গণআন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার বিষয়ে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে আসছে ভারত সরকার।
এ নিয়ে অতিরঞ্জিত করে খবরও প্রকাশ করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এবার দেশটির সংসদেও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নোত্তর ও আলোচনা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার লোকসভায় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও প্রতীমা ভাঙচুরের ঘটনা বেড়েছে কি না।
ভারত সরকার এই বিষয়টি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উত্থাপন করেছে কি না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং এ ধরনের ঘটনা বন্ধে ঢাকার প্রচেষ্টার বিষয়ে জানতে চান এমপিরা।
জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং সংসদে বলেন, ‘বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে হিন্দু মন্দির ও প্রতীমা ভাঙচুরের ঘটনার তথ্য শোনা গেছে। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকার তাঁতিবাজারে পূজামণ্ডপে হামলা, সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালী মন্দির থেকে দুর্গাপূজার সময় সোনার মুকুট চুরির ঘটনা। ভারত সরকার এ ব্যাপারে আগেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত সরকার হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর প্রার্থনাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া সংখ্যালঘুসহ দেশটির সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব অন্তর্র্বতী সরকারের বলে জানিয়ে দিয়েছে ভারত।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলার ভারতের দাবির জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে সরেজমিন প্রতিবেদন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অতিরঞ্জিত ও কথিত অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা বন্ধ হয়নি। এর মধ্যেই বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেছে ভারত।
চিন্ময় দাসকে নিয়ে মঙ্গলবার বিবৃতিও দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার এবং জামিন অস্বীকৃতির ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তিনি বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্রও। এর আগে বাংলাদেশের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর এবং মন্দিরে হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে একইদিন রাতে বিবৃতিতে দেয় বাংরাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যেখানে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারত বিকৃত তথ্য ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে অপতথ্য ছড়ানো দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া চেতনার পরিপন্থী বলে সতর্ক করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে সরকার উল্লেখ করেছে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর কিছু মহল বিকৃত তথ্য ছড়াচ্ছে। ভারতের এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু ভুল তথ্য ছড়ানো নয়, বরং দুই প্রতিবেশি দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া চেতনার পরিপন্থী।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে জনগণের ওপর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চলে আসছিল তা সমাপ্ত করার বিষয়ে সরকারের যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা রয়েছে এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুদের একই নজরে দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, ভারতের বিবৃতি সেটি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে।