ধর্ম ডেস্ক :বিয়ে আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত। এটি শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা পূরণের নাম নয়; বরং অন্তরের প্রশান্তি ও চরিত্র রক্ষার অনন্য উপায়। বিয়ে করা নবীজির গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এই সুন্নত যত দ্রুত পালন করা যায় ততই ভালো। এতে উৎসাহ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (বুখারি: ৫০৬৬; মুসলিম: ১৪০০)
কিন্তু কোনোসময় তা জরুরি হয়ে যায়। যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকার পাশাপাশি শারীরিক চাহিদা এতো বেশি থাকে যে, বিয়ে না করলে ব্যভিচার, ধর্ষণ বা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার ভয় থাকে তখন বিয়ে করা ফরজ। (ফতোয়া লাজনা দায়েমা: ৯৬২৪)
যদি আপনার মেয়ে, বোন বা অধীনস্থ কোনো মেয়ের জন্য সামর্থ্যবান পুরুষের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে, তাহলে প্রথমে পাত্রের দ্বীনদারি ও চরিত্র কেমন তা যাচাই করতে হবে। যদি তাতে কোনো ত্রুটি না থাকে, তাহলে বিয়ে দিয়ে দিতে আর কোনোকিছু দেখার প্রয়োজন নেই।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে যদি এমন পাত্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে- যার দ্বীনদারি ও চরিত্র তোমাদের কাছে পছন্দনীয়; তবে তার সঙ্গে তোমাদের কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। সাহাবিগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কিছু (ত্রুটি) তার মাঝে থাকলেও কি? তিনি বলেন, ‘তোমাদের কাছে যে লোকের ধর্মভীরুতা ও নৈতিক চরিত্র পছন্দ হয় সে লোক তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও।’ (বর্ণনাকারী বলেন) এ কথা তিনি তিনবার বলেন। (তিরমিজি: ১০৮৫)
এ হাদিসে বরের মৌলিক দুটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১. দ্বীনদারি ২. চারিত্রিক পবিত্রতা। সুতরাং বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রের অন্যতম গুণ এ দুটিই। অনেকে সম্পদের বিষয়টিকেও উপযুক্ত বরের শর্ত হিসেবে দেখে থাকেন। আসলেই তা যথার্থ নয়। কেননা মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- ‘তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে হয়নি, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও আর তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও (বিয়ে দাও)। তারা যদি সম্পদহীন নিঃস্ব ও ফকির হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সবাইকে সচ্ছলতা দান করবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর: ৩২)
এরপরও ইসলামিক স্কলাররা অন্যান্য হাদিসের আলোকে কুফু মিলিয়ে উপযুক্ত বর নির্বাচনে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। যদিও তা বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। সেগুলো হলো— ১. দ্বীনদারি ও চারিত্রিক পবিত্রতা ২. পাত্র স্বাধীন হওয়া (ক্রীতদাসের কাছে স্বাধীন মেয়ের বিয়ে না দেওয়া) ৩. বংশ মর্যাদার তারতম্য না হওয়া (নিচু বংশের কারো সঙ্গে কনের বিয়ে না দেওয়া) ৪. পেশাগত পার্থক্য না থাকা (কনে ভালো বংশের হলে বর যেন নিচু বংশের তথা নাপিত, ধোপা ও মুচির সমপর্যায়ের না হয়)
পাত্রের এই চারটি বিষয় যথাযথ থাকলে ভালো, কিন্তু পাত্র-পাত্রী সন্তুষ্ট থাকলে শুধুমাত্র উপরের মৌলিক দুই বিষয় ঠিক থাকলেও বিয়ে করতে সমস্যা নেই। যেমনটি মোল্লা আলি কারি (রহ) বলেছেন, ‘ধর্ম ও চরিত্র ব্যতীত পাত্রের যদি আর কোনো উপযুক্ত বিশেষণ না থাকে এবং কনে তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তবে বিয়ে বিশুদ্ধ হতে কোনো অসুবিধা নেই।’
মুমিন মুসলমানের উচিত, কনে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বীনদারি ও চারিত্রিক পবিত্রতার অধিকারী কিনা তা ভালোভাবে দেখা। অন্যগুলো থাকলে উত্তম, না থাকলেও পাত্র-পাত্রী সন্তুষ্ট থাকলে কোনো সমস্যা নেই তথা কোরআন-সুন্নাহর কোনো নিষেধ নেই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চরিত্র হেফাজতের জন্য উপযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত বিয়ে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।