চুয়াডাঙ্গা ১২:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবে হায়াত আসলে কী


প্রতীকী ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :আবে হায়াত শব্দের অর্থ জীবনবারি, অমৃতবারি। অর্থাৎ ‘যে পানি পান করলে মৃত্যু হয় না, অমরত্ব লাভ করা যায়, তা-ই আবে হায়াত। এই ‘আবে হায়াত’ নিয়ে নানা কাহিনি সমাজে প্রচলিত আছে। এসব কাহিনিতে দেখানো হয়েছে যে, হজরত খিজির (আ.) আবে হায়াত পান করে অমরত্ব লাভ করেছেন। তিনি দুনিয়ায় জীবিত আছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন!

 

আসলে কথিত এই ‘আবে হায়াত’ তত্ত্ব কোরআন ও হাদিসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। খিজির (আ.)-এর জীবন, মৃত্যু ও আবে হায়াতের ঘটনার সঙ্গে মুসলমানদের বিশ্বাসগত ও কর্মগত কোনো বিষয় জড়িত নয়। এজন্য কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। তবে বিশুদ্ধতম অভিমত হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

কেননা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টি করেননি। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবেই। ইরশাদ হয়েছে- وَ مَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٍ مِّنۡ قَبۡلِكَ الۡخُلۡدَ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مِّتَّ فَهُمُ الۡخٰلِدُوۡنَ ‘( হে নবী! ) আমি আপনার আগেও কোনো মানুষের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকার ফায়সালা করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে?’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৪)

 

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَنَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَالۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَاِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ ‘জীবমাত্রকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তােমাদেরকে মন্দ ও ভালােতে লিপ্ত করি এবং তােমাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৫)

 

ইমাম বুখারি (রহ.)-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে যে খিজির (আ.) ও ইলিয়াস (আ.) এখনো জীবিত আছেন? জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব! অথচ রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের আজকের রাত সম্পর্কে অবহিত করব? আজ যারা পৃথিবীর বুকে জীবিত রয়েছে, আগামী ১০০ বছর পর তাদের কেউ জীবিত থাকবে না।’ (মুসলিম: ২৫৩৭)

এ হাদিসের আলোকে জানা যায়, যদি সে সময় খিজির (আ.) জীবিত থেকে থাকেন, তাহলে তিনি ১০০ বছর পর জীবিত থাকার কথা নয়! ইমাম বুখারি (রহ.) এ মর্মে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করেছেন যে খিজির (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন। (ইবনে হাজর, ‘আয যাহরুন নাদ্বার ফি হালিল খাদ্বির’, পৃষ্ঠা-৫১)

 

তাফসিরবিদ ইবনে হাইয়্যান (রহ.) লিখেছেন, ‘জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে, খিজির (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন।’ (আল বাহরুল মুহিত: ৬/১৪৭) আধুনিক তাফসিরবিদ ড. ওহাবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন, ‘সবার ঐকমত্য সিদ্ধান্ত হলো খিজির (আ.) মারা গেছেন।’ (আততাফসিরুল মুনির: ৮/৩৪৩)

 

আলেমরা বলেন, আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বিস্ময়কর বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কেননা তাতে শিক্ষা রয়েছে। আবে হায়াত খেয়ে খিজির (আ.)-এর জীবিত থাকা বা না থাকার বিষয়টি শিক্ষণীয় হলে অবশ্যই কোরআন-হাদিসে থাকত। তাই আবে হায়াত বা অমৃতবারি খেয়ে কেয়ামত পর্যন্ত খিজির (আ.) হায়াত পেয়েছেন—এ ধরনের আকিদা পোষণ করার মধ্যে কোনো লাভ নেই। বরং বাড়াবাড়ি করলে ক্ষতি আছে।

 

হ্যাঁ, সুফি ভাবধারার বিশিষ্ট আলেমদের কেউ কেউ মনে করেন, খিজির (আ.)-কে দীর্ঘ হায়াত দান করা হয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, খিজির (আ.) এখনো জীবিত আছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। আসলে খিজির (আ.) সম্পর্কে বিরোধপূর্ণ কথাবার্তা পূর্ববর্তী মনীষীদের থেকে চলে আসছে। এ বিষয়ে মীমাংসা দুঃসাধ্য ব্যাপার। এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছিল মামলুকি ও উসমানি খেলাফত আমলে। এ বিষয়ে শীর্ষ উলামায়ে কেরাম পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কিতাব লিখেছেন। তাই এ বিষয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে নীরবতা পালন করাই শ্রেয় হবে।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম



Source link

প্রসংঙ্গ :

