সে সংসারের ঘানি তার কাঁধে পড়ে। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল থেকে চট্টগ্রাম যান তারা। সেখানে মা গার্মেন্টসে চাকরি নেন। কিন্তু দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বিপদে পড়েন তিনি। তাদের পড়াশোনা করাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। মায়ের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করেন হাসান। নিজে থেকে মাকে বলেন তাকে পড়ানোর দরকার নেই। স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় হাসান। সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের কাজ শিখতে থাকে হাসান। কাজে গেলেও মন পড়ে থাকে স্কুল-কলেজে। কাজ শেষ হলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত সে। ছাত্র আন্দোলন হলে বন্ধুদের সাথে যোগ দেয় সে।

হাসানের বন্ধু মো. জাকির বলেন, ৪ আগস্ট সকাল ১০টায় হাসানসহ আমরা বন্ধুরা নিউমার্কেট থেকে আন্দোলন শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে টাইগার পাশ মোড়ে আসি। আমাদের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পড়ে যায়। আমরা পালিয়ে আসি। পেছনে থেকে ছাত্রলীগ আক্রমণ করে। আমার পাশে ছিল হাসান। আমার বাসা ছিলো পাশেই। তাদের হামলার মুখে আমি ও হাসান দৌড় দেই। আমি কিছুটা এগিয়ে যাই। বাসায় ঢুকে দেখি হাসান সাথে নেই। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি হাসান মাটিতে পড়ে আছে। ওকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক দিয়ে পেটাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওরা চলে গেলে আমি কাছে গিয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখি। দেখি গুলি লেগে তার মাথার হাড় ভেঙ্গে গেছে। ব্রেনের কিছু অংশ রাস্তায় পড়ে আছে। কতটা পশু হলে মানুষকে এভাবে মারা যায়। দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাই। সেখানে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ৫ তারিখে তার অপারেশন হয়। ৩ সেপ্টেম্বর তাকে সিএমএইচে আনা হয়।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসায় উন্নতি না হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে হাসানের ছোটবোন সুবর্ণা বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। হাসানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই। হাসান যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসে।

এমএইচ/জেবি



সুত্র ঢাকামেইল

প্রসংঙ্গ :

Powered by WooCommerce

গণঅভ্যুত্থানে আহত এতিম হাসানকে থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে সরকার

আপডেটঃ ০২:৩১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪


স্বৈরাচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে গুলি-পিটুনিতে রাস্তায় মস্তিষ্ক বেরিয়ে আসা হাসানকে (২১) থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে সরকার। আজ রাতে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় তাকে নেওয়ার জন্য থাইল্যান্ড থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে।

আজ রাত সাড়ে ১০টায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়ার কথা রয়েছে। তার চিকিৎসায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাবদ খরচ ৪৩ লাখ ও হাসপাতালে খরচ ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ খরচ আরও বাড়বে। সরকার তার চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করবে।

হাসানকে বিদায় জানানোর জন্য এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো আবু জাফর, জাতীয় নাগরিক কমিটির ডা. মো. আব্দুল আহাদ, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান।

আহত হাসান একজন ইয়াতিম। বাবা মারা গেছেন বেশ আগেই। পড়াশোনা করানোর মত কেউ ছিল না। কিন্তু নিজের অদম্য উৎসাহে হিফজ সম্পন্ন করে হাফেজ হন। কম বয়সে সংসারের ঘানি তার কাঁধে পড়ে। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল থেকে চট্টগ্রাম যান তারা। সেখানে মা গার্মেন্টসে চাকরি নেন। কিন্তু দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বিপদে পড়েন তিনি। তাদের পড়াশোনা করাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। মায়ের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করেন হাসান। নিজে থেকে মাকে বলেন তাকে পড়ানোর দরকার নেই। স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় হাসান। সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের কাজ শিখতে থাকে হাসান। কাজে গেলেও মন পড়ে থাকে স্কুল-কলেজে। কাজ শেষ হলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত সে। ছাত্র আন্দোলন হলে বন্ধুদের সাথে যোগ দেয় সে।

হাসানের বন্ধু মো. জাকির বলেন, ৪ আগস্ট সকাল ১০টায় হাসানসহ আমরা বন্ধুরা নিউমার্কেট থেকে আন্দোলন শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে টাইগার পাশ মোড়ে আসি। আমাদের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পড়ে যায়। আমরা পালিয়ে আসি। পেছনে থেকে ছাত্রলীগ আক্রমণ করে। আমার পাশে ছিল হাসান। আমার বাসা ছিলো পাশেই। তাদের হামলার মুখে আমি ও হাসান দৌড় দেই। আমি কিছুটা এগিয়ে যাই। বাসায় ঢুকে দেখি হাসান সাথে নেই। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি হাসান মাটিতে পড়ে আছে। ওকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক দিয়ে পেটাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওরা চলে গেলে আমি কাছে গিয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখি। দেখি গুলি লেগে তার মাথার হাড় ভেঙ্গে গেছে। ব্রেনের কিছু অংশ রাস্তায় পড়ে আছে। কতটা পশু হলে মানুষকে এভাবে মারা যায়। দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাই। সেখানে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ৫ তারিখে তার অপারেশন হয়। ৩ সেপ্টেম্বর তাকে সিএমএইচে আনা হয়।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসায় উন্নতি না হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে হাসানের ছোটবোন সুবর্ণা বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। হাসানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই। হাসান যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসে।

এমএইচ/জেবি



সুত্র ঢাকামেইল