আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ব্যাটিংয়েই জয়ের ভিত তৈরি করে রেখেছিল বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের রেকর্ডময় হাফসেঞ্চুরিতে ১৭ ওভারে ২০২ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল স্বাগতিকরা। এরপর রান তাড়া করতে নামা আইরিশ শিবির একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন টাইগার কাপ্তান সাকিব আল হাসান। তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেটে নির্ধারিত সময়ে ১২৫ রানেই থেমে যায় সফরকারীদের ইনিংস। ফলে ৭৭ রানের বিশাল জয়ে তিন ম্যাচে সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
বুধবার (২৯ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৭ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে লিটন দাস ৪১ বলে ৮৩, রনি ২৩ বলে ৪৪ ও সাকিব ২৪ বলে ৩৮ রান করেন।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে সাকিবের ঘূর্ণি জালে আটকে গেছে আইরিশরা। বাংলাদেশ অধিনায়কের ৫ উইকেটের দিনে নির্ধারিত ১৭ ওভার ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেছেন কার্টিশ ক্যাম্পার। বোলিংয়ে সাকিব ২২ রানে শিকার করেছেন ৫ উইকেট। এছাড়া তাসকিনের শিকার ৩টি।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক পল স্টার্লিং। তবে আগের দিনের মতো ঝুম বৃষ্টিতে খেলা ১৭ ওভারে নেমে আসে। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারটা দেখেশুনেই করেছিল বাংলাদেশের ওপেনাররা। এরপর থেকেই আইরিশদের বোলারদের ওপর চড়াও হয় স্বাগতিকরা।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪২ বলে ৯১ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়ার পর বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ম্যাচেও উড়ন্ত সূচনা করেন বাংলাদেশের ওপেনাররা। ফলে মাত্র ৩.৩ ওভারেই বাংলাদেশের দ্রুততম দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেন লিটন দাস আর রনি তালুকদার। এই জুটির সামনে চোখেমুখে সর্ষেফুল দেখেন আইরিশ বোলাররা।
ফলে এদিন উইকেটের চারদিকে বাহারি সব খেলতে থাকেন লিটন-রনি। মাত্র ৭.১ ওভারেই দলের রান ১০০ ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এটা টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের দ্রুততম দলীয় সেঞ্চুরি পূরণের রেকর্ড। এর আগে রেকর্ডটি ছিল আগেই ম্যাচেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮.৫ ওভারে।
যার মধ্যে ১৮ বলে দেশের ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন লিটন। রনি তালুকদারেরও সুযোগ ছিল ২৩ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার। সেই চেষ্টা করেছিলেনও তিনি। কিন্তু বেন হোয়াইটকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅন বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন রনি। ফলে দলীয় ১২৪ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রনির ২৩ বলে ৪৪ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কার মার।
লিটনের সামনে সুযোগ ছিল বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরির। কিন্তু ১৭ রানের জন্য তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারটা ছুঁতে পারেন নি ডানহাতি এই ওপেনার। নিজের ভুলে বেন হোয়াইটের ওয়াইড বল ব্যাটে লাগাতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। ৪১ বলে ৮৩ রানের ঝোড়ো ইনিংসে হাঁকান ১০টি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কা।
এরপর সাকিব আল হাসান আর তরুণ তাওহিদ হৃদয় ২৯ বলে ৬১ রানের জুটি গড়লে দুইশ রানের গণ্ডি পার করে স্বাগতিকরা। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ১৩ বলে ২৪ করে আউট হন হৃদয়। তবে ২৪ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় ৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন সাকিব।
বোলিংয়ে আইরিশদের পক্ষে বেঞ্জামিন হোয়াইট ২টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া মার্ক এডেইয়ারের শিকার ১টি।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। তাতে গোল্ডেন ডাক খেয়েছেন এই অভিজ্ঞ ওপেনার।
তাসকিনের দেখাদেখি পরের ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই আঘাত হেনেছেন সাকিবও। এই স্পিনারের লেন্থ ডেলিভারির বলে সুইপ করতে গিয়ে ৫ বল খেলে ৬ রান করা লরকান টাকার রনি তালুকদারের হাতে ধরা পড়েন।
প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট হারালেও তৃতীয় ওভারে নাসুমকে পেয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন হ্যারি ট্যাক্টর। এই স্পিনারের প্রথম ওভার থেকে দুই ছক্কায় সংগ্রহ করেন ১৪ রান।
তবে পরের ওভারে আক্রমণে এসে আবারও প্রথম বলে উইকেট তুলে নেন সাকিব। এবার তার আর্ম বলে পুরোপুরি পরাস্ত রস অ্যাডায়ার। বল তার ব্যাট-প্যাড ফাঁকি দিয়ে সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে। সাজঘরের ফেরার আগে ৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
উইকেট দিয়ে শুরু করা নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষটাও উইকেট দিয়ে করেছেন সাকিব। তার শেষ বলে ফ্লাইট দিয়েছিলেন। আর তাতে সাড়ে দিয়ে শট খেলতে যান গ্যারেথ ডেলানি। ব্যাটে-বলে টাইমিং না হলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৬ রান করা এই ব্যাটার।
নিজের প্রথম দুই ওভারে তিন উইকেট পাওয়ার পর নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হেনেছেন সাকিব। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলটি ব্যাটে খেলতে পারেননি ডকরেল, সরাসরি তার প্যাডে আঘাত হানে। তাতে আবেদন করলেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরে রিভিউ নেন সাকিব। ফলে আউট দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার।
একই ওভারের শেষ বলে সাকিবের আর্ম ডেলিভারীতে বোল্ড হয়েছেন ট্যাক্টর। এই ব্যাটারকে ২২ রানে ফিরিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন সাকিব। এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফাইফার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর রেকর্ডও নিজের করেছেন সাকিব।
৪৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ক্যাম্পার এবং মার্ক অ্যাডায়ারের ব্যাটে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে আইরিশরা। তবে ক্যাম্পার ৫০ রানের বেশি করতে পারেননি। আর লেজের সারির ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও সেটা কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে। হার এড়াতে পারেনি আইরিশরা