চুয়াডাঙ্গা ০৭:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি-জামায়াতের ভোটের প্রস্তুতি


  • ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা ভোট শীঘ্রই
  • সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন থেকেই গণসংযোগ করছেন
  • শুরু হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন, জানালো সরকার
  • ২০২৬-এর মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস
  • ভোটারদের কাছে টানতে দলগুলোর সিরিজ কর্মসূচি

ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। জাতীয় নির্বাচনের আগে খুব শীঘ্রই স্থানীয় নির্বাচনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় ভোটের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরগুলো টাইমলাইনে চলে আসেন। যার যার অবস্থান থেকে সব দলই সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছে। জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। একইভাবে ড. ইউনূস সরকারকেও চাপ অব্যাহত রেখেছে যাতে খুব শীঘ্রই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ব্যক্তিরা নিয়মিত সভা-সেমিনার থেকে দাবি জানাচ্ছেন যাতে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। একইভাবে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, সংস্কার শেষে খুব শীঘ্রই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।  

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর  সমপ্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি বা এর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সোচ্চার হয় তখন অতিসমপ্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি বা এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। তিন মাসেরও বেশি সময় পর হলেও সরকারের একজন উপদেষ্টা নির্বাচনের টাইম লাইন সম্পর্কে ধারণা দেয়ায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। সেই সঙ্গে নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করেছে। দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও মহানগর সফরে গিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরাও গণসংযোগ জোরদার করছেন। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাইও শুরু করে দিয়েছে।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এই কমিশন সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। সেই সঙ্গে কমিশন গঠনের পর নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে নতুন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে না পারলে বেইমানি হবে। এত রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা সম্ভব নয়। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। জীবনে কোনো দিন আমি ফেল করিনি। আশা করি এবারও ফেল করব না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেন দলীয় কর্মকাণ্ডে অধিকতর সক্রিয় হন তারই অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায়ই ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিএনপি ছাড়া আরও বেশক’টি দল নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এবার বিএনপির সঙ্গে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। তারাও ঢাকাসহ সারা দেশে ভোটের রোডম্যাপ এঁকে নেতাকর্মীদের ব্যস্ত রেখেছেন নির্বাচনি কাজে। 

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত  রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছে। এ জন্য গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জনসমর্থনকে আরও দৃঢ় করার ওপর। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন দলগুলোর নেতাকর্মীরা। পূজার সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সব মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশের পূর্বাঞ্চল ও সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময় সাহায্য নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন নেতাকর্মীরা। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারগুলোকে সহায়তা দিয়েছেন। 
শুরু হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময়ে আসা সুধীজনরা। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচনি সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি নিজেও এর পক্ষে আছেন বলে জানান। গতকাল শনিবার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নাগরিক সমাজের অভিমত হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া উচিত। কারণ, স্থানীয় নির্বাচন করার ফলে আমাদের কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে। টেস্ট হয়ে যাবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে সাপোর্ট দরকার হবে, তাও নিশ্চিত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন একটা, আর স্থানীয় নির্বাচন পাঁচটা। পাঁচটার মধ্যে তিনটা হলো ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা। জাতীয় নির্বাচন ন্যাশন-ওয়াইড হয়। আর সিটি হয় লোকালাইজড। জেলা পরিষদে আসলে কোনো নির্বাচন হয় না। এখন স্থানীয় নির্বাচনের পূর্বে যদি জাতীয় নির্বাচনে যাই, তাহলে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা ঝুলে যাবে। কারণ এখন আমাদের যে চিন্তা-ভাবনা, স্থানীয় নির্বাচন যেটা আছে সেটা কোনো সিস্টেম না। আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, আলাদা আলাদা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। কোনো কমপ্রিহেন্সিভ সিস্টেম নাই। এই সংস্কারের বড় কাজ হবে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করে দেয়া। এখন সিস্টেম কী হবে? যে সিস্টেম আছে সেটা আইয়ুব খানের ভাবনায় রেখে করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের ১০ বছর পরে উপজেলা, তার ১০ বছর পর উপজেলা পরিষদ হয়েছে। এতে কমিপ্রহেন্সিভ কিছু হয়নি। এই সিস্টেম করার জন্য এখন মোক্ষম সময়। কেননা, বেশিরভাগ স্থানীয় সরকার কিন্তু নেই। কেবল ইউপি আছে। কাজেই ছবি আঁকার এটাই সময়। আমরা যদি সিস্টেম করতে পারি যে, একটা কমিপ্রহেন্সিভ আইন হবে। সেই আইনের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠান চলে আসবে। এতে একটা তফসিল দিয়ে সবগুলো নির্বাচন করতে পারব।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগে যেমন মেয়র নির্বাচন করেছি, সিটি নির্বাচন বলছি না। সব আলো পড়ছে মেয়রের ওপর। অন্য স্থানীয় সরকারেও একই অবস্থা। স্থানীয় সরকার যেখানে সফল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও সরাসরি মেয়র, চেয়ারম্যান নির্বাচন হয় না। কাউন্সিলর ও মেম্বার নির্বাচন হয়। তারা পরিষদে গিয়ে নির্বাহী কমিটি তৈরি করে। আমরা তেমন সিস্টেম তৈরি করতে চাই। তাহলে নির্বাচনটা অনেক লেস এক্সপেন্সিভ হবে। অনেক ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে। এত লোকবল লাগবে না। একটা হিসাব করে আমি দেখেছি, গত কমিশন যে স্থানীয় নির্বাচন করেছে এতে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯ থেকে ২০ লাখ লোক লেগেছে। ২২৫ দিনের মতো সময় লেগেছে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে যদি পার্লামেন্টারি সিস্টেম নিয়ে আসি। তাহলে ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে একই সিস্টেম করতে পারব। তাহলে খরচ চলে আসবে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে। লোক লাগবে আট লাখ। সময় লাগবে ৪৫ দিন। তাহলে এই সিস্টেমে যাওয়ার জন্য অধ্যাদেশ করে যদি যান তাহলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব। বর্তমানে যা আছে তা দিয়ে যদি স্থানীয় নির্বাচন করতে চান, তাহলে পাঁচটা আইন দিয়ে পাঁচটা নির্বাচন করতে হবে। এতে জাতীয় নির্বাচনের আগে তা করা সম্ভব কি-না, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। 