Powered by WooCommerce

আবে হায়াত আসলে কী

আপডেটঃ ০১:২৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪


প্রতীকী ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :আবে হায়াত শব্দের অর্থ জীবনবারি, অমৃতবারি। অর্থাৎ ‘যে পানি পান করলে মৃত্যু হয় না, অমরত্ব লাভ করা যায়, তা-ই আবে হায়াত। এই ‘আবে হায়াত’ নিয়ে নানা কাহিনি সমাজে প্রচলিত আছে। এসব কাহিনিতে দেখানো হয়েছে যে, হজরত খিজির (আ.) আবে হায়াত পান করে অমরত্ব লাভ করেছেন। তিনি দুনিয়ায় জীবিত আছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন!

 

আসলে কথিত এই ‘আবে হায়াত’ তত্ত্ব কোরআন ও হাদিসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। খিজির (আ.)-এর জীবন, মৃত্যু ও আবে হায়াতের ঘটনার সঙ্গে মুসলমানদের বিশ্বাসগত ও কর্মগত কোনো বিষয় জড়িত নয়। এজন্য কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। তবে বিশুদ্ধতম অভিমত হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

কেননা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টি করেননি। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবেই। ইরশাদ হয়েছে- وَ مَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٍ مِّنۡ قَبۡلِكَ الۡخُلۡدَ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مِّتَّ فَهُمُ الۡخٰلِدُوۡنَ ‘( হে নবী! ) আমি আপনার আগেও কোনো মানুষের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকার ফায়সালা করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে?’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৪)

 

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَنَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَالۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَاِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ ‘জীবমাত্রকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তােমাদেরকে মন্দ ও ভালােতে লিপ্ত করি এবং তােমাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৫)

 

ইমাম বুখারি (রহ.)-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে যে খিজির (আ.) ও ইলিয়াস (আ.) এখনো জীবিত আছেন? জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব! অথচ রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের আজকের রাত সম্পর্কে অবহিত করব? আজ যারা পৃথিবীর বুকে জীবিত রয়েছে, আগামী ১০০ বছর পর তাদের কেউ জীবিত থাকবে না।’ (মুসলিম: ২৫৩৭)

এ হাদিসের আলোকে জানা যায়, যদি সে সময় খিজির (আ.) জীবিত থেকে থাকেন, তাহলে তিনি ১০০ বছর পর জীবিত থাকার কথা নয়! ইমাম বুখারি (রহ.) এ মর্মে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করেছেন যে খিজির (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন। (ইবনে হাজর, ‘আয যাহরুন নাদ্বার ফি হালিল খাদ্বির’, পৃষ্ঠা-৫১)

 

তাফসিরবিদ ইবনে হাইয়্যান (রহ.) লিখেছেন, ‘জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে, খিজির (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন।’ (আল বাহরুল মুহিত: ৬/১৪৭) আধুনিক তাফসিরবিদ ড. ওহাবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন, ‘সবার ঐকমত্য সিদ্ধান্ত হলো খিজির (আ.) মারা গেছেন।’ (আততাফসিরুল মুনির: ৮/৩৪৩)

 

আলেমরা বলেন, আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বিস্ময়কর বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কেননা তাতে শিক্ষা রয়েছে। আবে হায়াত খেয়ে খিজির (আ.)-এর জীবিত থাকা বা না থাকার বিষয়টি শিক্ষণীয় হলে অবশ্যই কোরআন-হাদিসে থাকত। তাই আবে হায়াত বা অমৃতবারি খেয়ে কেয়ামত পর্যন্ত খিজির (আ.) হায়াত পেয়েছেন—এ ধরনের আকিদা পোষণ করার মধ্যে কোনো লাভ নেই। বরং বাড়াবাড়ি করলে ক্ষতি আছে।

 

হ্যাঁ, সুফি ভাবধারার বিশিষ্ট আলেমদের কেউ কেউ মনে করেন, খিজির (আ.)-কে দীর্ঘ হায়াত দান করা হয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, খিজির (আ.) এখনো জীবিত আছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। আসলে খিজির (আ.) সম্পর্কে বিরোধপূর্ণ কথাবার্তা পূর্ববর্তী মনীষীদের থেকে চলে আসছে। এ বিষয়ে মীমাংসা দুঃসাধ্য ব্যাপার। এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছিল মামলুকি ও উসমানি খেলাফত আমলে। এ বিষয়ে শীর্ষ উলামায়ে কেরাম পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কিতাব লিখেছেন। তাই এ বিষয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে নীরবতা পালন করাই শ্রেয় হবে।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম



Source link