চুয়াডাঙ্গা ০১:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোংলায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

দেশের দ্বিতীয় সামুিদ্রক বন্দর মোংলা। একাধারে উপজেলা আর পৌরসভা মিলিয়ে দুই লক্ষাধিক জনগনের বসবাস এখানে। এই জনগনের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্যে ৫০ শয্যার যে একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, তার ভবনগুলির অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ন। ভবনের এ বেহাল দশার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। পাশাপাশি শয্যা সংকটের কারনে অতিরিক্ত ভর্তি রোগীদের রাখা হচ্ছে মেঝেতে। এ ব্যপারে ঊর্ধ্বতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও উপজেলাবাসী।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দিনে দিনে রোগীর চাপ ও চিকিৎসা সেবার সুনাম বৃদ্ধি পাওয়াতে ২০০৭ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় রুপান্তরিত করা হয় নতুন একটি ভবন তৈরির মাধ্যমে। ভবনটিতে রয়েছে ১টি অপারেশন থিয়েটার, ৩ টি বেড নিয়ে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, ৩টি কেবিন যার ১ টি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। নিচ তলায় বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। সব মিলিয়ে ১২ টি শয্যা নিয়ে পুরুষ ওয়ার্ড, ১৯টি শয্যা নিয়ে মহিলা ওয়ার্ড, ৭ টি শয্যা নিয়ে গাইনী ওয়ার্ড, ৬ টি শয্যা নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও ৬ টি শয্যা নিয়ে শিশু ওয়ার্ড রয়েছে।

 

সরজমিনে সরকারি এ হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির প্রবেশমুখে কদিন আগেই বড় এক চাক কংক্রিট উপর থেকে খসে নিচে পড়েছে। যার কারনে বেরিয়ে এসেছে উপরের তলার মরিচা ধরা লোহার রডগুলি। এর আশে-পাশে অনেক ফাটল। মূল ভবন দুটির বেহাল অবস্থা। ভবন দুটি যে কলাম গুলির উপর ভর করে দাড়িয়ে আছে, তাদের প্রত্যেকটিতেই দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। সেখান থেকে খসে পড়ছে কংক্রিটের চাক। দেয়ালগুলোরও একই অবস্থা। কংক্রিট উঠে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে এর ভেতরের ইট। কোথাও আবার দেয়াল ভেঙ্গে যাওয়াতে বেরিয়ে এসেছে ভেতরের পয়ঃ নিষ্কাশনের পাইপগুলি। স্থানে স্থানে পয়ঃ নিষ্কাশনের পাইপগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় হাসপাতালের উন্মুক্ত স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে বর্জ্য। যা হাসপাতালটির পরিবেশও দূষিত করে চলেছে দিনের পর দিন।

 

দোতলায় গিয়ে অপারেশন থিয়েটারের পাশে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে দেখা যায় আর এক ভয়ানক চিত্রের। নিচে রোগীদের শয্যা আর সেই শয্যাগুলির উপরের সিলিং এর দুই-তৃতীয়াংশ জায়গার কংক্রিট গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খসে গিয়ে নিচে কয়েকটি শয্যার উপরে পড়ে গিয়েছিলো। তাতে সে সময় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি কারন এর পূর্বে ঐ স্থানে ফাটল দেখতে পেয়ে রোগীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো।

 

হাসপাতালটির বহির্বিভাগে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন চাঁদপাই গ্রামের সেকেন্দার শেখ। তিনি বলেন, উপজেলার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র, যার ভবনের অবস্থা দেখে খুবই ভয় লাগে। চিকিৎসা নিতে এসে না জানি কোন দুর্ঘটনার শিকার হই কি-না। পুরুষ শয্যায় ভর্তি মালগাজী গ্রামের রোগী সিরাজুল বলেন, মোংলায় সরকারি বা বেসরকারি আর কোন হাসপাতাল না থাকায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাদের এ ঝুঁকিপূর্ন ভবনেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ভবনের এ অবস্থা দীর্ঘদিনের হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: শাহীন বলেন, হাসপাতালটির বর্তমান অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রতিটি কলাম, দেয়াল এবং ছাদে দেখা দিয়েছে অসংখ্য ফাটল। ফাটলগুলির থেকে মাঝে মধ্যে খসে খসে পড়ছে কংক্রিকের চাকগুলি। উপর থেকে কংক্রিটের কোন চাক যদি রোগীর গায়ে পড়ে, তখন সেখানে ঘটে যেতে পারে চরম দূর্ঘটনা।

 

সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে, বছর জুড়ে উপকূলীয় এ অঞ্চলে ঝড় জলোচ্ছাস লেগেই থাকে। ভবনটি দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ায় এ নিয়ে ভীতি কাজ করছে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যেও। আমরা যারা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি তাদের মধ্যেও ভীতি কাজ করছে। এ বিষয়ে মৌখিক এবং লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে কিন্ত এখনো কোন প্রতিকার পাইনি।

প্রসংঙ্গ :