তোফায়েল আহমেদ বলেন, পার্লামেন্টের যে মেম্বার তিনি স্থানীয় কোনো দায়িত্বের মধ্যে পড়েন না। তার কাজ হচ্ছে সরকারি কাজগুলো জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। উনি যদি সমস্ত উন্নয়ন করেন তাহলে তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হলো। তিনি জবাবদিহিতা করাবেন কাকে। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী এমপিরা এটা পারে।
 





সুত্র আমার সংবাদ

প্রসংঙ্গ :

Powered by WooCommerce

বিএনপি-জামায়াতের ভোটের প্রস্তুতি

আপডেটঃ ০৮:৫৯:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪


  • ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা ভোট শীঘ্রই
  • সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন থেকেই গণসংযোগ করছেন
  • শুরু হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন, জানালো সরকার
  • ২০২৬-এর মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস
  • ভোটারদের কাছে টানতে দলগুলোর সিরিজ কর্মসূচি

ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। জাতীয় নির্বাচনের আগে খুব শীঘ্রই স্থানীয় নির্বাচনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় ভোটের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরগুলো টাইমলাইনে চলে আসেন। যার যার অবস্থান থেকে সব দলই সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছে। জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। একইভাবে ড. ইউনূস সরকারকেও চাপ অব্যাহত রেখেছে যাতে খুব শীঘ্রই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ব্যক্তিরা নিয়মিত সভা-সেমিনার থেকে দাবি জানাচ্ছেন যাতে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। একইভাবে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, সংস্কার শেষে খুব শীঘ্রই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।  

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর  সমপ্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি বা এর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সোচ্চার হয় তখন অতিসমপ্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি বা এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। তিন মাসেরও বেশি সময় পর হলেও সরকারের একজন উপদেষ্টা নির্বাচনের টাইম লাইন সম্পর্কে ধারণা দেয়ায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। সেই সঙ্গে নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করেছে। দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও মহানগর সফরে গিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরাও গণসংযোগ জোরদার করছেন। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাইও শুরু করে দিয়েছে।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এই কমিশন সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। সেই সঙ্গে কমিশন গঠনের পর নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে নতুন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে না পারলে বেইমানি হবে। এত রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা সম্ভব নয়। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। জীবনে কোনো দিন আমি ফেল করিনি। আশা করি এবারও ফেল করব না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেন দলীয় কর্মকাণ্ডে অধিকতর সক্রিয় হন তারই অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায়ই ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিএনপি ছাড়া আরও বেশক’টি দল নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এবার বিএনপির সঙ্গে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। তারাও ঢাকাসহ সারা দেশে ভোটের রোডম্যাপ এঁকে নেতাকর্মীদের ব্যস্ত রেখেছেন নির্বাচনি কাজে। 

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত  রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছে। এ জন্য গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জনসমর্থনকে আরও দৃঢ় করার ওপর। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন দলগুলোর নেতাকর্মীরা। পূজার সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সব মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশের পূর্বাঞ্চল ও সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময় সাহায্য নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন নেতাকর্মীরা। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারগুলোকে সহায়তা দিয়েছেন। 
শুরু হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময়ে আসা সুধীজনরা। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচনি সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি নিজেও এর পক্ষে আছেন বলে জানান। গতকাল শনিবার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নাগরিক সমাজের অভিমত হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া উচিত। কারণ, স্থানীয় নির্বাচন করার ফলে আমাদের কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে। টেস্ট হয়ে যাবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে সাপোর্ট দরকার হবে, তাও নিশ্চিত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন একটা, আর স্থানীয় নির্বাচন পাঁচটা। পাঁচটার মধ্যে তিনটা হলো ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা। জাতীয় নির্বাচন ন্যাশন-ওয়াইড হয়। আর সিটি হয় লোকালাইজড। জেলা পরিষদে আসলে কোনো নির্বাচন হয় না। এখন স্থানীয় নির্বাচনের পূর্বে যদি জাতীয় নির্বাচনে যাই, তাহলে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা ঝুলে যাবে। কারণ এখন আমাদের যে চিন্তা-ভাবনা, স্থানীয় নির্বাচন যেটা আছে সেটা কোনো সিস্টেম না। আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, আলাদা আলাদা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। কোনো কমপ্রিহেন্সিভ সিস্টেম নাই। এই সংস্কারের বড় কাজ হবে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করে দেয়া। এখন সিস্টেম কী হবে? যে সিস্টেম আছে সেটা আইয়ুব খানের ভাবনায় রেখে করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের ১০ বছর পরে উপজেলা, তার ১০ বছর পর উপজেলা পরিষদ হয়েছে। এতে কমিপ্রহেন্সিভ কিছু হয়নি। এই সিস্টেম করার জন্য এখন মোক্ষম সময়। কেননা, বেশিরভাগ স্থানীয় সরকার কিন্তু নেই। কেবল ইউপি আছে। কাজেই ছবি আঁকার এটাই সময়। আমরা যদি সিস্টেম করতে পারি যে, একটা কমিপ্রহেন্সিভ আইন হবে। সেই আইনের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠান চলে আসবে। এতে একটা তফসিল দিয়ে সবগুলো নির্বাচন করতে পারব।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগে যেমন মেয়র নির্বাচন করেছি, সিটি নির্বাচন বলছি না। সব আলো পড়ছে মেয়রের ওপর। অন্য স্থানীয় সরকারেও একই অবস্থা। স্থানীয় সরকার যেখানে সফল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও সরাসরি মেয়র, চেয়ারম্যান নির্বাচন হয় না। কাউন্সিলর ও মেম্বার নির্বাচন হয়। তারা পরিষদে গিয়ে নির্বাহী কমিটি তৈরি করে। আমরা তেমন সিস্টেম তৈরি করতে চাই। তাহলে নির্বাচনটা অনেক লেস এক্সপেন্সিভ হবে। অনেক ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে। এত লোকবল লাগবে না। একটা হিসাব করে আমি দেখেছি, গত কমিশন যে স্থানীয় নির্বাচন করেছে এতে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯ থেকে ২০ লাখ লোক লেগেছে। ২২৫ দিনের মতো সময় লেগেছে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে যদি পার্লামেন্টারি সিস্টেম নিয়ে আসি। তাহলে ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে একই সিস্টেম করতে পারব। তাহলে খরচ চলে আসবে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে। লোক লাগবে আট লাখ। সময় লাগবে ৪৫ দিন। তাহলে এই সিস্টেমে যাওয়ার জন্য অধ্যাদেশ করে যদি যান তাহলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব। বর্তমানে যা আছে তা দিয়ে যদি স্থানীয় নির্বাচন করতে চান, তাহলে পাঁচটা আইন দিয়ে পাঁচটা নির্বাচন করতে হবে। এতে জাতীয় নির্বাচনের আগে তা করা সম্ভব কি-না, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। 

তোফায়েল আহমেদ বলেন, পার্লামেন্টের যে মেম্বার তিনি স্থানীয় কোনো দায়িত্বের মধ্যে পড়েন না। তার কাজ হচ্ছে সরকারি কাজগুলো জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। উনি যদি সমস্ত উন্নয়ন করেন তাহলে তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হলো। তিনি জবাবদিহিতা করাবেন কাকে। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী এমপিরা এটা পারে।
 





সুত্র আমার সংবাদ