Powered by WooCommerce

মোংলায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

আপডেটঃ ০৫:৩১:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩

দেশের দ্বিতীয় সামুিদ্রক বন্দর মোংলা। একাধারে উপজেলা আর পৌরসভা মিলিয়ে দুই লক্ষাধিক জনগনের বসবাস এখানে। এই জনগনের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্যে ৫০ শয্যার যে একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, তার ভবনগুলির অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ন। ভবনের এ বেহাল দশার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। পাশাপাশি শয্যা সংকটের কারনে অতিরিক্ত ভর্তি রোগীদের রাখা হচ্ছে মেঝেতে। এ ব্যপারে ঊর্ধ্বতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও উপজেলাবাসী।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দিনে দিনে রোগীর চাপ ও চিকিৎসা সেবার সুনাম বৃদ্ধি পাওয়াতে ২০০৭ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় রুপান্তরিত করা হয় নতুন একটি ভবন তৈরির মাধ্যমে। ভবনটিতে রয়েছে ১টি অপারেশন থিয়েটার, ৩ টি বেড নিয়ে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, ৩টি কেবিন যার ১ টি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। নিচ তলায় বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। সব মিলিয়ে ১২ টি শয্যা নিয়ে পুরুষ ওয়ার্ড, ১৯টি শয্যা নিয়ে মহিলা ওয়ার্ড, ৭ টি শয্যা নিয়ে গাইনী ওয়ার্ড, ৬ টি শয্যা নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও ৬ টি শয্যা নিয়ে শিশু ওয়ার্ড রয়েছে।

 

সরজমিনে সরকারি এ হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির প্রবেশমুখে কদিন আগেই বড় এক চাক কংক্রিট উপর থেকে খসে নিচে পড়েছে। যার কারনে বেরিয়ে এসেছে উপরের তলার মরিচা ধরা লোহার রডগুলি। এর আশে-পাশে অনেক ফাটল। মূল ভবন দুটির বেহাল অবস্থা। ভবন দুটি যে কলাম গুলির উপর ভর করে দাড়িয়ে আছে, তাদের প্রত্যেকটিতেই দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। সেখান থেকে খসে পড়ছে কংক্রিটের চাক। দেয়ালগুলোরও একই অবস্থা। কংক্রিট উঠে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে এর ভেতরের ইট। কোথাও আবার দেয়াল ভেঙ্গে যাওয়াতে বেরিয়ে এসেছে ভেতরের পয়ঃ নিষ্কাশনের পাইপগুলি। স্থানে স্থানে পয়ঃ নিষ্কাশনের পাইপগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় হাসপাতালের উন্মুক্ত স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে বর্জ্য। যা হাসপাতালটির পরিবেশও দূষিত করে চলেছে দিনের পর দিন।

 

দোতলায় গিয়ে অপারেশন থিয়েটারের পাশে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে দেখা যায় আর এক ভয়ানক চিত্রের। নিচে রোগীদের শয্যা আর সেই শয্যাগুলির উপরের সিলিং এর দুই-তৃতীয়াংশ জায়গার কংক্রিট গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খসে গিয়ে নিচে কয়েকটি শয্যার উপরে পড়ে গিয়েছিলো। তাতে সে সময় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি কারন এর পূর্বে ঐ স্থানে ফাটল দেখতে পেয়ে রোগীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো।

 

হাসপাতালটির বহির্বিভাগে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন চাঁদপাই গ্রামের সেকেন্দার শেখ। তিনি বলেন, উপজেলার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র, যার ভবনের অবস্থা দেখে খুবই ভয় লাগে। চিকিৎসা নিতে এসে না জানি কোন দুর্ঘটনার শিকার হই কি-না। পুরুষ শয্যায় ভর্তি মালগাজী গ্রামের রোগী সিরাজুল বলেন, মোংলায় সরকারি বা বেসরকারি আর কোন হাসপাতাল না থাকায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাদের এ ঝুঁকিপূর্ন ভবনেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ভবনের এ অবস্থা দীর্ঘদিনের হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: শাহীন বলেন, হাসপাতালটির বর্তমান অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রতিটি কলাম, দেয়াল এবং ছাদে দেখা দিয়েছে অসংখ্য ফাটল। ফাটলগুলির থেকে মাঝে মধ্যে খসে খসে পড়ছে কংক্রিকের চাকগুলি। উপর থেকে কংক্রিটের কোন চাক যদি রোগীর গায়ে পড়ে, তখন সেখানে ঘটে যেতে পারে চরম দূর্ঘটনা।

 

সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে, বছর জুড়ে উপকূলীয় এ অঞ্চলে ঝড় জলোচ্ছাস লেগেই থাকে। ভবনটি দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ায় এ নিয়ে ভীতি কাজ করছে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যেও। আমরা যারা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি তাদের মধ্যেও ভীতি কাজ করছে। এ বিষয়ে মৌখিক এবং লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে কিন্ত এখনো কোন প্রতিকার পাইনি।